উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিজন: কর্তার সিং দুগগালের ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে প্রশ্নোধৃত অংশটির বক্তা হলেন গল্পকথক। পাঞ্জাসাহেবের মানুষ, যারা কোনাে কিছু পরােয়া না করে, জীবন তুচ্ছ করে চলন্ত ট্রেন থামিয়ে খিদে তেষ্টায় কাতর বন্দি দেশবাসীকে খাদ্য ও জল পৌঁছে দিয়েছিলেন, কথক তাদের উদ্দেশ্যেই তার চোখের জল উৎসর্গ করেছেন।

বক্তার চোখে জল আনা ঘটনা : কোনাে-এক শহরের নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর গুলিবর্ষণ করার পর ফিরিঙ্গি সৈনিকরা জীবিতদের ট্রেনে করে অন্য শহরের জেলে নিয়ে যাচ্ছিল। নিরীহ কয়েদিরা খিদে-তেষ্টায় কাতর হলেও পথের মধ্যে কোথাও ট্রেন থামানাের নির্দেশ ছিল না। পাঞ্জাসাহেবের মানুষ এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। যে শহরে গুরু নানক শিষ্য মর্দানার তেষ্টা মিটিয়েছিলেন, সেখান দিয়ে ক্ষুধার্ত-তৃয়ার্ত ভারতীয় বন্দিদের নিয়ে ট্রেন চলে যাবে—এটা তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন জানানাে হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ টেলিফোন, টেলিগ্রাফ পেয়েও সিদ্ধান্তে অটল থাকে। তখন পাঞ্জাসাহেবের মানুষ স্টেশন-প্ল্যাটফর্মে রুটি, লুচি, ডাল, পায়েস প্রভৃতি খাবার মজুত করেন। তারপর ট্রেন থামাতে বদ্ধপরিকর হয়ে স্ত্রী-সন্তান-সহ পুরুষ মানুষরা রেললাইনে শুয়ে পড়েন। এই অবস্থায় তীক্ষ্ম হুইসেল দিয়ে ট্রেন এসে গতি কমালেও তার চাকা চলে যায় অনেকের বুকের ওপর দিয়ে। ট্রেন পিছােতে গেলে মৃতদেহগুলাে কেটে, দুমড়ে মুচড়ে যায়। খালপাড়ের সেতুর দিকে বয়ে যায় রক্তের স্রোত। এভাবেই ক্ষুধা-তৃয়ায় কাতর বন্দি স্বাধীনতাসংগ্রামীদের খাবার ও জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য অজস্র প্রাণের বিনিময়ে চলন্ত ট্রেন থামিয়েছিলেন পাঞ্জাসাহেববাসী। এই ঘটনাই বক্তার চোখে জল এনেছিল।