[1] সরকার গঠনের মাধ্যমে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আলেকজান্ডার ডুবচেক-এর নেতৃত্বে রাজনৈতিক ব্যবস্থার গণতন্ত্রীকরণের উদ্যোগ শুরু হলে চেকোশ্লোভাকিয়ার সমাজতান্ত্রিক অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর চেকোশ্লোভাকিয়া জার্মানির বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। কমিউনিস্ট নেতা ক্লিমেন্ট গােটওয়াল্ড প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আয়ােজিত সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল সর্বোচ্চ ভােট পায়। এদিকে প্রবাসী চেক রাষ্ট্রপতি এডওয়ার্ড বেনেস লন্ডন থেকে স্বদেশে ফিরে পুনরায় চেক প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেন। রাশিয়ার চাপে বেনেস চেকোশ্লোভাকিয়ার রুথেনিয়া প্রদেশটি সােভিয়েতকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কমিউনিস্ট নেতা ভ্যাকলাভ নােসেক ছিলেন এই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
[2] অ-কমিউনিস্ট উৎখাতের সুবাদে: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বেনেসের চেক সরকার আমেরিকার মার্শাল পরিকল্পনার শর্তাবলি মেনে নিলে রাশিয়া শঙ্কিত হয়ে পড়ে। সে আশঙ্কা করে এর ফলে চেকোশ্লোভাকিয়ায় সাম্যবাদ-বিরােধী সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন সারা পূর্ব ইউরােপে সােভিয়েত কর্তৃত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই স্টালিনের নির্দেশে সেখানে শুরু হয় অ-কমিউনিস্টদের উৎখাত ও নিধন।
[3] অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূত্রে: স্টালিনের পরামর্শ মেনে প্রধানমন্ত্রী গােটওয়াল্ড বিরােধী দলগুলিকেও নিশ্চিহ্ন করার কাজ শুরু করেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যাকলাভ নােসেক প্রাগের আটজন পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করে তাদের জায়গায় আটজন সাম্যবাদী মনােভাবাপন্ন ব্যক্তিকে নিয়ােগ করেন। সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং ওইসমস্ত অফিসারকে পুনর্নিয়ােগের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী গােটওয়াল্ড কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই সমর্থন করেন। ফলে যুক্তফ্রন্ট সরকার থেকে অ-কমিউনিস্ট অনেক মন্ত্রী পদত্যাগ পত্র পেশ করেন। এর ফলে সে দেশে কমিউনিস্ট ও অকমিউনিস্টদের মধ্যে প্রবল দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
[4] বেনেসের পদত্যাগের সূত্র: প্রেসিডেন্ট বেনেস অকমিউনিস্ট মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণে বাধ্য হলে চেকোশ্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ এক মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ উদারপন্থী গণতান্ত্রিক নেতা এবং সরকারের বিদেশমন্ত্রী জ্যা মাসারিক- এর সন্দেহজনকভাবে নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলে প্রেসিডেন্ট বেনেস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন (জুন, ১৯৪৮ খ্রি.)। প্রধানমন্ত্রী গােটওয়াল্ড চেকোশ্লোভাকিয়ার নতুন প্রসিডেন্ট হন (১৯৪৮ খ্রি.)। চেকোশ্লোভাকিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় সােভিয়েত কর্তৃত্ব।
[1] সরকারি ক্ষমতালাভের মধ্যে দিয়ে: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে হাঙ্গেরিতে এক সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে স্মল ল্যান্ড হােল্ডার্স দল এবং সমাজতন্ত্রী দল মিলিতভাবে ৫৬ শতাংশ ভােট পেয়ে ক্ষমতায় আসে। বিশ্বযুদ্ধোত্তর হাঙ্গেরিতে এই প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে ও যুক্তফ্রন্টের শাসন শুরু হয়। কমিউনিস্ট দলের স্টালিনপন্থী রাকোসি সহকারী প্রধানমন্ত্রী পদ, আর স্টালিন বিরােধী ইমরে নেগি লাভ করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের কার্যভার।
[2] বিরােধীদের দমনের মাধ্যমে: কমিউনিস্ট পার্টি স্বরাষ্ট্র দফতরের অপব্যবহারের দ্বারা বিরােধীদের নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে থাকে। দেশবিরােধী অন্তর্ঘাতমূলক কাজের অভিযােগ এনে। বিরােধী দলকে কালিমালিপ্ত করা হয়। সমগ্র দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।
[3] নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটে। নতুন সরকার গঠনের জন্য পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জালিয়াতি ভরা এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে ‘ন্যাশনাল ইনডিপেন্ডেন্ট ফ্রন্ট’। সমাজবাদী গণতন্ত্রী নেতা আপাড সাকাসিটস-এর নেতৃত্বে গঠিত হয় নবনির্বাচিত সরকার।
[4] সােভিয়েতীকরণের মাধ্যমে: স্টালিনের প্রত্যক্ষ মদতে নবগঠিত এই সরকারের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন স্টালিনপন্থী রাকোসি। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট হাঙ্গেরিতে সােভিয়েতের অনুকরণে বামপন্থী গণপ্রজাতন্ত্র গঠন করা হয়। ক্রেমলিন নেতৃবৃন্দ হাঙ্গেরির কমিউনিস্ট নেতাদের এটা বােঝাতে সক্ষম হন যে, পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য হাঙ্গেরিকে সােভিয়েত অনুকরণে পরিচালনা করা দরকার। এই সূত্র ধরেই হাঙ্গেরির রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সােভিয়েত মডেলকে অনুসরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প এমনকি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সােভিয়েত নীতি অনুসৃত হয়।
Leave a comment