চুম্বকের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু |
চুম্বককে অর্ধেক করে কেটে দিলে এর মেরুধর্ম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। ভেংগে যাওয়া দুই টুকরো কেবল দুটি নতুন চুম্বক তৈরি করবে, প্রতিটি উত্তর ও দক্ষিন মেরু সহ নতুন চুম্বকে পরিণত হবে যা অন্য চুম্বকের যথাক্রমে দক্ষিণ ও উত্তর মেরুতে আকৃষ্ট হবে এবং এর বিপরীতে বিকর্ষিত হবে।
চুম্বকের আকর্ষণের এই মৌলিক বৈশিষ্ট্য চুম্বককে অনেক কাজের জন্য উপযোগী করে তোলে, কিন্তু এই মেরুগুলো কিভাবে উৎপন্ন হয়? কেনই বা চুম্বকের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু থাকে?
ফ্লোরিডার তালাহাসিতে ন্যাশনাল হাই ম্যাগনেটিক ফিল্ড ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর গ্রেগ বোবিঙ্গার বলেন, চুম্বক হল “পদার্থবিজ্ঞানের গভীরতম রহস্যগুলির মধ্যে একটি। যদিও মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে চুম্বক ব্যবহার করছে, বিজ্ঞানীরা এখনও তারা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে নতুন নতুুন জিনিস শিখেই চলছেন।”
চুম্বকের মেরু কেন সৃষ্টি হয় তার সবচেয়ে মৌলিক উত্তর ইলেকট্রনের আচরণের মধ্যে রয়েছে । চুম্বক সহ সমস্ত পদার্থ পরমাণু দিয়ে তৈরি। প্রতিটি পরমাণুতে নিউক্লিয়াস এক বা একাধিক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন দ্বারা বেষ্টিত থাকে। এই ইলেকট্রনগুলির প্রতিটি তার নিজস্ব অক্ষে ক্রমাগত ঘুরতে থাকে, যাকে বিজ্ঞানীরা “স্পিন” হিসাবে উল্লেখ করেন। ইলেক্ট্রন স্পিন ইলেকট্রনের একটি কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য। এটি কৌণিক ভরবেগের একটি রূপ। এই কৌণিক ভরবেগের মাত্রা স্থায়ী। চার্জ এবং ভরের মতো, স্পিন ইলেকট্রনের একটি মৌলিক, অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য।শেখার পদ্ধতি হিসাবে, শিক্ষকেরা কখনও কখনও ইলেক্ট্রন স্পিনকে পৃথিবীর প্রতি 24 ঘন্টায় তার নিজস্ব অক্ষে ঘূর্ণনের সাথে তুলনা করেন। যদি ইলেক্ট্রন তার অক্ষের উপর ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে, তবে এটিকে স্পিন-আপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়; ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে স্পিন-ডাউন। এটি যদিও একটি সুবিধাজনক ব্যাখ্যা, তবে গাণিতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ নয়।
সে যাই হোক, এই স্পিন না থাকলে পরমানুর অস্তিত্ব থাকত না। আর এই স্পিনের কারণেই ইলেকট্রন সমূহের নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয় যার উত্তর ও দক্ষিন মেরু থাকে।
এখন যদি সেই ছোট চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির যথেষ্ট পরিমাণ একই দিকে বিন্যাস্ত থাকে, তাহলে পদার্থটিতে নির্দিষ্ট দিকে একই ধর্মের চৌম্বক ক্ষেত্রের আধিক্য তৈরি হয়। আর তখন উপাদানটি নিজেই চৌম্বক হয়ে যায়।
প্রযুক্তিগতভাবে, একটি ইলেক্ট্রন ঘূর্ণন দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু পদার্থবিদরা জানেন যে ইলেকট্রনের একটি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে যার প্রমাণ তারা বিভিন্ন গবেষণার মাধমেে জেনেছেন।
এবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে অন্যান্য পদার্থগুলো তাহলে চুম্বক হয় না কেন?
মূলত, পদার্থসমূহে ইলেকট্রন জোড়ায় জোড়ায় থাকে। এই জোড় ইলেকট্রনদ্বয়ের ঘূর্ণন বিপরীতমুখী হয়, ফলে একে অপরের স্পিন বাতিল হয়ে যায়। যা কি না একটি পরমাণুর নেট চুম্বকত্বকে শূন্য করে দেয়। কিন্তু কিছু উপাদানে, যেমন লোহায় তা ঘটতে পারে না। ইলেকট্রনের সংখ্যা এবং যেভাবে তারা নিউক্লিয়াসের চারপাশে অবস্থান করে তাতে করে প্রতিটি লোহার পরমাণুর একটি জোড়াবিহীন ইলেকট্রন থাকবে। অর্থাৎ ইলেকট্রন টির স্পিন বাতিল করার জন্য কোন বিপরীতমুখী স্পিন থাকে না। এতে করে জোড়বিহীন ইলেক্ট্রনটি ছোট চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করবে।
একটি চুম্বকহীন পদার্থে, এই পৃথক চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি বিভিন্ন এলোমেলো দিকে বিন্যাস্ত থাকে। সেই অবস্থায়, তারা বেশিরভাগই একে অপরকে বাতিল করে কিংবা নির্দিষ্ট কোন দিকে চৌম্বক ক্ষেত্রের আধিক্য তৈরি করতে পারে না, তাই উপাদানটি সামগ্রিকভাবে চৌম্বকীয় হয় না।
কিন্তু সঠিক অবস্থার অধীনে, ক্ষুদ্র উপপারমাণবিক চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি একই দিকে নির্দেশ করতে পারে। এই খুব ছোট চৌম্বক ক্ষেত্রের সংমিশ্রণ একটি বড় চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে – তাই উপাদানটি একটি চুম্বক হয়ে যায়।
Leave a comment