প্রশ্নঃ হােসেন আলি কে? তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ‘চিলেকোঠার সেপাই’ লেখকের অসাধারণ একটি উপন্যাস। তার এই সার্থক উপন্যাস সৃষ্টির পিছনে সব চেয়ে বড়াে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তার চরিত্র চিত্রণের অসাধারণ দক্ষতা। তিনি তার নিপুণ হাতে চরিত্রগুলাে সষ্টি করে ব্যতিক্রমী শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেছেন। এ উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হােসেন আলি। সে খয়বার গাজীর ডাকাত মারা চরের খােয়াড়ের তদারককারী।

খয়বার গাজীর মস্ত বাথানের সাথে ডাকাত মারা চরে একটা খোয়াড় করা হয়েছে। সরকারি আইন অনুসারে করা, সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত খোয়াড়। সরকারের কাছ থেকে খয়বার গাজী কয়েক বছরের জন্য ডেকে নিয়েছে। খয়বার গাজীর অনুরােধে হােসেন আলি খোয়াড়ের তদারকি করে। প্রায় ষাট বছর বয়স তার সংসার ও পৃথিবীতে অরুচি ধরে গেছে। যমুনা ১৭ বার তার ঘর ভেঙেছে। নদীতে ঘর ভাঙতে ভাঙতে তার এ অবস্থা। তার জন্ম যে চরে তা ছিল মাদারগঞ্জ থানায়, মহকুমা জামালপুর, জেলা- ময়মনসিংহ। তার ছেলেবেলায় চর দখল নিয়ে মারামারি হলে তার বাপকে পুলিশ ধরে নিয়ে আটকে রাখে সিরাজগঞ্জ জেল হাজতে, পাবনা জেলায়। যৌবনে মামলা করতে যেতে হতাে গাইবান্ধা শহরে, জেলা রংপুর। তখন তারা চর হাসুয়ার বাসিন্দা। বছর সাতেক হলাে বসবাস করছে এখানে। বাকি জীবনটা এখানেই কাটাবে বলে ভাবনা। তাই জীবনের শেষ কয়েকটা দিন শান্তিতে থাকবে বলে খোড় তদারকির নিরিবিলি কাজটা সে নিয়েছে। কিছু হিংসুটে লােকের কারণে মাঝেমধ্যে ঝাট হয়, পুলিশ আসে। ধকল সামলাতে হয় হােসেন আলিকেই। পুলিশ তার কিছুই করতে পারবে না। কারণ তার এমএনএ সাহেবের সাথে যােগাযােগ। পুবের মাদারগঞ্জ, সেখানকার লােকজন চরম বেয়াদব হয়ে উঠেছে, খাজনা বন্ধের পায়তারা করছে। মেম্বারের ধানের গােলা লুট করেছে, তহশিলদার অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। চোর ডাকাতের রাজত্ব শুরু হয়েছে। একসময় হােসেন আলি তার বাপের সাথে হাসুয়া, বর্ষা-বল্লম নিয়ে অনেক জায়গায় মারামারিতে গেছে, অন্তত ১৪ জন তার হাতে খুন হয়েছে। কোটকাচারি করাতেও তার জুড়ি মেলা ভার। ফৌজদারি আইনের দখল দেখে বাঘা বাঘা উকিল মােক্তার থ খেয়ে যায়।

উপন্যাসের শেষে আমরা হােসেন আলিকে করুণ পরিণতি বরণ করতে দেখি- এক সময় জনগণের রােষে পড়ে গণপিটুনি খেয়ে মারা যায় এই প্রভাবশালী হােসেন আলি।