সকল দেশের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহের কার্যপদ্ধতি ও ভূমিকা অভিন্ন নয়। এ ক্ষেত্রে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা ও কার্যপদ্ধতি প্রভাবিত ও নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে একাধিক উপাদান বর্তমান। এই উপাদানগুলিকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যপদ্ধতির নির্ধারক (Determinants of Pressure Group Methods) বলা হয়। বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যবস্থায় এই নির্ধারকগুলির মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আবার একই রাজনীতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে গোষ্ঠীগুলির নির্ধারক ও কার্যপদ্ধতি পরিবর্তিত হয়ে থাকে। Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বল চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নির্ধারক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বলের মতানুসারে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহের কার্যপদ্ধতি কতকগুলি বিষয় বা উপাদানের উপর নির্ভরশীল। এই সমস্ত গোষ্ঠীর কার্যপদ্ধতির নির্ধারকগুলি হল:
-
(১) রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামো (The political-institutional structure),
-
(২) দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি (The nature of the party system )
-
(3) রাজনীতিক সংস্কৃতি (The political culture),
-
(৪) সমস্যার প্রকৃতি (The nature of the issue) এবং
-
(৫) গোষ্ঠীর প্রকৃতি (The nature of the group)। এই সমস্ত উপাদানের হেরফেরের ফলে গোষ্ঠীর ভূমিকারও পরিবর্তন ঘটে।
(১) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামো:
বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রকৃতি ও কার্য-পদ্ধতি নির্ধারিত হয়ে থাকে। দেশের বিদ্যমান রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যপদ্ধতির অন্যতম নির্ধারক হিসাবে কাজ করে। বস্তুত বিভিন্নভাবে রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজকর্মের ধারাকে প্রভাবিত করে। বল বলেছেন: “The institutional structure affects the activities of pressure groups in various ways.” চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি দেশের রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে উদ্যোগী হয়ে থাকে। ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বর্তমান। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল ক্ষমতা কার্যত মন্ত্রিসভা এবং কিছু পদস্থ প্রশাসক আমলার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। এই কারণে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি এঁদেরকেই প্রভাবিত করার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়। অপরপক্ষে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসৃত হয়েছে। তারফলে এখানে শাসন-বিভাগ ও আইন-বিভাগ হল সমক্ষমতাসম্পন্ন। এ ক্ষেত্রে তাই গোষ্ঠীস্বার্থ সাধনের উদ্দেশ্যে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি উভয় বিভাগের উপরই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে। তাছাড়া, মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের দু’টি কক্ষই মোটামুটি সমরাজনীতিক গুরুত্বসম্পন্ন। এবং মার্কিন কংগ্রেসে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমিটিসমূহের ভূমিকাই মুখ্য। এই কারণে এখানে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। বল বলেছেন: “…the existence of a strong committee system in the United States Congress, with powerful committee chairmen, makes these a focus of attention for various pressure groups.” বর্তমানে ফ্রান্সের পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধান (১৯৫৮) অনুসারে আইনসভার তুলনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা শাসন-বিভাগের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অনেক বেশী। এই কারণে ফরাসী চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি এখন সরাসরি শাসন-বিভাগের সঙ্গে শলাপরামর্শের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। বল বলেছেন: “The constitutional changes brought about in France by the Fifth Republic of 1958 have tended to shift the attention of the pressure groups from the National Assembly to the administration.”
কোন নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে যদি সরকারের ক্ষমতা চূড়ান্তভাবে কেন্দ্রীভূত থাকে, তাহলে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির কাজকর্ম সাধারণত তাকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। অপরদিকে বিভিন্ন কাঠামোর মধ্যে সরকারী ক্ষমতা যদি বণ্টিত থাকে, তা হলে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহকে তদনুসারে তাদের কার্যধারা পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। গ্রেট ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা এককেন্দ্রিক। এখানে চূড়ান্ত ক্ষমতা একটি মাত্র কেন্দ্রীয় সরকার ও মন্ত্রিসভার হাতে কেন্দ্রীভূত। এই কারণে এখানে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি পার্লামেন্টের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রশাসনিক প্রধানদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করে থাকে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হয়ে থাকে। তাই চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির কার্যপদ্ধতিও বিকেন্দ্রীভূত হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের সরকারী ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হয়। বল বলেছেন: Federalism provides another interesting example of the effects of different political structures on pressure group activity. American pressure groups can operate at state level defeat federally entrenched rivals, or concentrate at federal level to win concessions denied to them in the states.”
(২) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি:
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে রাজনীতিক দলসমূহের সম্পর্ক এবং বিভিন্ন রাজনীতিক দলের উপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসাবে বিবেচিত হয়। বল বলেছেন: “Relations between pressure groups and political parties and the effect on pressure group activity of different party systems provide other variables in pressure group politics.” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনে রাজনীতিক দলসমূহের সঙ্গে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির সম্পর্ক দূরত্বব্যঞ্জক (distant relationship)। তবে এ কথা ঠিক যে গ্রেট ব্রিটেনের শ্রমিক দলের সদস্য ও টাকাকড়ির একটা বড় অংশ আসে ব্রিটিশ ট্রেড ইউনিয়নগুলি থেকে। তবে একথাও ঠিক যে ব্রিটেনে রক্ষণশীল দল ক্ষমতাসীন হলেও ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে তেমন একটা অসুবিধায় পড়তে হয় না। কিন্তু পশ্চিম জার্মানীতে ১৯৫০ সালে রক্ষণশীল দলের শাসনাধীনে ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। বল বলেছেন: “American pressure groups offer the strongest contrast to close pressure group-political party ties, but even here the separation should not be exaggerated…” বল আরও বলেছেন: “French pressure groups illustrate how close the ties between groups and parties can be.” ফ্রান্সের সর্বাধিক শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠনটির নাম হল সি. জি. টি. (C.GT. Confederation General du Travail)। ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে এর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির কার্যপদ্ধতি যে সকল বিষয়ের উপর নির্ভরশীল তার মধ্যে অন্যতম হল সংশ্লিষ্ট দেশের দলীয় ব্যবস্থার কাঠামো, প্রকৃতি ও আদর্শগত ভিত্তি। রাজনীতিক দলের গঠন-বিন্যাস, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, মতাদর্শগত ভিত্তি প্রভৃতি বিষয়ের দ্বারাও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজকর্ম এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রভাবিত হয়ে থাকে। বল বলেছেন: “The type of party system and the structure and ideology of the parties have significant effects on pressure group activity.” রাজনীতিক দলসমূহের সাংগঠনিক ও মতাদর্শগত ভিত্তি বিশেষভাবে দৃঢ় হলে এবং দলীয় শৃঙ্খলা যথেষ্ট কঠোর হলে দলীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর পক্ষে সহজে সম্ভব হয় না। বিপরীতক্রমে দলীয় সংগঠন যদি দুর্বল হয়, আদর্শগত ভিত্তি যদি অত্যন্ত দৃঢ় না হয় এবং দলীয় শৃঙ্খলার অভাব থাকে, তাহলে দলীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি সহজেই সক্ষম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় এই বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটির মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্যের ও দলীয় শৃঙ্খলার অভাব আছে এবং দল দু’টির সাংগঠনিক কাঠামোও দুর্বল। তার ফলে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি সহজেই তাদের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে। ব্রিটেনের দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার কাঠামো ও প্রকৃতি কিন্তু অতটা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির অনুকূল নয়। বলের মতানুসারে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ লাভ করে বহু-দলীয় ব্যবস্থায়। উদাহরণ হিসাবে ফ্রান্সের চতুর্থ সাধারণতন্ত্রের কথা বলা হয়। বহু-দলীয় ব্যবস্থায় সরকার সাধারণত অস্থায়ী হয়। তা ছাড়া বহু দলীয় ব্যবস্থায় রাজনীতিক দলের সাংগঠনিক কাঠামো, মতাদর্শগত ভিত্তি এবং দলীয় শৃঙ্খলা দুর্বল হয়। বহু দলীয় ব্যবস্থার এই দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির প্রভাব-প্রতিপত্তির পরিধি প্রসারিত হয়। এ প্রসঙ্গে বল মন্তব্য করেছেন: “Multy-party systems provide a more fertile field for pressure group activity, especially at legislature level….”
(৩) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর রাজনীতিক সংস্কৃতি:
যে-কোন দেশের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি হল বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার অন্যতম অপরিহার্য অঙ্গ। তাই দেশের রাজনীতিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্য-পদ্ধতি, ভূমিকা ও প্রভাব বহুলাংশে নির্ভরশীল। দেশের রাজনীতিক সংস্কৃতি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজকর্ম ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অনুকূল বা প্রতিকূল হতে পারে। প্রথম ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর ভূমিকা ও প্রভাব প্রসারিত হয় এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তা সংকুচিত হয়। বস্তুত বিভিন্নভাবে রাজনীতিক সংস্কৃতি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর গঠন-বিন্যাস, প্রভাব ও প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে। বল বলেছেন: “…in various ways the political culture determines the shape, intensity and direction of pressure group activity.” দেশের জনগণের রাজনীতিক মনোভাব চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপের অনুকূল হলে গোষ্ঠীগুলির কাজকর্মের পরিধি ও গভীরতা বৃদ্ধি পায়। তাই বলা হয় যে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেশের রাজনীতিক সংস্কৃতির উপরও নির্ভরশীল। রাজনীতিক সংস্কৃতি হল জনসাধারণের রাজনীতিক বিষয় সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতির এক সমন্বিত অভিব্যক্তি। মার্কিন জনগণের রাজনীতিক সংস্কৃতি সমাজের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপের সহায়ক বলে প্রতিপন্ন হয়। বল বলেছেনঃ “American political attitudes show a greater political tolerance for pressure group activity than is the case in European liberal democracies.” পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে এবং ব্রিটেনে জনগণের মনোবৃত্তি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের অনুকূল নয়। কোন কোন দেশে নির্দিষ্ট কিছু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে সন্দেহের চোখে দেখা হয় এবং প্রতিকূলতা প্রদর্শন করা হয়। যেমন মালিক শ্রেণীর সংগঠনগুলির থেকে শ্রমিক সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়নগুলির কাজকর্মের বিরোধিতা করা হয়। কোন কোন দেশের রাজনীতিক সংস্কৃতির মধ্যে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম এবং হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। ভারতে শ্রমিক সংগঠন ও ছাত্র সংস্থাগুলি অনেক সময় ব্যাপক ও প্রত্যক্ষ আন্দোলনের সামিল হয়। ফ্রান্সের জনগণের রাজনীতিক সংস্কৃতিও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির প্রভাব বিস্তারের সহায়ক বলে গণ্য হয়। ফ্রান্সে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ফরাসী কৃষক সম্প্রদায় সাধারণত তাদের কৃষি যন্ত্রপাতি ও কৃষিজাত দ্রব্য-সামগ্রীর সাহায্যে রাস্তা অবরোধের ব্যবস্থা করে থাকে। প্রসঙ্গত বল বলেছেন: “The tradition of the authoritarian state in West Germany may explain the weaknesses of attitude groups there.”
(8) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সমস্যার প্রকৃতি:
বিদ্যমান ও বিচার্য সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যপদ্ধতি ও ভূমিকা নির্ধারিত হয়ে থাকে। বল বলেছেন: “The nature of the issue is another factor in the analysis of pressure group method.” গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অপরিবর্তিত থাকা সত্ত্বেও বিশেষ পরিস্থিতিতে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে পৃথকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী তার অভীষ্ট লক্ষ্যে স্থির থাকে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের উপায়-পদ্ধতি অবলম্বন করে ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। বল বলেছেন: “Pressure groups have to respond differently in particular circumstances although the aims of the group may be unchanged.” গ্রেট ব্রিটেনে চল্লিশের দশকে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে সুদীর্ঘকালের সুপ্রতিষ্ঠিত সুসম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইস্পাত ও চিনি শিল্পের জাতীয়করণের প্রশ্নে শিল্পপতিদের গোষ্ঠীর তরফে সরকার-বিরোধী ব্যাপক প্রচার এবং এমনকি সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার নীতি গৃহীত হয়। সমস্যার প্রকৃতির তারতম্য অনুসারে আঞ্চলিক পর্যায়ে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির তুলনায় জাতীয় পর্যায়ের গোষ্ঠীগুলির প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রসারিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে, যে সমস্ত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থায় স্বীকৃত মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করে, সাধারণত সেই সমস্ত গোষ্ঠীর প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রসারিত হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা বেশী থাকে। বিপরীতক্রমে যে সমস্ত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থায় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীর কাজকর্ম পরিচালনা করে, সেই সমস্ত গোষ্ঠীর প্রভাব-প্রতিপত্তির পরিধি সম্প্রসারিত হওয়া সহজ নয়।
(৫) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রকৃতি:
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রকৃতিও গোষ্ঠীর কার্য পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যের প্রকৃতি তার উদ্দেশ্য সাধনের পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। বল বলেছেন: “The fifth factor that influences the methods used by pressure groups is the nature of the group itself. Thus the aims of the group will affect how the group attemps to realise those aims.” বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির বিরোধী উদ্দেশ্যযুক্ত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী শাসন-বিভাগীয় ও আইন-বিভাগীয় কাঠামোকে সহজে এবং সহসা প্রভাবিত করতে পারে না। কারণ এই ধরনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গোষ্ঠীগত বক্তব্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নিরন্তর প্রচারকার্য পরিচালনা করতে হয় এবং সরকারের সঙ্গে বিরোধিতার সম্পর্ক চলতে থাকে। এই কারণে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার বিরোধী চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর পক্ষে প্রভাব-প্রতিপত্তি কায়েম করা কঠিন হয়ে পড়ে। অপরদিকে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার মূল্যবোধের অনুগামী চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার বা উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। কিছু কিছু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী আছে যেগুলি সরকারের আনুকূল্য ও ব্যাপক অনুমোদনের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সমস্ত গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক বজায় থাকে, বিরোধিতা দেখা দেয় না। তারফলে এই ধরনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী নির্বিবাদে তার উদ্দেশ্য সাধন ও ভূমিকা পালন করতে পারে। বস্তুত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্য পরিচালনার পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর কাজকর্মের অনুমোদনের ধরন ও মাত্রার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বল বলেছেন: “The type of sanctions that the group possesses will affect its methods. Those groups with powerful sanctions will not have resort to national campaigns and programmes of civil disobedience.”
সরকারী নীতিসমূহের সার্থক বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে কিছু কিছু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সক্রিয় সহযোগিতার উপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রত্যাহারের বিষয়টি হল চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর হাতে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। বল বলেছেন: “The medical profession provides a good example of group whose cooperation is often needed in carrying out of government policies.” এ প্রসঙ্গে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অনুমোদনের গুরুত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বল বলেছেন: “Sanctions include not only the ability to withhold co operation from governments, but could rest on the number of votes the group can influence in a general election.” বস্তুত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাহায্যের উপর সরকারকে নির্ভর করতে হয়। এই সমস্ত গোষ্ঠী বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যাদি ও সংবাদ সরকারকে সরবরাহ করে থাকে। এই সমস্ত গোষ্ঠীর মাধ্যমে সরকার তার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কার্যাবলীর পক্ষে প্রচারকার্য চালায়। আবার বিশেষ কোন স্বার্থযুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্ট চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা করে। অর্থনীতিক ক্ষেত্রে উৎপাদনের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সরকার শ্রমিক সংগঠনসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে। তবে সরকার ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে সব সময় আপসমূলক সম্পর্ক বজায় থাকে না। অনেক সময় সরকারের সঙ্গে কোন কোন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং বিরোধিতার সৃষ্টি হয়।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ সংগঠনের প্রকৃতি:
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্য-পদ্ধতি এবং প্রভাবের পরিধি সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ সংগঠনের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সদস্যদের মধ্যে সংহতি ও শৃঙ্খলা, কার্যপরিচালনার পদ্ধতি, সাংগঠনিক আনুগত্য, আমলাতান্ত্রিক পারদর্শিতা প্রভৃতি। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নেতৃত্বের প্রকৃতিও গোষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ সংগঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। বিচক্ষণ ও সুকৌশলী নেতৃত্ব সরকারের উপর সাফল্যের সঙ্গে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আবার চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর আন্দোলনের পরিকল্পনা, আন্দোলন পরিচালনা এবং আন্দোলনের সাফল্য বহুলাংশে গোষ্ঠীর নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতার উপর নির্ভরশীল। বল বলেছেন: “The nature of the group’s organisation, whether it has a large and permanent bureaucracy, what type of leadership the group enjoys and the degree of internal democracy are all factors that will influence the ways in which a group operates.”
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সামাজিক মর্যাদার স্তর:
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য, বিচার্য সমস্যাদি এবং সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সামাজিক মর্যাদাও গোষ্ঠীগত সামর্থ্য ও প্রভাবের নির্ধারক হিসাবে বিবেচিত হয়। কিছু কিছু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী আছে যেগুলি সামাজিক বিচারে বিশেষ মর্যাদাযুক্ত বৃত্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে অধ্যাপকদের সমিতি, ডাক্তারদের সংগঠন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। জনসাধারণের মধ্যে এই সমস্ত বৃত্তিধারী ব্যক্তিবর্গের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর বিশেষ মর্যাদা বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। মানুষ এই সমস্ত পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্মানের চোখে দেখে এবং সংশ্লিষ্ট চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। এই সমস্ত গোষ্ঠীর বক্তব্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলনামূলকভাবে বেশী। জনগণ এই সমস্ত বক্তব্য সহানুভূতির সঙ্গে অনুধাবন ও অনুসরণ করে। এই কারণে জনমানসে এই সমস্ত গোষ্ঠীর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া অধিক হয়ে থাকে।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্যদের সংখ্যা ও প্রকৃতি:
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যাও গোষ্ঠীর কাজকর্ম এবং প্রভাবের অন্যতম নির্ধারক হিসাবে গণ্য হয়। গোষ্ঠীগত সামর্থ্যের উপর সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যার প্রভাবের বিষয়টি উপেক্ষা করা যায় না। সদস্যসংখ্যা বেশী হলে গোষ্ঠীর চাপসৃষ্টির ক্ষমতাও সাধারণত অধিক হয়। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বেশী সদস্যযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কোন একটি গোষ্ঠী তার প্রভাব সৃষ্টির সামর্থ্যকে সার্থকভাবে সংগঠিত ও কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়। আবার সুসংগঠিত কোন গোষ্ঠী কম-সদস্যযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সাফল্যের সঙ্গে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে সদস্যদের সাংগঠনিক আনুগত্য; সদস্যদের মধ্যে ঐক্য, সংহতি ও শৃঙ্খলাপরায়ণতা; সদস্যদের মধ্যে জঙ্গী মানসিকতা ও কার্যধারা প্রভৃতিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসাবে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর সদস্যদের বয়স, স্ত্রী-পুরুষ, শ্রেণীগত বিন্যাস প্রভৃতিও গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় হিসাবে পরিগণিত হয়। বল বলেছেন: “Membership is very important; here one should examine the degree of commitment of the members, the size of the membership in relation to the potential membership, and the type of members in regard to such factors as class, age, sex and perhaps heterogeneity.”
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর জাতীয় স্বার্থের বিচারে গুরুত্ব:
জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বের বিচারে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব-প্রতিপত্তির পরিধি ও মাত্রা নির্ধারিত হয়ে থাকে। যে সকল চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী দেশ ও দেশবাসীর বৃহত্তর স্বার্থ ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সরকারকে সেই সমস্ত গোষ্ঠীর দাবি-দাওয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে হয়। এই সমস্ত গোষ্ঠীর চাপকে সরকার সহসা উপেক্ষা করতে পারে না। কারণ সেক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন হওয়ার এবং গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে। এই কারণে সরকারের উপর এই সমস্ত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব অধিক হয়। বিপরীতক্রমে জাতীয় স্বার্থের দিক থেকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীগুলির প্রভাব-প্রতিপত্তি সীমাবদ্ধ হয়।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রাত্যহিক পরিষেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠী:
কিছু কিছু জীবিকা ও উপজীবিকা আছে যার কাজকর্মের সঙ্গে জনজীবনের অত্যাবশ্যক ও প্রাত্যহিক প্রয়োজন পূরণ সম্পর্কযুক্ত। জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত এই সমস্ত সেবামূলক কাজকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হাসপাতাল, পরিবহন ব্যবস্থা, পানীয় জল ও দুগ্ধ সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রভৃতি। এই সমস্ত সেবামূলক কাজকর্ম জনগণের এক ব্যাপক অংশের নিত্যদিনের অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণ করে। নাগরিক জীবনের দৈনন্দিন স্বার্থের সঙ্গে এই সমস্ত পরিষেবামূলক কার্যাদির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এই সমস্ত পেশার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক কর্মচারীকে নিয়ে গঠিত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশী হতে বাধ্য। এই রকম গোষ্ঠী সরকারের উপর সহজেই চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সরকারও এই ধরনের গোষ্ঠীর চাপের মুখে উদ্বিগ্ন বোধ করে।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর আর্থিক সামর্থ্য:
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর আর্থিক সামর্থ্য ও সম্পদের পরিমাণও গোষ্ঠীগত ক্রিয়াকলাপ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অন্যতম নির্ধারক হিসাবে বিবেচিত হয়। আর্থিক বিচারে শক্তিশালী গোষ্ঠীর চাপের কাছে সরকারকে অনেক সময়েই আত্মসমর্পণ করতে হয়। এই কারণে শ্রমিক সংগঠনের তুলনায় শিল্পপতিদের সংস্থা সরকারের উপর কার্যকর প্রভাব কায়েম করতে পারে। বিশেষত উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। অর্থাৎ আর্থিক সামর্থ্যের বিচারও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব ও কাজকর্মের অন্যতম নির্ধারক। বল বলেছেন: “Finally the wealth of the group will have an important bearing on the methods used by the group.”
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা রাজনীতিক ব্যবস্থার তারতম্যের উপর নির্ভরশীল:
সর্বোপরি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির প্রভাব-প্রতিপত্তি উদারনীতিক রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই অধিক দেখা যায়। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের সাফল্যের স্বার্থে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকার গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়। বলা হয় যে এই গোষ্ঠীগুলি জনগণের সঙ্গে সরকারের সংযোগ সাধন করে এবং সরকারকে জনকল্যাণের অনুপন্থী ভূমিকা গ্রহণ করতে সাহায্য ও বাধ্য করে। সরকার চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহের দাবি-দাওয়া বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে জনসাধারণের চিন্তা-চেতনা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেয়। তার ফলে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে এবং সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় অবস্থা আলাদা। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শ্রেণীবৈষম্য, শ্রেণীদ্বন্দ্ব ও শ্রেণীশোষণ থাকে না। সরকারী-বেসরকারী সকল ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির সামগ্রিক কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণ এখানে রাজনীতি-সচেতন এবং সাম্যবাদী আদর্শের প্রতি তাদের আস্থা ও অনুরক্তি বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এই কারণে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির অস্তিত্ব অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
Leave a comment