প্রশ্নঃ চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাসের মূলভাব আলােচনা কর।
উত্তরঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘চাঁদের অমাবস্যা’তে কুসংস্কারের চেয়ে মানুষের মনােজাগতিক ভাবনার প্রতিফলনই উদ্ভাসিত। ধর্মের লেবাসধারী শােষক চরিত্রের বেহমিয়ান জীবন চিত্রের পরিচয় বিধৃত। উপন্যাসে যুবক শিক্ষক আরেফ আলীর দৃষ্টিকোণ থেকে আলােচিত হয় ধর্মের ধ্বজাধারী ভণ্ডতাপস কাদেরের আঁধার জীবনের ইতিবৃত্ত। কাদের বাড়ির মুরব্বি দাদাসাহেবের কাছে দরবেশ, এ ধারণা ছিল আরেফ আলীরও। কিন্তু একদা চাঁদনী রাতে আরেফ আলী আবিষ্কার করে কাদেরের গর্হিত জীবন। গভীর রাতে বাশ ঝাড়ের মধ্যে আলুথালু বেশে মৃতদেহ এবং মৃতদেহ প্রতিবেশী পর-স্ত্রী করিম মাঝির বউ। যুবক শিক্ষক ভ্রান্ত মুরগি মুখে হালকা তামাটে রঙের শেয়াল দেখেছেন, কিন্তু কখনাে বিজন রাতে বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে যুবতী নারীর মৃতদেহ দেখেনি। আজ প্রতীকী অর্থে সে সেটাই আবিষ্কার করল। আবিষ্কার করল এ লােলুপ হত্যাকারী দরবেশবেশী কাদেরেরই অপকর্মের ইতিবৃত্ত। কাদের নিজেও স্বীকার করে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, কি আর করা যায়? কুসংস্কারের চেয়ে এ উপন্যাসে ছদ্মবেশী ধার্মিকদের আঁধার জীবন চিত্রই অধিকতর প্রস্ফুটিত।
‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসটি মূলত আরেফ আলীর প্রচলিত সমাজ-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কাহিনি উপস্থাপিত হয়েছে। প্রচলিত কায়েমি স্বার্থ, প্রথা, আভিজাত্য ও ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে তার অনুচ্চ অথচ প্রত্যয়ী কণ্ঠের অনাস্থা এখানে ঘােষিত হয়েছে। ঔপন্যাসিক এভাবেই নিতান্ত সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে বেছে নিয়ে একটি সাদামাটা, নিরীহ, ভীরু, দুর্বলচিত্তের মানুষের মধ্য দিয়ে সুগভীর জীবনবােধকে উদ্বোধিত করেছেন। সত্যপ্রকাশে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেই একদা প্রকাশ করে প্রকৃত ঘটনা- যা সবাইকে ঝাকুনি দিতে না পারলেও ঝাকুনি দিয়েছে সমাজব্যবস্থাকে আর এখানেই লেখকের সার্থকতা।
Leave a comment