জয় গােস্বামী তার নুন কবিতায় এক নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রতিদিনকার কষ্টকর জীবনযাত্রার ছবি এঁকেছেন, যেখানে সাধারণ ভাতকাপড়েই কোনােক্রমে সেই পরিবারের লােকেদের দিন কেটে যায়। তাদের জীবনে বাহুল্য কিংবা অতিরিক্ত চাহিদার কোনাে সুযােগই নেই। দুঃখেরও যেন সেখানে প্রবেশ নিষেধ,”কী হবে দুঃখ করে ?” এখানে কবি বােঝাতে চেয়েছেন যে, এইসব নিম্নবিত্ত মানুষ দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে করতে বুঝে যায় যে, বিলাপ করে কোনাে লাভ নেই। নিয়তিকে মেনে নিয়েই চলতে অভ্যস্ত হয়ে যায় এই গরিব মানুষগুলি।
ধারদেনা, অসুখ এসবের মধ্যে দিয়েই রচিত হয় এই নিম্নবিত্ত মানুষদের বেঁচে থাকার রােজনামচা। এখানে লক্ষণীয় যে, দিন ‘চলে যায় কথাটির মধ্যে ভালাে থাকার কোনাে ইঙ্গিত লক্ষ করা যায় না। পরিবর্তে কোনােরকমে জীবন কাটানাের যে ক্ষতবিক্ষত অভিজ্ঞতা, তাকেই ব্যক্ত করা হয়। নিম্নবিত্তের জীবনের অর্থ যে বেঁচে থাকা নয়, ‘টিকে থাকা’—সেই বাস্তব সত্যই যেন প্রকাশিত হয়েছে প্রশ্নোধৃত অংশে। এখানে আমাদের শব্দটি কবিতার গণ্ডি ছাড়িয়ে তৃতীয় বিশ্বের গবির মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামকেও চিহ্নিত করে।
জয় গােস্বামী তার নুন কবিতায় বলেছেন যে, নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে জীবন মানে কোনােরকমে টিকে থাকা, মােটেও বেঁচে থাকা নয়। তারা জানে, বিলাপ বা দুঃখ করে কোনাে লাভ নেই। তাই তারা অল্পেই সন্তুষ্ট থাকার মন্ত্র শিখে নেয়। সাধারণ ভাতকাপড়ে স্বাচ্ছন্দহীনভাবে এই টিকে থাকায় অসুখ আর অভাব হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। মাঝে মাঝে আবার থাকে প্রাত্যহিক অভাবী দিনযাপনের গ্লানি ও যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার আয়ােজনও- ‘টান দিই গঞ্জিকাতে।’ নেশার ঘােরে দুঃখকে ভুলে থাকার আর মিথ্যা আনন্দকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চলে এরই মাঝে। কখনও-সখনও অবশ্য তাদের মনের মধ্যে শখ জেগে ওঠে, কিন্তু রুক্ষ বাস্তবের মাটিতে সেই শখ বিলাসিতা মাত্র। গােলাপচারা কিনে আনলেও তাই তারা জানে না, কোথায় সেই চারাটিকে পুঁততে হবে, বা কীভাবে সেই চারা থেকে কবে নাগাদ ফুল ফুটবে। ফলত, কঠোর বাস্তব থেকে মুক্তির জন্য গাঁজায় টান দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয় তাদের। এভাবেই ‘হেসে খেলে কষ্ট করে’ তাদের কোনােক্রমে দিন চলে যায়। কিন্তু গভীর রাতে বাড়ি ফিরে যখন দেখা যায় ঠান্ডা ভাতে খাওয়ার মতাে ন্যূনতম নুনটুকুও নেই—তখন মিথ্যা প্রশান্তির আবরণে আর মনকে ঢেকে রাখা যায় না। জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তখন। সব কিছু সহ্য করে চলতে থাকা দিন আর চলতে চায় না।
জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতাটি প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে লড়াই করা নিম্নবিত্ত মানুষদের দুঃখ যন্ত্রণার এক করুণ ভাষ্য। এই নিম্নবিত্ত জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বা বিলাসিতার কোনাে সুযােগই নেই। সাধারণ ভাতকাপড়েই চিরকাল খুশি থাকতে হয় তাদের। অসুখ আর ধারদেনাকে তাদের নিত্যসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে হয়। এই বেঁচে থাকার লড়াই-এ কোনাে কল্পনা অথবা সুন্দরের প্রবেশ কার্যত নিষেধ। তাই কখনও শখ করে গােলাপচারা কিনে আনলেও তাকে নিয়ে ভাবনাবিলাসের কোনাে সুযােগই থাকে না। অর্থাভাব ও স্থানাভাবে ক্লিষ্ট এইসব মানুষদের। অসহনীয় জীবনকে মেনে নিতে নিতে যন্ত্রণা তবু কখনাে কখনাে সর্বগ্রাসী হয়ে যায়। তখন শুরু হয় নেশাকে আঁকড়ে ধরে বাস্তবকে ভুলে থাকার চেষ্টা। টান দিই গঞ্জিকাতে।-অর্থাৎ সাময়িক এবং কৃত্রিম সুখের মধ্যে ডুবে গিয়ে তারা খুঁজে পেতে চায় জীবনের মিথ্যা ও মায়াবী আস্বাদ। এর থেকে বেশি আর কেউ চায় না, কারণ সেই চাওয়া এই সমাজে সম্পূর্ণ অর্থহীন। অসহায় নিম্নবিত্তের এই বিলাপই যেন প্রশ্নোচ্ধৃত অংশে খুশি শব্দের আড়ালে প্রকাশিত হয়েছে। চারপাশে খুশি না থাকার আয়ােজন। প্রচুর থাকলেও কোনােরকমে টিকে থাকাকেই খুশির কারণ হিসেবে খুঁজে নিয়ে তৃপ্ত থাকতে চায় এইসব হতদরিদ্র মানুষরা। তাই নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষ একটু নুন ভাত খেয়েই খুশি মনে বেঁচে থাকতে চায়।
জয় গােস্বামী তার ‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত জীবনের হতাশা আর বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। অভাব আর অসুখের প্রতিদিনের সাহচর্যে চলে নিম্নবিত্তের দিনযাপন। ফলত, বাধ্য হয়েই সামান্য ভাতকাপড়ে তারা প্রতিনিয়ত সুখের সন্ধান করে চলে এবং ‘অল্পে খুশি’ হওয়াকে প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে। দারিদ্র্যের তাড়নায় প্রত্যহ তাদের বাজার করা সম্ভব হয় না, কিন্তু যখন তা সম্ভব হয় তখন কোনাে হিসেবই কাজ করে না। সেই বেহিসেবি মনই ভাবনাবিলাসে বাড়ি ফেরার পথে গােলাপচারা কিনে আনে। কিন্তু অত্যন্ত স্থানাভাবের সংসারে তা পোঁতার জায়গা পর্যন্ত হয় না। তাই সেই চারা থেকে ফুল হবে কি না তাতেও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। কিন্তু তার থেকেও বড়াে কথা, এই ভাবনাবিলাসকে প্রশ্রয় দেওয়ার মতাে ইচ্ছা বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার মতাে মানসিক ধৈর্য কোনােটাই এইসব সাময়িক সুখের সন্ধানী মানুষের থাকে না। অভাব-অসুখের রােজকার জীবনে তাদের বাড়িতে গােলাপচারা সত্যিই বেমানান। তাই ফুল ফোটার প্রসঙ্গকে অনেক পরের কথা বলে পাশে সরিয়ে রাখা হয়। আর অন্তহীন দুঃখকে আপাতত ভুলে থাকার জন্য আবার নেশার ঘােরে ডুবে যায় এই নিম্নবিত্ত মানুষরা।
“ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে।” -কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“..এক পড়শী বসত করে।” -পড়শী বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন? বক্তা তার পড়শীকে দেখতে পাচ্ছেন না কেন তা কবিতা অবলম্বনে আলােচনা করাে।
“আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর” -কার বাড়ি? আরশীনগর কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবির যে স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে তা আলােচনা করাে।
দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শাসকের যে বর্ণনা কবি দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবির রচনাশৈলীর অভিনবত্ব আলােচনা করাে।
“কামান গােলার সীসা-স্তৃপে কি / উঠেছে বাণীর শিশ মহল?” -কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিচার করাে।
“হায় শৌখিন পূজারী, বৃথাই/দেবীর শঙ্খে দিতেছ ফু” -মন্তব্যটির তাৎপর্য উল্লেখ করাে।
“মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী?/ধ্বংস হল কি রক্ষপুর?” -মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“শতদল যেথা শতধা ভিন্ন / শস্ত্র পাণির অস্ত্র-ঘায়” -মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখাে।
“বাণী যেথা ঘানি টানে নিশিদিন, / বন্দী সত্য ভানিছে ধান,” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করে কবি নজরুলের স্বদেশচেতনার পরিচয় দাও।
“আইন যেখানে ন্যায়ের শাসক,/সত্য বলিলে বন্দী হই” -অংশটির মধ্য দিয়ে কবির কোন মনােভাব প্রতিফলিত হয়েছে?
“বাণীর মুক্ত শতদল যথা আখ্যা লভিল বিদ্রোহী” -এই মন্তব্যটির মাধ্যমে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক”। -‘যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক’ কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“ধ্বংস হল কি রক্ষ-পুর”—‘রক্ষ-পুর’ কী এবং কীভাবে তা ধ্বংস করা সম্ভব?
“হায় শৌখীন পুজারী”—‘শৌখীন পূজারী কে? তাকে ‘শৌখীন’ বলা হয়েছে কেন?
“জীবন-চুয়ানাে সেই ঘানি হতে” রূপকটির ব্যাখ্যা দাও।
“মুক্ত ভারতী ভারতে কই?” -ভারতী বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে? ভারতমাতার পরাধীনতার কথা কবি কীভাবে এই কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন?
“শান্তি-শুচিতে শুভ্র হল কি/রক্ত সোঁদাল খুন খারাব?” -‘রক্ত সোঁদাল খুন-খারাব’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এই রক্তাক্ত অধ্যায় কীভাবে সমাপ্ত হতে পারে বলে কবি মনে করেছেন?
“তবে তাই হােক।”—এক্ষেত্রে কবির অভীষ্ট কী?
“বাণীর কমল খাটিবে জেল।” -দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতাটি অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
নুন কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
নুন কবিতায় কবির যে জীবনবােধের প্রকাশ ঘটেছে তা উদ্ধৃতিযােগে আলােচনা করাে।
‘নুন’ কবিতার শিল্পসার্থকতা আলােচনা করাে।
“নিম্নবিত্তের নােনা চোখের জলের দিনলিপি নয়, জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতাটি শেষপর্যন্ত হয়ে উঠেছে লবণাক্ত সমুদ্রের গর্জন।” -ব্যাখ্যা করাে
Leave a comment