উত্তরঃ চর্যাপদ আবিষ্কারের পর হিন্দি, মৈথিলী, উড়িয়া, আসামি ও বাংলা ভাষাভাষী সবাই দাবী করে বসে যে, চর্যাপদ তাদের ভাষায় রচিত। কিন্তু ভাষাতত্ত্ববিদ ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রত্যেক ভাষার ব্যাকরণের সাথে মিলিয়ে চর্যার উপর অন্যান্য ভাষাভাষীদের দাবি অযৌক্তিক প্রমাণিত করে চর্যার ভাষা যে বাংলা তা প্রমাণিত করেছেন।
হিন্দি ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যানঃ হিন্দি, রাজস্থানী প্রভৃতি ভাষা নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার মধ্য গােষ্ঠির অন্তর্গত। মাগধী, উড়িয়া, বাংলা ও আসামি প্রাচ্যগােষ্ঠীর অন্তর্গত। প্রাচ্য গােষ্ঠীর বিশিষ্ট লক্ষণগুলাে চর্যায় আছে, সুতরাং চর্যা হিন্দি ভাষায় রচিত নয়। মৈথিলী ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যান ও মৈথিলী ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ অতীতকালে ‘অল’ ভবিষ্যতে ‘অব’ বর্তমানকালের প্রথম পুরুষে ‘অথি’ প্রভৃতি চর্যার শান্তিপাদের পদ ভিন্ন অন্যান্য পদে নেই। ফলে শান্তিপদ ভিন্ন অন্যদের ভাষা মৈথিলী নয়। আসামি ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যান ও আসামি ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ বহুবচনের বিভক্তি বাের, হত, বিলাফ প্রভৃতি। কিন্তু চর্যার কোন পদে আসামি ভাষার লক্ষণ দেখা যায় না। উড়িয়া ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যান ও উড়িয়া ভাষার বিশেষ লক্ষণ অধিকরণে ‘এর’ ‘তাছ’ ধাতুর অতীতকালে ‘থিল’ প্রভৃতি। আর্যদেবের ভাষা ব্যতীত অন্য কারও ভাষা উড়িয়া ভাষায় হতে পারে না। চর্যার ভাষা বাংলা ও বাংলা ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ বহুবচনে ‘রা’ বিভক্তি, ক্রিয়াপদে অতীতকালে ‘ইল’ প্রত্যয়, অধিকরণে ‘এ’ বিভক্তি, করণ ও কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি এবং প্রাচীন বাংলার রূপ ‘লােঅ’ ক্ষুদ্রত্ববাচক ‘উলী’ প্রত্যয়। চর্যার বেশিরভাগ পদকর্তার অধিকাংশ পদই বাংলা ভাষার লক্ষণসম্মত। এমনকি আর্যদেবের ভাষায়ও বাংলার প্রভাব বেশি। চর্যার ভাষার ব্যাকরণে এমন কিছুই নেই মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের বাংলা ব্যাকরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় না। সুতরাং চর্যাপদ বাংলা ভাষাতেই রচিত।
Leave a comment