প্রশ্নঃ চর্যাপদে বিধৃত সমাজচিত্র সংক্ষেপে আলােচনা কর।

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম সাহিত্যিক নিদর্শন চর্যাপদ যা বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধন সংগীত। বৌদ্ধদের গুঢ় ধর্ম সাধন সহজ করে বােঝাতে গিয়ে পদকর্তারা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, সংস্কার, রীতি, জীবন-জীবিকা তুলে ধরতে তৎকালীন সমাজের চালচিত্রকে স্পর্শ করেছেন।

নদীমাতৃক বাংলার নদী খাল, ছােট অরণ্য, কোথাও ছােট টিলা। টিলাবাসী প্রান্তিক মানুষের দৈন্য-দুঃখ ও করুণ জীবন। ডােম-ডােমনী, শবর-শবরী, কাপালিক, জেলে, পাটনী, কৃষক, তাতিসহ খেটে খাওয়া বিভিন্ন বিত্তের মানুষ। কৃষি ও নৌ-বাণিজ্যের। আভাস পাওয়া গেলেও মূল অর্থনীতি ছিল কৃষিভিত্তিক। নারী-পুরুষের নির্দিষ্ট শ্রমবিভাগ ছিল না। কৃষিকর্ম, হাট-বাজার, নৌকা পারাপার প্রভৃতি কাজ নারী-পুরুষ সমানভাবে করত। সমাজে নৃত্যগীতের প্রচলন ও নৈতিক উচ্ছলতার পরিচয় পাওয়া যায়। সেকালে বনজ সম্পদে দেশ সমৃদ্ধ ছিল। কাঠ ছিল অর্থকরী সম্পদের অন্যতম। দরিদ্র নারীরা মদ বিক্রি করত। কাপালিকরা মদ খেত। কড়িই ছিল প্রচলিত মুদ্রা। তাদের প্রিয় খাদ্য ছিল মাছ, ভাত, মাংস। হরিণের মাংসই ছিল সবার প্রিয়। সমাজে ব্যাধ ছিল। অভিজাত শ্রেণী হাতি পুষত। দাবা খেলা, নাটকের অভিনয়ও হত। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিয়ের উৎসব হত। বিয়েতে যৌতুকপ্রথা ছিল। একান্ন পরিবার ছিল। ধর্মানুষ্ঠান পালিত হত। বিদ্বান ব্যক্তিরা সমাজে সম্মান পেত। নারীরা বিভিন্ন অলংকার পরত। জলদস্যু ছিল। আবার থানা পুলিশও ছিল। ধুনুরীরা তুলাে দিয়ে কাপড়, কম্বল তৈরি করত।

অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষের ব্যর্থতার আশাভঙ্গের বেদনা চর্যার গানে গানে উত্তীর্ণ। বাস্তব জীবনের চালচিত্র চর্যার গানে গানে ছড়িয়েছে রূপকের আবীর।