উত্তর: বাংলা সাহিত্যে চর্যাপদের একটি নান্দনিক গুরুত্ব রয়েছে। আধ্যাত্মিকতার আড়ালে পদকর্তাগণ সেখানে মানবজীবনকেই আশ্রয় করেছেন এবং সাহিত্যকে পদবাচ্য করে তুলেছেন। চর্যাপদগুলোর প্রকাশ ভঙ্গিতে পরিমিতি বোধ আছে। এই পরিমিতি প্রকাশ ভঙ্গি শ্রেষ্ঠ শিল্পীরই লক্ষণ।

চর্যাপদের ছন্দে সংস্কৃত পুজরুটিকা ছন্দের প্রভাব রয়েছে- তাছাড়া চর্যার ছন্দ মূলত মাত্রাপ্রধান ছন্দ। পুজরুটিকা ছন্দের প্রতি চরণে ষোল মাত্রার চরণে চার পর্ব। প্রতি পর্বে চার মাত্রা আবার শৌরসেনী প্রকৃত প্রভাবিত মাত্রা প্রধান পাদাকুলক ছন্দের সাথেও চর্যায় ছন্দের মিল রয়েছে। পরবর্তীকালে এগুলো অবলম্বন করেই বাংলা ছন্দের একাবলী, পয়ার ত্রিপদী ছাড়াও জয়দেবের গীতিগোবিন্দ কাব্যেও চর্যাপদের ছন্দের ব্যবহার দেখা যায়।
চর্যাপদ থেকে উদাহরণ-

ক. কমল কুলিশ ঘান্টি/ করহু বিআলী= ৮+৬
খ. তরঙ্গেতে হলিনাত/ খুর ন দীসই= ৮+৬

গ. অবণা পবণে কাহ্ন/ বিমণা ভইলা= ৮+৬
চর্যাপদের ছন্দের হ্রস্ব দীর্ঘ স্বরের মাত্রা গণনার পদ্ধতি চর্যাপদে অনুভূত হয়নি। চর্যাপদের ছন্দ মাত্রাবৃত্ত রীতিতে গঠিত হলেও মাত্রাবৃত্তের বর্তমান সুনির্দিষ্ট গণনা পদ্ধতি এতে মানা হয়নি। চর্যাপদের ছন্দে সাধারণত চরণের শেষ পর্ব দীর্ঘমাত্রার দুটি অক্ষর হিসেবে বিবেচিত হয়।