অথবা, চর্যাপদ কী সন্ধ্যাভাষায় রচিত? এ ভাষার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতামত তুলে ধর।

উত্তর: বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের পুথিশালা থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন এবং ১৯১৬ সালে তা প্রকাশ করেন। চর্যাপদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে এর প্রাচীনত্ব নিয়ে কোনো বিরোধ না থাকলেও এর-ভাষা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য দেখা যায়। উল্লেখ্য- উড়িষ্যা, বিহার, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে নিজ নিজ ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদ বিবেচিত এবং ভাষা সাহিত্যের পাঠ্য হিসেবে সূচিভুক্ত। এ বিষয়ে আজও দ্বিমত নেই যে চর্যাপদের সাহিত্যিক গুণ যা থাকুক আর নাই থাকুক চর্যাপদের ভায়াটি বড়ো কঠিন। সেই ভাষার অনুধাবনের বাধাই চর্যাপদের রসগ্রহণের প্রধান অন্তরায়। আচার্য হরপ্রসাদশাস্ত্রী ঠিকই বলেছেন, চর্যাপদের ভাষা সান্ধ্যভাষা। কারণ সন্ধ্যাবেলার আলো আঁধারিতে যে রহস্যময়তা, সেই অপরিচয়ের আলো অন্ধকারে চর্যাপদ অস্পষ্ট। চর্যাপদের সাহিত্যিক মূল্য বা সাহিত্যগুণ বিচারের সময় এ ভাষার অসুবিধার কথা মনে রাখতে হবে। তবে তত্ত্ব ও ভাষার জটিলতা ভেদ করে চর্যাগুলোর অন্তরে প্রবেশ করতে পারলে একটা অপূর্ব রসাস্বাদন করা সম্ভব।

যে, এটা বাংলা ভাষার আদিম নিদর্শন বলে স্বীকৃত। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ তাঁর “বৌদ্ধগানের ভাষা” নামক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যেঃ হিন্দি, আসামী, মৈথিলী, উড়িয়া প্রভৃতি ভাষার সঙ্গে চর্যা ভাষার কিছু সাদৃশ্য থাকলেও চর্যাপদের ভাষা মূলত বাংলা ভাষা এবং পরবর্তী ভাষার সঙ্গে ব্যাকরণগত সাদৃশ্য রয়েছে। ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী, ড. সুকুমার সেন সেন, ড.মনীন্দ্রমোহন বসু প্রমুখ ভাষাবিজ্ঞানী চর্যার ধ্বনিতত্ত্ব ও বিভক্তি আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে, এর ভাষা বাংলাই।