উত্তর: চর্যাগীতিকাগুলো বৌদ্ধ সহজিয়াদের পদ্ধতিমূলক গান। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্ধ্যাভাষায় রূপকের মাধ্যমে সাধকদের গূঢ় ধর্মসাধনার কথা প্রচার করা। ঐতিহাসিক পটভূমিকায় চর্যাগীতিগুলো রচিত। চর্যাপদকর্তাগণ নিজ নিজ অবস্থায় নিজেদের ধর্মতত্ত্ব ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তৎকালীন সমাজের বাস্তব জীবনযাত্রার যেসব রূপকল্প ব্যবহার করেছেন তা বিস্ময়ের বটে।

চর্যাচর্যবিনিশ্চয়ের মোট ২৪ জন পদকর্তার পরিচয় পাওয়া যায়। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি থেকে তাঁরা এসেছিলেন এবং সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে অনেকে গার্হস্থ্য আশ্রমের সাথে পিতৃপ্রদত্ত নামও ত্যাগ করেছিলেন। ২৪ জন পদকর্তার সকলেই সমসাময়িক ছিলেন না। তবে সবাই বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং বিভিন্ন তান্ত্রিকতায় বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বৌদ্ধ সহযানী ও বজ্রযানী আর্যগণ সিদ্ধাচার্য নামে খ্যাত ছিলেন। গানের মাঝে মাঝে ও শেষে তারা ভণিতা দিয়েছেন।

নামের শেষে গৌরব সূচক ‘পা’ যোগ করা হয়েছে। চর্যার চব্বিশ জন পদকর্তা হলেন আর্যদেব, কঙ্কণ, কম্বলাম্বর, লুইপা, শবরপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা, কুকুরী পা, গুন্ডরীপাদ, চাটিলপাদ, জয়নন্দী, ডোম্বী, ডেল্ডণপাদ, তন্ত্রী, তাড়ক, দারিক, ধামপাদ, বিরুপাদ, বীণাপাদ, ভদ্রপাদ, মহীধরপাদ, লাড়ীডোম্বী, শান্তি পাদ, সরহপাদ। চর্যাকারদের ভাষা বিচারে দেখা যায়, কেউ কেউ বাঙালি ছিলেন, আবার কেউ কেউ অবাঙালিও ছিলেন। চর্যাপদের সবচেয়ে বেশি পদ রচনা করেন কাহ্নপা তেরোটি পদ, ভুসুকপা আটটি, সরহপা চারটি, লুই, শান্তি ও সবরপা দুটি করে। অন্যান্যরা একটি করে পদ রচনা করেন। মূলত পদকর্তারা বৌদ্ধসাধনতত্ত্ব, সহজ ভাষায় শিষ্যদের কাছে বর্ণনা করতেন। চর্যাপদ প্রধানত সহজিয়া মতের উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও এতে হীনযান, মহাযান, কালচক্রযান, বজ্রযান, ব্রাহ্মণ্য তত্ত্ব ও নাথধর্মের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়।