প্রশ্নঃ চরিত সাহিত্য কী? এ ধারার সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের হাতে নবী-রসুলসহ কিছু খ্যাতনামা মুসলিম চরিত্রে সত্য মিথ্যার ছোঁয়াচ লাগিয়ে অলৌকিক মর্যাদার অতিপ্রাকৃত ও অতি মানবীয় করে রচিত সাহিত্যকে চরিত সাহিত্য বলে। চরিত সাহিত্য একাধারে জীবনী, ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও রূপকথা জাতীয় কাহিনীকাব্য। রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত ও চৈতন্য চরিত্রগুলোর অনুসরণে রচিত নবীবংশ, রসুল বিজয়, জঙ্গনামা, মক্তুল হোসেন, হানিফার লড়াই, কাসাসুল আম্বিয়া, সিফাতুল আম্বিয়া, হাতেম তাঈ, আমীর হামজা ইত্যাদি গ্রন্থগুলোই চরিত সাহিত্য হিসেবে পরিচিত।
প্রচলিত অর্থে জীবন চরিত বলতে যা বোঝায় এগুলো তা নয়। মূলত এদেশে হিন্দু মহাপুরুষ রাম, কৃষ্ণ, চৈতন্য জীবনীর প্রভাবে এবং ধর্মীয় সংঘাতে আপন ধর্মের মহাপুরুষদেরকে উজ্জ্বল করে তুলে ধরতে এবং ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে তার প্রতি অন্যদেরকে আকৃষ্ট করার বাসনা এসব বিচিত্র সৃষ্টির মূলে কাজ করেছে।
চরিত সাহিত্য দু’ভাগে বিভক্তঃ
(ক) ‘নবীবংশ’ ও ‘রসুল বিজয়’ (অর্থাৎ নবীদের জীবন চরিত এবং হযরত মুহম্মদ (সঃ)- এর জীবন-বৃত্তান্ত)।
(খ) ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, পীর আউলিয়া, ইসলাম প্রচারক প্রমুখ ব্যক্তিদের জীবন চরিত।
(ক) নবীবংশ ও রসুল বিজয়ঃ
(i) সৈয়দ সুলতান রচিত ‘নবীবংশ’: নবীবংশের প্রথম খণ্ডে হামদ, নমরূদ ইব্রাহিম, মুসা ফেরাউনের কিসসা, দাউদ ইসমাইল কিসসা, হারুত মারুতের প্রিয় ও পরিচিত কাহিনী, জাকারিয়া নবী ও ঈসা নবীর কিসসা। নবীবংশের দ্বিতীয় খণ্ড হচ্ছে রসুল মুহম্মদ চরিত। এ খণ্ডে তিনটি পর্ব— উম্মেষ পর্ব, মি’রাজ পর্ব ও ওফাত পর্ব।
(ii) কাসাসুল আম্বিয়া— কাজী সফিউদ্দিনের প্রবর্তনায় শায়ের রেজাউল্লাহ উর্দু থেকে এ গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।
(iii) কিসাসুল আম্বিয়া।
(iv) মেরাজনামা- শেখ চান্দ।
(v) কাসাসুল আম্বিয়া-শেখ চান্দ।
(vi) রসুল চরিত— গোলাম রসুল।
(vii) রসুল চরিত— বুরহান উল্লাহ।
(খ) ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, পীর আউলিয়াদের জীবন চরিতঃ
(i) শমসের গাজীনামা – শেখ মনোহর।
(ii) নসলে ওসমান ইসলামাবাদ বা শাহনামা- মুহম্মদ উজির আলী।
(iii) হাজার মসায়েল ও দুল্লা মসলিম- আব্দুল করিম খন্দকার।
(iv) সিফৎনামা- নুরুল্লাহ।
(v) সুফী সানাউল্লাহর সিফনামা — আজমতল্লাহ।
Leave a comment