অথবা, চন্দ্ররা কহিল মরণ। – কেন? ব্যাখ্যা কর
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শাস্তি’ গল্পে সতেরো আঠারো বছরের প্রাণচঞ্চল মেয়ে চন্দরা ছিদাম রুই এর স্ত্রী। । ছিদামের বড় ভাই দুখিরাম তার স্ত্রী রাধাকে খুন করে। এ সময় ছিদাম তার ভাইকে বাঁচাতে নির্দোষ স্ত্রী চন্দরার উপর দোষারোপ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছিদাম বিদ্রোহী চন্দরার কাছে পেরে উঠে না। চন্দরা রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে সে স্বামীর সংসার ছেড়ে ফাঁসির দড়িকেই সঙ্গী করতে চায়। তাই সে সব জায়গায় নিজেকে বাঁচাতে কোনো সত্য কথা বলেনি, বরং সব জায়গায় বিশেষ করে পুলিশ, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা জজ সাহেব সব জায়গায় নিজের উপর দোষ চাপিয়েছে। এমনকি রাধার কোনো দোষের কথা জিজ্ঞাসা করলেও সব দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেছে। গল্পকারের ভাষায়:
“জজ সাহেব তাহাকে বুঝাইয়া বলিলেন, “তুমি যে অপরাধ স্বীকার করিতেছ তাহার শাস্তি কী জান?” চন্দরা কহিল, “না।” জজ সাহেব কহিলেন, “তাহার শাস্তি ফাঁসি।” চন্দরা কহিল, “ওগো, তোমার পায়ে পড়ি তাই দাও না, সাহেব। তোমাদের যাহা খুশি করো, আমার তো আর সহ্য হয় না।”
অবশেষে চন্দরার ফাঁসির দিন এগিয়ে আসে। ফাঁসির পূর্বে দয়ালু সিভিল সার্জন চন্দরাকে জিজ্ঞাসা করে : “কাহাকেও দেখিতে ইচ্ছা করে?” চন্দরা এর উত্তরে তার মাকে দেখতে চায়। ডাক্তার জানায় তার স্বামী তাকে দেখতে চায়। কিন্তু এর প্রত্যুত্তরে চন্দরা বলেছে “মরণ!”
‘শাস্তি’ গল্পে চন্দরার মধ্যে লেখক এক মর্যাদা সচেতন নারীকে তুলে ধরেছেন, পুরুষের স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে এক জীবন্ত প্রতিবাদ চন্দরা। সে ফাঁসির রজ্জুকে স্বেচ্ছায় আপন গলায় ধারণ করেছে এটাও একটা বিদ্রোহ, বিদ্রোহ তার স্বার্থপর স্বামীর মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে।
Leave a comment