মাইকেল মধুসুদন দত্তের চতুর্দশ পদাবলীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর: মধুসূদনের শেষতম কাব্যগ্রন্থ চতুর্দশ পদাবলী কবিতা বা সনেট সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ সালে। সনেট বস্তুত গীতিকবিতারই একটা প্রকারভেদ। বাংলায় পাশ্চাত্য কাব্যকলা আত্তীকরণের ঝোঁক মধুসূদনের কবি জীবনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কবি জীবনের প্রথম পর্বেই তিনি সনেট রচনায় অগ্রসর হয়েছিলেন। আর প্রথম সনেটটির রচনাকাল মেঘনাদবধ কাব্যের সমসাময়িক। কিন্তু এরপর কবি দীর্ঘদিন এ কাব্যরূপটি চর্চা করেননি।
ইউরোপ প্রবাসকালে ১৮৬৫ সালে ভার্সাই শহরে কবি যখন বাস করেছিলেন তখনই সনেটগুলো রচনা করেন। পরবাসে দুঃখ দারিদ্র্যের মধ্যে কবি ক্লিষ্টচিত্ত স্বদেশের জন্য, দেশের কাব্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য যে ব্যাকুলতা অনুভব করতো এ খণ্ড খণ্ড কবিতায় তাই অপরূপভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এ কাব্যগ্রন্থেই ব্যক্তি মানুষ মধুসূদনের অন্তরঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়। আখ্যান নয়, চরিত্র সৃষ্টির আগ্রহ নয়, একান্তভাবে কবির নিজস্ব আবেগ অনুভূতি প্রত্যক্ষভাবে সনেটগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে।
ইতালীয় কবি পেত্রার্ক কর্তৃক অনুপ্রাণিত হলেও মধুসূদন অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিল্টনের মিলবিন্যাস রীতি অনুসরণ করেছেন। এ সনেটগুলোকে কবির আত্মবহিঃপ্রকাশ রূপেই চিহ্নিত করা চলে। কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ মহাকবি শেক্সপিয়ারের সনেটগুলো সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন যে, With this key he unlocked his heart, অর্থাৎ, এ সনেটগুলোকেই কবিরূপে ব্যবহার করে শেক্সপিয়র তার হৃদয় উন্মোচন করেছিলেন। অনুরূপ মন্তব্য মধুসূদন সম্বন্ধেও যথাযথভাবেই প্রযুক্ত হতে পারে। কারণ এ সনেটগুলোতেই কবিপ্রাণের যথার্থ প্রকাশ ঘটেছে। অধ্যাপক পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেছেন, “নিজের আপনজনকে, দেশকে, জাতিকে, যথার্থভাবে জানতে হলে বোধ হয় একটু দূর থেকেই দেখতে হয়, হিমালয়ের বুকে বসে হিমালয়ের বিরাটত্ব উপলব্ধি করা যায় না, একমাত্র দূর থেকে দেখলেই তার সমগ্রতায় বোধ আসে। তেমনি মধুসূদনও দূর প্রবাসে অবস্থানকালেই স্বদেশ স্বজনের স্মৃতিতে উদ্বেল হয়ে তার যথার্থ মূল্য অনুধাবন করতে পেরেছেন।”
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment