প্রশ্নঃ ‘চণ্ডীদাস সমস্যা’ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

উত্তরঃ বাঙালির কাছে চণ্ডীদাস অতি পরিচিত। চণ্ডীদাসের কাছ থেকে বাঙালি প্রেম শিখেছে, বিরহের মধ্যে প্রেমের সার্থকতা খুঁজেছে। দীর্ঘদিন যাবত বাঙালির হৃদয়ে পদাবলীর রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক বিরহের কবি চণ্ডীদাস নামে একজন চণ্ডীদাসই অবস্থান করছিল। কিন্তু নীলরতন মুখোপাধ্যায় চণ্ডীদাসের ভনিতাযুক্ত রসলীলার পদ প্রকাশ করেন ১৩০৫ সালে। উক্ত পদগুলো রসহীন ও কাব্যগুণহীন। তাই অন্য একজন চণ্ডীদাসের অস্তিত্বের প্রশ্ন ওঠে। অতঃপর ১৩২১ সালে ব্যোমকেশ মুস্তফী ‘কৃষ্ণের জন্মলীলা’ সম্পর্কিত পদ এবং বসন্তরঞ্জন বিদ্বদ্বল্লভ ১৩১৬ সালে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত গ্রন্থ আবিষ্কার করে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামে সম্পাদনা করেন। উক্ত কাব্যখানি বড় চণ্ডীদাসের রচনা এবং কাব্যের মধ্যে ভনিতায় দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস এভাবে আরও কয়েকজন চণ্ডীদাসের নাম পাওয়া যায়। এ থেকে ‘চণ্ডীদাস’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে যে, তবে চণ্ডীদাস ক’জন? চণ্ডীদাস সম্পর্কিত এ প্রশ্নটি মধ্যযুগে চণ্ডীদাস সমস্যা নামে পরিচিত।

চণ্ডীদাসের সংখ্যা নির্ণয়ে গবেষকেরা প্রমাণ, যুক্তি ও তথ্যবহুল গবেষণা করে মধ্যযুগে চণ্ডীদাসের সংখ্যা নির্ণয় করেছেন। তাদের মতে— পদাবলীর সর্বজনপ্রিয় চণ্ডীদাস ভিন্ন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের’ বড়ু চণ্ডীদাস বলে যেমন একজন চণ্ডীদাস আছেন তেমনি শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে ‘বাশুলী আর্দেশে দ্বিজ চণ্ডীদাসে ভনে।’—এটি বড়ু চণ্ডীদাসের পদ নয়। ফলে দ্বিজ চণ্ডীদাস বলে আরেকজন চণ্ডীদাস রয়েছে। তাছাড়া মণীন্দ্রমোহন বসু দীন চণ্ডীদাস নামে আরেকজন চণ্ডীদাসের পক্ষে তথ্য প্রমাণ হাজির করেছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে—

১. পদাবলীর চণ্ডীদাস

২. বড়ু চণ্ডীদাস

৩. দ্বিজ চণ্ডীদাস ও

৪. দীন চণ্ডীদাস-এই চার জন ভিন্ন ভিন্ন চণ্ডীদাস রয়েছে।