বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস উভয়ে বৈষ্ণব পদকার, তবু তাঁহারা একগোত্রের নহেন। তোমার অধীত পদ হইতে উপযুক্ত উদ্ধৃতি দিয়া তাহাদের স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করো।

বৈষ্ণব-সাহিত্যের দুই প্রধান কবি বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস। বিদ্যাপতি প্রাচীনতর কবি, বস্তুত তাকেই বৈষ্ণব পদ সাহিত্যে আদিকবি বলে অভিহিত করা যায়। তার রচিত সব পদের ভাষাই ব্রজবুলি। চণ্ডীদাস নিয়ে বিতর্ক আছে—চণ্ডীদাস কয়জন ছিলেন এবং তাঁরা কে কোন্ কালে বর্তমান ছিলেন, সে সমস্ত সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। তবে বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এবং ‘তরুণীরমন’ চণ্ডীদাসের ‘সহজিয়া পদগুলি বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে – তা দ্বিজ চণ্ডীদাসেরই হোক্ বা দীন চণ্ডীদাসেরই হোক্ সেই পদগুলিকেই বৈষ্ণব পদরূপে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। চণ্ডীদাসের পদ বলতে ঐগুলোকেই বোঝায়।

বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাসের তুলনামূলক আলোচনা প্রসঙ্গে উভয়ের পটভূমিকা একটু দেখে নেওয়া দরকার। বিদ্যাপতির পদগুলি মিথিলার অদ্ভুতু পাঁচজন রাজা এবং দু’জন রানীর নাম পাওয়া যায় এবং বিদ্যাপতি এঁদের সকলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন বলে বিশ্বাস করা চলে। ফলত বিদ্যাপতিকে আমরা ‘রাজসভার কবি’ বলেই গ্রহণ করে থাকি। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় রচিত পদগুলি ছাড়াও সংস্কৃত এবং অবহট্ট ভাষায় বিবিধ শাস্ত্রগ্রন্থ, ইতিহাস, ভূগোলাদি গ্রন্থ এবং মৈথিল ভাষায় এবং রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক কিছু পদ রচনা করেছিলেন বলেই জানা যায়। তিনি এক বিশিষ্ট পণ্ডিত বংশেরও সস্তান। তাঁর পাণ্ডিত্য, বৈদগ্ধ্য এবং নাগরিকতাবোধ সন্দেহাতীত ব্যাপার।

পক্ষাস্তরে চণ্ডীদাস সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানা যায় না। তিনি একজন গ্রাম্যকবি এবং দেবী বাশুলির উপাসক ছিলেন—সম্ভবত চণ্ডীদাস সম্বন্ধে এর চেয়ে বেশী বলা সম্ভব নয়। সমাজ এবং পরিবেশ মানুষের মন ও চরিত্র গঠনে সহায়তা করে, আর কবির রচিত কাব্যে তারই ছায়াপাত ঘটে— বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস-বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা প্রসঙ্গে এই সহজ সত্যটি মনে রাখা দরকার।

বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাসের পার্থক্য বিষয়ে কতকগুলি সাধারণ ধারণা অতিশয় প্রচলিত। বিদ্যাপতি সুখের কবি, চণ্ডীদাস দুঃখের কবি, বিদ্যাপতি অনুরাগের কবি, চণ্ডীদাস ভাবের কবি, বিদ্যাপতির রচনায় দেহসম্ভোগ এবং সৌন্দর্যবোধ প্রাধান্য পেয়েছে, পক্ষান্তরে চণ্ডীদাস অন্তরের সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতার দিকেই বেশি ঝুঁকেছেন ইত্যাদি। উক্তিটি সর্বৈব সত্য না হলেও এর মধ্যে কিছুটা সত্যতা রয়েছে। পদাবলীর কোনো কোনো পর্যায় ধরে আলোচনা করলেই উভয়ের পার্থক্য পরিস্ফুট হতে পারে।

বিদ্যাপতির একটি পূর্বরাগের পদ— ‘হাথক দরপণ মাথক ফুল। নয়নক অঞ্জন মুখক তাম্বুল।। … বিদ্যাপতি কহ দুই দোহা হোয়।।’ অর্থাৎ রাধা কৃষ্ণকে লক্ষ্য করে বলেছেন তুমি আমার হাতের দর্পণ, মাথার ফুল, চোখের অঞ্জন, মুখের তাম্বুল, তুমি হৃদয়ের কস্তুরী, গ্রীবার হার, দেহের সর্বস্ব এবং গৃহের সার। তুমি পাখির পাখা, জলের মাছ তোমাকে আমি জীবের জীবন বলেই জানি। হে মাধব তুমি কেমন, তা আমাকে বল। বিদ্যাপতি বলেন– তোমরা দুজনেই দুজন অর্থাৎ পরস্পর সাপেক্ষ।

বিদ্যাপতির এই পদটিতে রাধা-কৃষ্ণের সম্পর্কটিকে পরস্পর-সাপেক্ষ বললেও কিন্তু এখানে বিদ্যাপতি তাঁর অলঙ্কারপ্রিয়তারই বিশেষ পরিচয় দিয়েছেন। এখানে আস্তর জগতের কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। পক্ষাস্তরে চণ্ডীদাসের পূর্বরাগের পদে-রাধার যে আত্মহারা ভাব প্রকাশিত হয়েছে পূর্বরাগের মধ্যেও যে বিরহ-ব্যাকুলতার পরিচয় পাওয়া, তেমনটি অন্যত্র দুর্লভ।

সিই, কেবা শুনাইল শ্যাম নাম, কিংবা ‘রাধার কি হৈল অন্তরে ব্যথা — এদের যে কোনো একটি পদ বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে, কবি চণ্ডীদাস যেন রাধার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন। ফলত ঐ পদগুলিও আত্মভাবনালীন গীতিকবিতার লক্ষণাক্রান্ত হয়ে উঠেছে।

রাধা সংসার-বিষয়ে উদাসীন হয়ে উঠেছেন

‘বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে, না শোনে কাহারো কথা।। 

সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘপানে, না চলে নয়ান তারা। 

বিরতি আহারে রাঙ্গাবাস পরে, যেমত যোগিনী পারা।।’

কী যেন একটা রাধাকে গ্রাস করে বসেছে। কামনার ধনকে না পেয়ে তাঁর মনপ্রাণ অস্থির হয়ে উঠেছে।

‘ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার, তিলে তিলে আইসে যায়। 

মন উচাটন নিশ্বাস সঘন, কদম্ব কাননে চায়।’

আত্মবিস্মৃত চণ্ডীদাস এখানেই অনুভূতির যে স্তর আরোহণ করেছেন, সেখানে রূপের বৈচিত্র্য নেই, কিন্তু রয়েছে উপলব্ধির গভীরতা। অতএব এ জাতীয় পদে বিদ্যাপতির সঙ্গে চণ্ডীদাসের পার্থক্য সুস্পষ্ট।

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে, “বিদ্যাপতি সুখের কবি, চণ্ডীদাস দুঃখের কবি। বিদ্যাপতি বিরহে কাতর হইয়া পড়েন, চণ্ডীদাসের মিলনেও সুখ নাই। বিদ্যাপতি জগতের মধ্যে প্রেমকে সার বলিয়া জানিয়াছেন, চণ্ডীদাস প্রেমকেই জগৎ বলিয়া জানিয়াছেন। বিদ্যাপতি ভোগ করিবার কবি, চন্ডীদাস সহ্য করিবার কবি। চণ্ডীদাস সুখের মধ্যে দুঃখ ও দুঃখের মধ্যে সুখ দেখিতে পাইয়াছেন। তাহার সুখের মধ্যেও ভয় এবং দুঃখের প্রতিও অনুরাগ বিদ্যাপতি কেবল জানেন যে মিলনে সুখ ও বিরহে দুঃখ, কিন্তু চণ্ডীদাসের হৃদয় আরো গভীর, তিনি উহা অপেক্ষা আরও অধিক জানেন।” রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি থেকে আমাদের সাধারণভাবে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের স্বাতন্ত্র্য এবং তাদের পার্থক্যটি বুঝে নেওয়া সম্ভব হলেও এ বিষয়ে আরো অনুপু আলোচনা প্রয়োজন।

বিদ্যাপতির সঙ্গে চণ্ডীদাসের পার্থক্য মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গীগত। চণ্ডীদাস বাশুলিদেবীর সেবক, বিদ্যাপতিও সম্ভবত শৈব কিংবা পঞ্চোপাসক স্মার্ত ব্রাহ্মণ—দুজনের কেউই বৈষ্ণব ছিলেন বলে মনে হয় না। কিন্তু চণ্ডীদাসের প্রাণটি একান্তভাবেই ওক্তের প্রাণ, তিনি যখন রাধার কথা বলেছেন, তখনই রাধার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন, বিদ্যাপতির পক্ষে, অদ্ভুত প্রথম দিককার পন রচনায় এই একাত্মবোধ ঘটেনি। উভয়ের মধ্যে এটিই প্রধান পার্থক্য। রাধাহৃদয়ের বেদনা ও আর্তি চণ্ডীদাস হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন, কিন্তু বিদ্যাপতি দেহ-সম্ভোগকে বাদ দিয়ে শুধু আত্মিক দিক দিয়ে পদ রচনা করতে পারেননি। অধ্যাপক অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চণ্ডীদাসের পদাবলীর যদি কোনো একটি স্থায়ী সুর থাকে, তবে বেদনার সুর, আক্ষেপানুরাগের সুর। বিদ্যাপতির পদে যেমন ঐকান্তিক আর্তির সঙ্গে বিলাসবিভ্রম ও মিলনোল্লাসের তীব্র বিষামৃত পরিবেষিত হইয়াছে, পদাবলীর চণ্ডীদাসে তাহার দৃষ্টান্ত বিরল। বস্তুত নিছক দেহকেন্দ্রিক মিলনরভস কায়াকান্তির আসবমত্ততা— এ সমস্ত পদাবলীর চণ্ডীদাসে বিশেষ নাই।” বস্তুত পূর্বরাগ বা অভিসারের পদে বিদ্যাপতি রাধার বর্ণনায় যেমন উচ্ছল হয়ে উঠেছেন চণ্ডীদাসের পক্ষে তা কখনও সম্ভবপর নয়।

চণ্ডীদাস যখন পূর্বরাগের পদ রচনা করেছেন, তখনই তার মধ্যে একটা বিরহের সুর ধ্বনিত হয়। আক্ষেপানুরাণ পর্যায়ে চণ্ডীদাস বিদ্যাপতিকে অতিক্রম করে গেলেন। তিনি যে বেদনার কবি, আক্ষেপানুরাগের পদগুলিতে তার সুস্পষ্ট পরিচয় রয়েছে। বিদ্যাপতি এখানে অনেকটা ম্লান।

বিরহের চিত্রাঙ্কনে বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাস উভয়েই তুল্য ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। বিদ্যাপতি তার দেহসার রাধাকে অগ্নিশুদ্ধা করে প্রায় চণ্ডীদাসের স্তরে উন্নীত করে দিয়েছেন। তবু বলতে হয়, বিরহের চিত্রাঙ্কনে বিদ্যাপতি যেন সমধিক কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। চণ্ডীদাসের পদে পূর্বরাগ থেকে ভাবোল্লাস পর্যন্ত সর্বত্রই একটা বিরহের সুর যেন অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মতো নিরন্তর বয়ে যাচ্ছে, পৃথকৃভাবে বিরহের পদ-রচনায় তিনি ততোটা মনঃসংযোগ করেননি, কিন্তু বিদ্যাপতি বিরহ-পর্যায়ে এসে যেন ভাবাতুর হয়ে পড়লেন। তিনি প্রাণ ঢেলে দিয়ে রাধার বিরহবেদনাকে রূপায়িত করেছেন। চণ্ডীদাসের রাধার মতোই বিদ্যাপতির রাধার হাদয়ও এখানে। হাহাকার করে ওঠে ‘বিরহ পয়োধি পার কিএ পায়ব। বিদ্যাপতিও রাধার হৃদয় বেদনাকে নিজের হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন কিন্তু রাধিকার সেই বেদনাকে আপন বেদনা বলে গ্রহণ করতে পারেননি—চণ্ডীদাসের একাত্মবোধ বিদ্যাপতিতে নেই, চণ্ডীদাসের আত্মবিস্মৃতও নেই।

ভাবসম্মেলনের পদেও বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাস উভয়েই উচ্চ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। বিদ্যাপতির রাধা বলেন—’লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয় রাখলু তবু হিয়া জুড়নন গেল।’ আর চণ্ডীদাসের রাধা—’দুই কোরে দুই কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া।” —বৈষ্ণবপদেই পদের দুই শ্রেষ্ঠ কবির মিলন ঘটেছে এই এক স্থানে এসে।

প্রার্থনার পদে বিদ্যাপতি অনন্য, চণ্ডীদাস প্রার্থনার পদ রচনা করেননি। কিন্তু তার ‘নিবেদন’ পর্যায়ের পদগুলিও অনন্য। আত্মসমর্পণের দিক থেকে উভয়েই তুল্যমূল্য প্রার্থনার পদে বিদ্যাপতি। স্বয়ং আত্মসমর্পণ করেছেন, নিবেদনে চণ্ডীদাস রাধিকার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছেন। ভাবের গভীরতায় এবং আন্তরিকতায় কেউ কারোর চেয়ে দূরে নেই।

বিদ্যাপতি শ্রীমতী রাধার সম্বন্ধে বলেছেন— ‘অনুখন মাধব মাধব সোপ্তরিতে সুন্দরী ভেলা মধাঈ’ — অর্থাৎ শ্রীমতী মাধবকে স্মরণ করতে করতে নিজেই মাধব হয়ে গেলেন। অবৈষ্ণব বিদ্যাপতি কাব্য রচনা প্রসঙ্গে রাধা-কথা বলতে বলতে শেষ জীবনে রাধার সঙ্গেই একাত্ম হয়ে। গেলেন। চণ্ডীদাস চিরকাল রাধার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতেন। প্রার্থনার পদে এসে বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাসও যেন এক হয়ে গেলেন।

বিদ্যাপতির একটি প্রার্থনার পদ– ‘মাধব বহুত মিনতি করি তোয়। দেই তুলসী তিল দেহ সমর্পিলু, দয়া জনু ছোড়বি মোয়।।.. তুয়া পদপল্লব কবি অবলম্বন তিল এক দেহ দীনবন্ধু।। – বিদ্যাপতি তিল তুলসী দিয়ে আত্মদেহ শ্রীকৃষ্ণে সমর্পণ করেছেন। তিনি জগন্নাথ অতএব কবির শত দোষ থাকলেও প্রভু অবশ্যই তাঁকে ভবসিন্ধু পার হতে সহায়তা করবেন।

চণ্ডীদাস লিখেছেন ‘নিবেদন’ পর্যায়ের কয়েকটি পদ। এই পদগুলির সঙ্গে বিদ্যাপতির ‘প্রার্থনা পর্যায়ের ভাবগত ঐক্য বর্তমান। পার্থক্য শুধু–– বিদ্যাপতি নিজে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জ্ঞাপন করেছেন, কিন্তু চণ্ডীদাস রাধার জবানীতে শ্রীকৃষ্ণাচরণে শরণ চাইছেন। প্রকৃত বৈষ্ণব কখনও মুক্তি কামনা করেন না। চণ্ডীদাসের পদটি—

বঁধু, তুমি সে আমার প্রাণ।

দেহ মন আদি তেঁহারে সঁপেছি কুলশীল জাতি মান।।…

সতী বা অসতী তোমাতে বিদিত, ভালো-মন্দ নাহি জানি।

কহে চণ্ডীদাস পাপপুণ্য সম, তোহারি চরণখানি।’

এখানে চণ্ডীদাসও শ্রীকৃষ্ণকে ‘অখিলের নাথ’ বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি অপর একটি পদে বিদ্যাপতির মতোই কৃষ্ণচরণে আত্মসমর্পণ করেছেন

“তোমার চরণে আমার পরাণে বাঁধিল প্রেমের ফাঁসি। 

সব সমর্পিয়া একমন হৈয়া নিশ্চয় হইলাম দাসী।।”

অতএব প্রথমদিকে রাধাকৃষ্ণের লীলাকাহিনী রচনায় বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের মধ্যে বৈষম দেখা গেলেও শেষ পর্যায়ে যে তাদের মধ্যে সাধৰ্ম্য দেখা দিয়েছিল, বিদ্যাপতিও যে রূপের সাধন করতে করতে চণ্ডীদাসের মতো অরূপসুন্দরের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, এ কথা নিশ্চিতভাবেই উল্লেখ করা চলে।