অথবা, বৈষ্ণব পদাবলীর পদকর্তা হিসেবে চণ্ডীদাসের রাধার বৈশিষ্ট্য লেখ

চণ্ডীদাসের কিশোরী বালিকা নয়, পূর্বরাগ পর্যায়েও নয়। সে পরিপূর্ণ যুবতী, স্বাধীন ব্যক্তিত্বময়ী। প্রথম থেকেই সে কৃষ্ণ প্রেমে আকুলা। শ্রীরাধা যেন বৃন্তহীন পুষ্পাসনে আপনাতে আপনি বিকশিত পরিণত নায়িকা রূপে কৃষ্ণপ্রেমে আত্মহারা। কৃষ্ণের চিত্র দর্শনে রাধা অসম্মত হয়েছে। কৃষ্ণের নাম শ্রবণে সে বলে উঠে-

সই, কেবা শুনাইল শ্যাম-নাম।

কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো

আকুল করিল মোর প্রাণ।।

চণ্ডীদাস রাধার তন্ময় প্রেমকুলতার রস বিগলনে নিজেও বিগলিত হয়েছেন। চণ্ডীদাসের অভিসারিকা রাধা গৃহকর্মে ব্যস্ত। রাধা কৃষ্ণের কাছে যেতে ব্যাকুল হলেও ঘরে ননদ কিন্তু প্রেমিক কৃষ্ণ যখন রাধার দেরি দেখে নিজেই উপস্থিত হয় তখন সব বাধা জলাঞ্জলি দিয়ে রাধাকে বের হতে হয়। চণ্ডীদাসের রাধার মধ্যে কোনো আনন্দ, উল্লাস এবং উচ্ছ্বলতা নেই। তাই সে রাতকে দিন, দিনকে রাত করেও প্রেমের স্বরূপ বুঝতে পারে না। কৃষ্ণ তার সামনে দিয়ে অন্যের কাছে গেলেও কৃষ্ণকে গালমন্দ করে না । কেবল সে নিজের কষ্টের কথাই ব্যক্ত করে। এটা যেন রাধার শুদ্ধ প্রেমিকার গুণ।

পরিশেষে বলা যায় যে, চণ্ডীদাস দুঃখের কবি। তাই রাধার ধ্যানমগ্ন আধ্যাত্ম মূর্তি আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছে। সুতরাং চণ্ডীদাসের রাধা গভীর ও ব্যাকুলা।