নাক ডাকা – আমাদের প্রচলিত একটি সমস্যা Image By: The Sun |
ঘুমের মাঝে নাক ডাকা একটি অতি প্রচলিত সমস্যা। Hopkins medicine এর তথ্যমতে, পৃথিবীর প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ মাঝে মাঝে নাক ডেকে থাকেন এবং প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ নিয়মিত নাক ডাকেন।
বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে মাঝ বয়সী এবং বৃদ্ধ বয়সী মানুষের মধ্যে নাক ডাকার হার অনেক বেশি। আবার গবেষণায় দেখা যায় যে, নারীদের চেয়ে পুরুষ মানুষ বেশি নাক ডাকে। তবে সে যাই হোক না কেন, রাতে ঘুমানোর সময় যদি আপনার পাশের লোকটি নাক ডাকা শুরু করে, তাহলে সে রাতের জন্য আপনার ঘুম গায়েব হতে বেশি সময় লাগবে না।
আর এমন পরিস্থিতি তে নিজের অজান্তেই আমরা মনে মনে বলে উঠি – মানুষ কেন এত নাক ডাকে? উত্তরটি জানা না থাকলে চলুন দেখে নেওয়া যাক।
নাক ডাকার কারণ
আমরা যখন শ্বাস নেই তখন বাতাস স্বাভাবিকভাবেই নাক, গলা বা শ্বাস নালীর দেয়ালে ধাক্কা খায়। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে বাতাস চলাচলের এই রাস্তাটি যথেষ্ট প্রসস্থ হওয়ার কারণে তেমন কোন সমস্যা হয় না। বাতাস স্বাভাবিকভাবে আমাদের ফুসফুসে যেতে এবং আসতে পারে।
কিন্তু আমরা যখন ঘুমাই আমাদের সম্পূর্ণ শরীরে পেশী শিথিল হয়ে যায়। মুখ ও গলার পেশিও এর ব্যতিক্রম নয়। ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথে আমাদের মুখের ওপরের অংশ, আল-জিহ্বা, নাকের বিভিন্ন অংশ এবং জিহ্বার তল বেশি শিথিল হয়ে যায়। এতে করে গলার ভেতর বা শ্বাস নালীর ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচলের রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ে।
যেহেতু শরীর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে চায় তাই বাতাস এই সংকুচিত রাস্তা ঠেলেই আমাদের ফুসফুসে যেতে চায়। ফলে মানুষের গলায় অতিরিক্ত বাতাসের চাপ তৈরি হয় যা গলার আশেপাশে মসৃণ টিস্যুকে প্রকম্পিত করে। আর এই কম্পনই সৃষ্টি করে বিকট শব্দ যাকে আমরা নাকে ডাকা বলে থাকি।
সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে গলার মাংসপেশি শিথিল হয়ে পড়ে। তাই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে নাক ডাকার হারও বেড়ে যায়।
আবার যাদের ওজন বেশি বা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মোটা হয়ে থাকেন, তাদের সাধারণত শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে যা কিনা গলায় ফ্যাটি টিস্যু বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাড়তি ওজন বা মোটা (স্থূলকায়) মানুষজন নাক বেশি ডেকে থাকে।
আবার ঘুমানোর ভঙ্গির উপরও নাক ডাকার হার নির্ভর করে। উপুড় হয়ে শুয়ে শ্বাস নালী ও গলার পেশী বেশি সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে বাতাস বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং নাক ডাকা বেশি হয়।
আবার পূর্বেই বলা হয়েছে যে, ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি নাক ডাকে। দেখা যায় মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বেশি নাক ডাকে। ছেলেদের গলার ভেতরে ফাঁকা জায়গা তুলনামূলক-ভাবে বেশি, ফলে জিহ্বা শিথিল হয়ে গলার ফাঁকা জায়গায় ঝুলে পড়লে বাতাসের আসা-যাওয়ার পথ সরু হয় কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় না। মেয়েদের ক্ষেত্রে গলার ফাঁকা জায়গা অনেক ছোট। তাই যখন জিহ্বা শিথিল হয়ে ঝুলে পড়ে তা বাতাস আসা-যাওয়ার প্রায় সম্পূর্ণ পথই বন্ধ করে দেয়। ফলে মেয়েদের ঘুম ভেঙে যায় এবং জেগে ওঠে। তাই তারা আর নাক ডাকে না।
এরকম আরও কিছু কারণে মানুষ নাক ডেকে থাকে। যেমন মাদক সেবন, ধূমপান, ঠিকমত না ঘুমানো, শারীরিক দূর্বলতা ইত্যাদি কারনেও মানুষ নাক ডেকে থাকে।
কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান |
Leave a comment