প্রশ্নঃ ‘গ্রেপ্তার’ বলতে কি বুঝায়? কখন ও কি অবস্থায় কোন পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন? কোন সাধারণ ব্যক্তি কি কোন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারে? যদি পারে, তবে কখন ও কোন্ কোন্ অবস্থায়? 

গ্রেফতারঃ গ্রেফতার হচ্ছে একটা আইনগত কার্যক্রম যার দ্বারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে বিচারের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ব্যালেনটাইন অভিধান অনুসারে গ্রেফতার বলতে গ্রেফতারকারী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির দেহ স্পর্শ করে বা তার শরীরে হাত রেখে তাকে আটক করা বা অন্য কোন কার্য যা তাকে হেফাজতে নেয়ার ইঙ্গিত বহন করে এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি গ্রেফতারকারীর ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিপতিত হয় । [The taking seizing or detaining of the person of another either by touching, or putting hand on him, or by any act which indicats an intention to take him into custody and subjects the person arrested to the actual control and will of the person ing the arrest.] – Ballentine’s Law Dictionary, 1948, Ed. p, 105.

আমল অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা বলে এবং আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা বলে পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার করে আদালতে বিচারের জন্য হাজির করতে পারেন।

সাধারণত আদালতের ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ব্যতীত একজন পুলিশ অফিসার কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে না। তবে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় এর কিছু ব্যতিক্রম করা হয়েছে, এই ধারা অনুসারে নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে একজন পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন।

১. আমলযোগ্য অপরাধঃ কোন আমলযোগ্য অপরাধের সাথে কোন ব্যকিত এভাবে জড়িত আছে বলে যার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ রয়েছে, অথবা বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গিয়েছে অথবা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে।

২. ঘর ভাঙার সরঞ্জামঃ যথার্থ কারণ ব্যতীত যার নিকট ঘর ভাঙার সরঞ্জাম রয়েছে, এমন ব্যক্তিকে পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করতে পারে। এক্ষেত্রে যথার্থতা প্রমাণ করার দায়িত্ব সে ব্যক্তির উপর বর্তায় ।

৩. ঘোষণাকৃত অপরাধীঃ ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে অথবা সরকারের আদেশ দ্বারা যাকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়েছে, সেরূপ ব্যক্তিকে পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারেন ।

৪. চোরাই মালঃ চোরাই মাল বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যায় সেরূপ মাল যার অধিকারে রয়েছে এবং উক্ত মাল সম্পর্কে সে কোন অপরাধ করেছে বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যায় এরূপ ব্যক্তিকে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন।

৫. পুলিশকে বাধাদান : যে ব্যক্তি পুলিশকে তার কর্তব্য পালনে বাধা দেয় অথবা যে ব্যক্তি আইনগত হেফাজত হতে পলায়ন করেছে বা পলায়নের চেষ্টা করে তাকে বিনা পরোয়ানায় পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেন ।

৬. সশস্ত্র বাহিনী হতে পলায়ন : যে ব্যক্তি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী অথবা বিমান বাহিনী হতে পলায়ন করেছে বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যায় সে ব্যক্তিকে এভাবে গ্রেফতার করা যায় ৷

৭. বাংলাদেশের বাইরে কৃত অপরাধ : বাংলাদেশে সংঘটিত হলে অপরাধ বলে গণ্য করা হতো, এমন কোন কার্য বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত হলে, সে কার্যের সাথে জড়িত আছে বলে যার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ করা হয়েছে অথবা বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গিয়েছে অথবা যুক্তি সঙ্গত সন্দেহ রয়েছে, এমন ব্যক্তিকে পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারেন। এর ফলে উক্ত অপরাধী প্রত্যর্পণ (Extradition) সম্পর্কিত আইন অথবা পলাতক অপরাধী আইন (Fugitive offenders Act, 1881) অনুসারে অথবা অন্য কোনভাবে বাংলাদেশে গ্রেফতার হতো অথবা আটক থাকতো ।

৮. মুক্তিপ্রাপ্ত আসামী কর্তৃক নিয়ম ভঙ্গ : কোন মুক্তিপ্রাপ্ত আসামী যে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬৫ (৩) ধারা অনুসারে নিয়ম ভঙ্গ করে অর্থাৎ তার বাসস্থানের বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করে, তবে পুলিশ অফিসার পরোয়ানা ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করতে পারেন। পার

৯. অন্য পুলিশ অফিসারের অনুরোধ : যাকে গ্রেফতারের জন্য অপর কোন পুলিশ অফিসারের নিকট হতে অনুরোধ পাওয়া গিয়েছে, সেই ব্যক্তিকে পুলিশ অফিসার বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারেন। তবে সেই ব্যক্তির অপরাধ বা গ্রেফতারের কারণ অনুরোধ পত্রে উল্লেখ থাকতে হবে এবং অনুরোধকারী অফিসার আইনসঙ্গতভাবে বিনা পরোয়ানায় ঐ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে যে পারেন তা নিশ্চিত হতে হবে ।

৫৪ ধারার উপরিউক্ত বিধান ছাড়াও নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার বিনা ওয়ারেন্টে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন;

১০. নিজের উপস্থিতি গোপন করা : কোন থানার এলাকার মধ্যে যে ব্যক্তি এরূপ উপস্থিতি গোপন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার ফলে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করা যায় যে, সে ব্যক্তি কোন আমলযোগ্য অপরাধ করার উদ্দেশ্যেই এরূপ ব্যবস্থা করেছে, তাহলে তাকে ৫৫ ধারা অনুসারে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যায় ।

১১. জ্ঞাত জীবিকা নেই : যে ব্যক্তির কোন প্রকাশ্য জীবিকা নেই, অথবা নিজের সম্পর্কে কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারে না সে ব্যক্তিকে একই ধারায় গ্রেফতার করা যায় ।

১২. অভ্যাসগতভাবে চোর, ডাকাত, ইত্যাদি : যে ব্যক্তি অভ্যাসগতভাবে ডাকাত, গৃহভঙ্গকারী বা চোর বা অভ্যাসগতভাবে চোরাই মাল গ্রহণ করার যার দুর্নাম রয়েছে। অভ্যাসগতভাবে যে রাহাজানি করে অথবা এরূপভাবে রাহাজানি করার উদ্দেশ্যে অভ্যাসগতভাবে অপরকে আঘাতের হুমকি দেয় তাকে একই ধারার বিধান মতে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যায় ।

১৩. নাম ঠিকানা জানাতে অস্বীকৃতি : পুলিশের উপস্থিতিতে যখন কোন ব্যক্তি আমলের অযোগ্য অপরাধ করে বা এরূপ অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং উক্ত অফিসার তার নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তা জানাতে অস্বীকার করে বা এমন নাম ঠিকানা বলে যা উক্ত অফিসারের নিকট মিথ্যা বলে মনে হয় তাহলে তার সঠিক নাম ঠিাকানা জানার উদ্দেশ্যে ৫৭ ধারা মতে পুলিশ অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে পারে ।

১৪. আমলযোগ্য অপরাধ প্রতিরোধ : যদি কোন পুলিশ অফিসার জানতে পারেন যে, কোন ব্যক্তি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের ফন্দি আটছে এবং এ অপরাধ সংঘটন অন্যভাবে প্রতিরোধ করা যাবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত পুলিশ অফিসার ১৫১ ধারা মতে বিনা ওয়ারেন্টে সে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে ।

১৫. শর্ত ভঙ্গ করা : কোন শর্তে যখন কোন ব্যক্তির কোন দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক ঐ শর্তগুলি ভঙ্গ করা হলে ৪০১ (৩) ধারা অনুযায়ী পুলিশ অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে পারেন ।

সাধারণ ব্যক্তি কর্তৃক গ্রেফতারঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুসারে একজন সাধারণ ব্যক্তি একজন অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারে। এ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে কোন সাধারণ নাগরিক তাঁর মতে জামিনের অযোগ্য ও আমলযোগ্য অপরাধকারী ব্যক্তিকে অথবা অপরাধী বলে ঘোষিত কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন। তবে গ্রেফতারের পর অহেতুক বিলম্ব না করে তাকে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করতে হবে বা কোন পুলিশ অফিসার না থাকলে নিকটতম থানা হেফাজতে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৫৪ ধারার আওতায় পড়ে বলে মনে করার কারণ থাকলে পুলিশ অফিসার তাকে পুনরায় গ্রেফতার করবেন।

আমলের অযোগ্য অপরাধের অভিযোগ থাকলে এবং পুলিশের নিকট নাম-ঠিকানা দিতে অস্বীকার করলে কিংবা দিলেও তা মিথ্যা বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে ৫৭ ধারা মতে পুলিশ অফিসার তাকে গ্রেফতার করে সঠিক তথ্য উদ্ধার করবেন ।