মানুষের বিভিন্ন কাজকর্মের প্রভাবে গ্রিনহাউস গ্যাসের (কার্বন ডাইঅক্সাইড, ক্লোরােফ্লুরােকার্বন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ইত্যাদি) অতিরিক্ত সরবরাহ ঘটে। যেমন一

[1] জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার : কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি কলকারখানা, যানবাহন চলাচলে ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়। এদের দহনে কার্বন মনােক্সাইড এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

[2] অরণ্যনিধন ও জ্বালানি কাঠের ব্যবহার : অতিরিক্ত গাছ কাটার ফলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO২) শোষণের হার কমে যাচ্ছে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ পােড়ানােয় বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO২) পরিমাণ বাড়ছে।

[3] ক্লোরােফ্লুরাে কার্বনের উৎপাদন : হিমায়ন প্রক্রিয়া, ইলেকট্রনিকস শিল্প ও রং শিল্পে প্রচুর CFC উৎপন্ন হয়। এতে বাতাসে CFCর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

[4] কৃষিতে নাইট্রোজেনজাতীয় সার ব্যবহার : কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জমিতে নাইট্রোজেনজাতীয় সার ব্যবহার করা হয়। ফলে বাতাসে নাইট্রাস অক্সাইড (N২0) বৃদ্ধি পাচ্ছে।

[5] জৈব আবর্জনার পচন : নানা ধরনের জৈব আবর্জনার স্তূপে আবর্জনা পচে গিয়ে, জলাশয়ের মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী পচে গিয়ে, গবাদি পশুর মলমূত্র থেকে এবং ধানখেত থেকে প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন মিথেন (CH৪) গ্যাস বাতাসে মিশছে।

[6] অন্যান্য কারণ বা উৎস : ওজোন গ্যাসের ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ুগত পরিবর্তনে উয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাতাসের জলীয় বাষ্প ধরে রাখার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে।

1992 খ্রিস্টাব্দে রিও-ডি-জেনিরাে, 2002 খ্রিস্টাব্দে জোহানেস্বার্গে এবং সম্প্রতি জাপানের কিয়ােটো শহরে পরিবেশ-সংক্রান্ত সম্মেলনে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন পুরােপুরি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত উপায়গুলি গ্রহণ করলে। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ বহুলাংশে সম্ভব হবে।

[1] জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস : জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি) যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে বাতাসে Co, এর পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব। জ্বালানি প্রয়ােজনহীন যানবাহনের ব্যবহারের দিকে প্রবণতা বাড়াতে হবে।

[2] অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি : অচিরাচরিত শক্তি (সৌরশক্তি, জোয়ারভাটা শক্তি, বায়ুশক্তি ও ভূতাপীয় শক্তি) ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে।

[3] ফ্রেয়ন গ্যাসের উৎপাদন বন্ধ : ফ্রেয়ন গ্যাসের (CFC১১) এবং CFC১২) উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে হবে।

[4] বনসৃজনে উৎসাহ দান : অরণ্যচ্ছেদন হ্রাস, বৃক্ষরােপণ ও বনসৃজনের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে গাছপালা বাতাসের অতিরিক্ত CO২ শােষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।

[5] প্রযুক্তির উন্নতি : গাড়ি ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়িয়ে পেট্রোল ও ডিজেল প্রভৃতি জ্বালানির অপচয় ও ব্যবহার কমিয়ে বাতাসে CO২ এর সঞ্চয় কমাতে হবে।

[6] আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ : মিথেন উৎপাদনকারী আবর্জনার সঠিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের সঞ্চয় কমাতে হবে।

[7] পরিবর্ত দ্রব্যের ব্যবহার : কাঠের পরিবর্ত দ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে।

[8] জনসচেতনতা বৃদ্ধি : জনগণকে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

[9] গবেষণায় উৎসাহ দান : গ্রিনহাউস গ্যাস কমানাের উপায় উদ্ভাবনের জন্য গবেষণার কাজে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, অর্থাৎ সক্রিয়ভাবে উৎসাহ প্রদান করতে হবে।

[10] জ্বালানির সাশ্রয় : ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা হ্রাস করে জ্বালানির সাশ্রয় করা সম্ভব।