গ্রিক পলিসগুলির রাজনৈতিক সংগঠন বা শাসন কাঠামাের প্রধান তিনটি অংশ ছিল। যথা- [1] সমিতি, [2] পরিষদ এবং [3] ম্যাজিস্ট্রেট। এথেন্স গণতান্ত্রিক এবং স্পার্টা অভিজাততান্ত্রিক শাসন কাঠামাের আদর্শ পলিস ছিল। এথেন্সের শাসনকাঠামােতে সমিতি, পরিষদ এবং ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও হেলাইয়া বা জুরি আদালতের অস্তিত্ব ছিল, যা অন্যান্য পলিসে ছিল না।

[1] সমিতি বা একলেজিয়া : এথেন্সের সমিতির নাম ছিল একলেজিয়া এবং স্পারটায় অ্যাপেলা। প্রথম পর্বে একলেজিয়ার অস্তিত্ব ও ক্ষমতা খুব বেশি ছিল না। পরবর্তীকালে নানান বিবর্তনের মধ্য দিয়ে একলেজিয়া শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সেই সময় এথেন্সের থিটিস (এথেন্সের ক্রীতদাস)-রা ছাড়া অন্য সকলেই একলেজিয়ার সদস্য হতে পারত।

[2] ডােটাধিকার: প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত সমিতির সিদ্ধান্ত অনুসারে পলিসের রাজনৈতিক চরিত্র নির্ধারিত হত। [i] গণতন্ত্রে প্রাপ্তবয়স্ক সকল স্বাধীন নাগরিক ভােটাধিকার প্রয়ােগ করতে পারত। এথেন্সে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভােট না দিলেও সকল নাগরিকের সেই অধিকার ছিল এবং কখনাে কখনাে তারা তা প্রয়ােগ করত। [ii] অভিজাততন্ত্রে সকলের ভােটাধিকার ছিল না। নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তির মালিকরা সেখানে ভােটদানের অধিকার ভােগ করত।

[3] পরিষদ: সােলনের শাসনের পূর্ব পর্যন্ত এথেন্সে একটিমাত্র পরিষদ ছিল যার নাম ছিল এ্যারিওপাগাসের কাউন্সিল। সােলন এই কাউন্সিলের ক্ষমতা কমিয়ে চারশো জনের পরিষদ এবং পরে ক্লেইসথেনেস পাঁচশাে জনের পরিষদ গঠন করেন। অভিজাততন্ত্রে পরিষদের আয়তন হত ক্ষুদ্র। এখানে সদস্যরা নির্বাচনের পরিবর্তে মনােনীত হতেন। সাধারণভাবে অভিজাততন্ত্রে সমিতির তুলনায় পরিষদের গুরুত্ব বেশি থাকলেও স্পার্টা ছিল এর ব্যতিক্রম। স্পার্টার পরিষদের নাম ছিল গেরুসিয়া। এটি বিচারালয় হিসেবেও কাজ করত।

[4] ম্যাজিস্ট্রেট: পলিসে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ বা রাজার ক্ষমতা লুপ্ত হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট পদের সৃষ্টি হয়। এথেন্সের শাসনব্যবস্থায় উচ্চবিত্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা নিযুক্ত হত। তাদের বলা হত আরকন। স্পার্টার ম্যাজিস্ট্রেটরা ইফর নামে পরিচিত ছিল। তবে ইফরগণ রাজার বিকল্প নয়, রাজার পাশাপাশি কার্য পরিচালনা করত। তারা পরিষদের সভায় যােগ দিতে পারত এবং সমিতির (অ্যাপেলা) সভা পরিচালনা করত।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রের মতাে ধর্মীয় ক্ষেত্রেও গ্রিক পলিসগুলি এক একটি পৃথক একক হিসেবে গড়ে উঠেছিল। পলিসের ধারণার সঙ্গে ধর্ম-ভাবনা যে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল তার উল্লেখ সক্রেটিস, প্লেটো ও অ্যারিস্টোফানেসের রচনা থেকে জানা যায়।

[1] বিভিন্ন দেবদেবী : প্রিক পলিসে বহু দেবতার আরাধনার প্রচলন ছিল। বিভিন্ন পলিসের দেবদেবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিউস, পসিডন, হ্যাডেস, অ্যাপােলাে, আরটিসিস, এথেনা, হারমিস, ডিমিটার, হেরা প্রমুখ। বিভিন্ন দেবতা বিভিন্ন ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতেন| যেমন— জিউস ছিলেন আকাশের দেবতা, পসিডন ছিলেন সাগর ও ভূমিকম্পের দেবতা, হ্যাডেস ছিলেন পরলােকের দেবতা। জিউস ছিলেন দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

[2] পলিসের সঙ্গে সংযোগ: গ্রিসের দেবদেবীরা পলিসের উন্নতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল বলে গ্রিকরা বিশ্বাস করত। দেবদেবীগণ পলিসের নিয়মশৃঙ্খলার ধারক ও বাহক বলে পরিচিত ছিলেন। পলিসপগুলিতে সারাবছর ধরে দেবতাদের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের উৎসব, অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করা হত।

[3] দেবতার আরাধনা : গ্রিসের বিভিন্ন পলিসে যেমন পৃথক পৃথক দেবদেবীর পূজার প্রচলন ছিল, তেমনি একই দেবতা বা দেবী একাধিক পলিসেও পূজিত হতেন। যেমন, দেবী এথেনা এথেন্স এবং স্পার্টা উভয় পলিসেই পূজিতা হতেন। কিন্তু উভয় পলিসে তার গুরুত্বে পার্থক্য ছিল। এথেন্সে দেবী এথেনার অত্যধিক গুরুত্ব ছিল এবং সেখানে এথেনাকে নগরের অভিভাবিকা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্পার্টায় এথেনার এই গুরুত্ব ছিল না। ভিন্ন ভিন্ন পলিসে ভিন্ন ভিন্ন পূজাপদ্ধতি ও পৃথক ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও প্রচলন ছিল।

[4] দ্বৈত সত্তা: প্রাচীন গ্রিসের দেবদেবীদের দ্বৈত সত্তার‌ অস্তিত্ব ছিল। দেবদেবীগণ একদিকে যেমন নির্দিষ্ট কোনাে পলিসের দেবতা ছিলেন অন্যদিকে তারা আবার সমগ্র গ্রিক জাতিরও দেবতা ছিলেন।

[5] পরলােকচিন্তা: গ্রিকরা বিশ্বাস করত যে, মানুষের মৃত্যুর পর আত্মা ইহলােকে ঘুরে বেড়ায়। যথাযথ ধর্মীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর সেই আত্মা ইহলােক থেকে পরলােকে পৌঁছােয়। প্রাচীন গ্রিক মতে, পরলােক নিয়ন্ত্রিত হয় দেবতা হ্যাডেসের দ্বারা।

[6] ধর্মীয় সৌধ ও গ্রন্থ : গ্রিকরা স্থানীয়ভাবে পলিসের বিভিন্ন স্থানে পূণ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করত। এই ধর্মীয় সৌধগুলি বিভিন্ন দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হত। হেসিয়ডের ‘থিওগনী’ এবং ওয়ার্কস এন্ড ডেজ’, হােমারের ‘ইলিয়াড’ এবং ‘ওডিসি’, পিন্ডারের ‘ওডেস’ ছিল গ্রিকদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।