লালন সাঁই তার ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানে বলেছেন মানুষের মধ্যেই মনের মানুষ-এর বা ঈশ্বরের অবস্থান। তাকে পাওয়ার মধ্যে দিয়েই আত্মতত্ত্বের বা নিজেকে জানার সাধনা সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু এই পরম ঈশ্বরের সাক্ষাৎ পাওয়া বিষয়ী লােকের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ যাকে বহু সন্ধানেও পাওয়া মােটেও সহজ নয়, সেই পরম ঈশ্বর বা মনের মানুষ-কে লাভ করতে গেলে সম্পূর্ণরূপে বিষয়বাসনার চিন্তাশূন্য হতে হয়। আমাদের মনকে ঘিরে করে থাকা বিভিন্ন পার্থিববাসনাকেই লালন ফকির আলােচ্য গানে ‘অগাধ পানি’র প্রতীকে স্পষ্ট করে তুলেছেন। কোনাে ‘তরণী অর্থাৎ মন্ত্রতন্ত্র, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি নেই যা প্রাণের মানুষ বা ঈশ্বরের কাছে সাধককে সহজে পৌঁছে দিতে পারে। অথচ ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করার জন্য সাধকের সন্ধানও চলে অবিরত।
কিনারাহীন অগাধ পানি বলতে লালন সীমাহীন পার্থিববাসনার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। সেখানে তরণী’র না থাকা বলতে পার্থিববাসনাকে সহজে অতিক্রমের উপায় না থাকাকে লালন নির্দেশ করেছেন।
বাসনা মুক্ত হয়ে নিজের মনকে শুদ্ধ করাই এই অগাধ পানি-কে অতিক্রমের একমাত্র উপায়। কেবলমাত্র বাসনামুক্ত। আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমেই সেই নিরাকার পরম, যা আসলে পরম প্রেমিক বা মনের মানুষ’, তার নাগাল পাওয়া সম্ভব।
লালন সাঁই রচিত বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতার প্রশ্ন ধৃত অংশে উল্লিখিত ‘আরশীনগর’-এর আরশি শব্দটির সাধারণ অর্থ আয়না হলেও এখানে আরশি বা আরশীনগর শব্দের ব্যবহার হয়েছে রূপক অর্থে। আরশি’ হল আত্মদর্শনের এক মাধ্যম। এখানেই পরম-আত্মা বা ঈশ্বরের অবস্থান। যাকে লালন পড়শি বলে উল্লেখ করেছেন।
এই ‘পড়শী’ হলেন প্রত্যেক মানুষের শুদ্ধ মনের মধ্যে বাস করা আর-এক মানুষ বা ঈশ্বর বা ‘মনের মানুষ’। এই পড়শী’র কোনাে স্বতন্ত্র আকার নেই। কবি বলেছেন তাঁর কোনাে হাত-পা কাঁধ মাথা নেই। নিরাকার এই মনের মানুষ কখনও শূন্যে অর্থাৎ সাধনার উচ্চ স্তরে বিরাজ করেন, কখনও আবার বস্তুকে আশ্রয় করে তার প্রকাশ ঘটে। শুধুমাত্র উচ্চস্তরের সাধকেরাই তাঁদের সূক্ষ্ম অনুভবে এই পড়শীর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। এই মনের মানুষের স্পর্শেই ইহজগতের সকল যন্ত্রণা দূরীভূত হতে পারে।
লালন সাঁই-এর সমগ্র জীবনের সাধনাই ছিল তার আরশিনগরের পড়শি অর্থাৎ মনের মানুষ বা ঈশ্বরের সন্ধান করা। যদিও লালনের আক্ষেপ, বিষয়বাসনার কারণে তার সঙ্গে পড়শির লক্ষ যােজনের ব্যবধান কিছুতেই আর ঘােচানাে সম্ভব হল না।
লালনের বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতা বা গানে পড়শী বা মনের মানুষ বা ঈশ্বর আসলে নিরাকার পরম। তাঁর সন্ধানেই সাধকের পথ চলা। এই ‘মনের মানুষ-এর স্বরূপ বা অবস্থান বােঝানাের প্রসঙ্গেই আলােচ্য উদ্ধৃতিটির অবতারণা।
লালন জানেন, জাগতিক নানা আকাঙ্ক্ষা ও বিষয়- বাসনাকে অতিক্রম করে আত্মনিবেদন এবং আত্ম-অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়ার পথটি মােটেও সহজ নয়।নিরাকার। সেই ঈশ্বরের স্বরূপ লালনের কাছে স্পষ্ট, কিন্তু তাঁর সান্নিধ্যে যাওয়ার পথ অর্থাৎ মনের মানুষ’-কে পাওয়া সাধারণভাবে খুব দুষ্কর। কারণ, কখনও তার অবস্থান শূন্য মার্গে আবার কখনও বস্তুজগতেই তাঁর প্রকাশ ঘটে। অর্থাৎ ভক্তসাধকের কাছে মনের মানুষ’-এর অবস্থান দুর্বোধ্য এবং অনিশ্চিত। অথচ কবি জানেন, পড়শী যদি তাকে স্পর্শ করত, তাহলে জাগতিক সব যন্ত্রণা থেকে কবির মুক্তি ঘটত। আসলে বিষয়ভােগী মানুষের অসহায়তার কথাই আলােচ্য অংশে লালন বােঝাতে চেয়েছেন। তার সঙ্গে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ হল মনের মানুষ’-এর জন্য লালনের অন্বেষণ। এই অন্বেষণ যদিও মনে তীব্র না পাওয়ার যন্ত্রণার জন্ম দেয়, তবু বাউলের পথ চলার আনন্দ সেই বিরহকেও মধুর করে তােলে।
লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় পড়শী বলতে পরমাত্মা প্রেমিক পুরুষ বা ঈশ্বরের কথা বলেছেন। তিনি নিরাকার। আত্মতত্ত্বের সন্ধানের মাধ্যমে এই মনের মানুষ বা ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া যায়।
বাউল সাধনার যাবতীয় সন্ধান এই ঈশ্বর বা মনের মানুষ এর জন্য। নিরাকার সেই পরমের সন্ধানেই মানুষ শুদ্ধ হয়। কিন্তু তার সন্ধানও সহজলভ্য নয়। তাকে দেখার ইচ্ছা হয়, কিন্তু পথ পাওয়া যায় না। স্বার্থপরতা আর বিষয়ভাবনা সেই পথ রুদ্ধ করে দেয়। আবার এই বিষয়যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথও কিন্তু সেই মনের মানুষ বা ঈশ্বরের সাধনাই। এই বিষয়বাসনা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই ঈশ্বরের উদ্দেশে আমাদের সাধনাকে পরিচালিত করে। কিন্তু সীমাহীন পার্থিববাসনা সেই পথের অন্যতম বাধা। কবি উপলব্ধি করেন একই জায়গায় থেকেও ঈশ্বরের সঙ্গে তার রয়ে গেছে লক্ষযােজন দূরত্ব। ফলে মনের মানুষ’-এর সন্ধানে বিষয়বাসনা থেকে মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা কবির মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে প্রশ্নোধৃত অংশে। প্রকৃতপক্ষে, লালন ফকির আলােচ্য পঙক্তিটিতে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন যে, আরশিনগরে থাকা সেই পড়শী অর্থাৎ মনের মানুষ’-এর সন্ধান যদি পাওয়া যেত, একমাত্র তা হলেই যম- যাতনা অর্থাৎ বিষয়যন্ত্রণা বা পার্থিব দুঃখ-শােক থেকে মুক্তি পেতেন তিনি।
“বসুন্ধরা গ্রাসিলা সরােষে/ রথচক্র যবে, হায়;” -মন্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। মন্তব্যটিতে যে পৌরাণিক প্রসঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে তার বিস্তৃত বর্ণনা দাও।
“হতজ্ঞান আজি কি হে পুত্রের বিহনে” -বক্তা এই মন্তব্যটি কখন করেছেন? তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
“কি কহিবে, কহ/ যবে দেশ-দেশান্তরে জনরব লবে/ এ কাহিনী” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“…কী গুণে তুমি পূজ, রাজরথি,/ নরনারায়ণ-জ্ঞানে?”- মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“এই তাে সাজে তােমারে, ক্ষত্রমণি তুমি,” -বক্তার এই মন্তব্য কি যথার্থ ছিল?
“ভুলিব এ জ্বালা,/এ বিষম জ্বালা, দেব, ভুলিব সত্বরে। বক্তা এখানে কোন জ্বালা ভুলতে চেয়েছেন? শেষপর্যন্ত কীভাবে এই জ্বালা থেকে তিনি মুক্তি খুঁজেছেন?
“কি লজ্জা! দুঃখের কথা, হায়, কব কারে?” -বক্তা কোন্ দুঃখ এবং লজ্জার কথা বলতে চেয়েছেন?
“মিথ্যা কথা, নাথ। বিবেচনা কর,” -এক্ষেত্রে বক্তা কীভাবে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন?
“মহারথী-প্রথা কি হে এই, মহারথি?”— বক্তার এই ধরনের মন্তব্যের যৌক্তিকতা আলােচনা করাে।
“কিন্তু বৃথা এ গঞ্জনা। গুরুজন তুমি; / পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তােমারে।” -বক্তার এই আক্ষেপ কেন? এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
“ক্ষত্রধর্ম, ক্ষত্রকম্ম সাধ ভুজবলে” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করে তার পরিণতি বিশ্লেষণ করে দেখাও।
“হায়, ভােজবালা কুন্তী-কে না জানে তারে, স্বৈরিণী?” -বক্তার এই মন্তব্যের যথার্থতা আলােচনা করাে।
“দহিল খাণ্ডব দুষ্ট কৃয়ের সহায়ে।/ শিখণ্ডীর সহকারে কুরুক্ষেত্রে রণে”- ‘খাণ্ডব’ দহন ও ‘শিখণ্ডী’ সম্বন্ধে পৌরাণিক সত্য লেখাে।
“চণ্ডালের পদধূলি ব্রাহ্মণের ভালে?/ কুরঙ্গীর অশ্রুবারি নিবায় কি কভু/ দাবানলে? কোকিলের কাকলি-লহরী/ উচ্চনাদী প্রভঞ্জনে নীরবয়ে কবে?”— উদ্ধৃতিটির পশ্চাৎপট আলােচনা করাে।
“কি কুছলে নরাধম বধিল তাঁহারে” -মন্তব্যটির পৌরাণিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“ক্ষত্ৰ-কুলবালা আমি; ক্ষত্র কুল-বধু/ কেমনে এ অপমান সব ধৈর্য্য ধরি?”- বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা। করাে।
জনা কি প্রকৃতই বীরাঙ্গনা? যুক্তিসহ লেখাে।
“ছদ্মবেশে লক্ষরাজে ছলিলা দুর্মতি স্বয়ম্বরে”—আলােচ্য অংশে কোন্ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে?
“হা পুত্র সাধিলি কীরে তুই এই রূপে মাতৃধার” -অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
জনার পত্রে তাঁর ক্রব্ধ অভিমানী স্বর কীভাবে ধরা পড়েছে?
মাতৃত্বের বিচারে জনা চরিত্র কতটা সার্থক?
“এ জনাকীর্ণ ভবস্থল আজি বিজন জনার পক্ষে” -জানা কে? তার কাছে ভবস্থল বিজন কেন?
“লােকমাতা রমা কি হে এ ভ্রষ্টা রমণী?” -‘অষ্টা রমণী’ বলতে কার কথা বােঝানাে হয়েছে? বক্তার এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিত আলােচনা কর।
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’—লালনের এই গানটির মূল বক্তব্য ও তার রূপক অর্থ সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানে বাউলতত্ত্ব কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’-এই রচনাটিতে লালনের কবিপ্রতিভার যে পরিচয় পাওয়া যায় তার মূল্যায়ন করাে।
“আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে” -মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে, কবির সঙ্গে তাঁর পড়শির কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও ‘লক্ষ যােজন ফাক’-এর কারণ বিশ্লেষণ করাে।
Leave a comment