সময় নিউজের (৯ই এপ্রিল ২০২৩) তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন এর মধ্যে গ্রামে বাস করে ১১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ২৪৫ জন। আর বাংলাদেশে গ্রামের সংখ্যা ৮৭ হাজার ১৯১টি আর গ্রামগুলোতে গড়ে পরিবার বাস করে ২৩২টি। বাংলাদেশের এই বিপুল জনসংখ্যার জন্য গ্রাম্য বাজার একান্ত প্রয়োজন। তাই আমি গ্রাম্য বাজার – রচনা যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা যারা পরীক্ষায় গ্রাম্য বাজার – রচনা লিখতে চাও তারা আমার এই গ্রাম্য বাজার – রচনা লিখতে পারো। আমি আশা করি তোমরা বেশ ভালো নম্বর পাবে। তাহলে বন্ধুরা নিচে তোমাদের জন্য গ্রাম্য বাজার – রচনা যথাযথভাবে লিখা হল।

গ্রাম্য বাজার – রচনা 

ভূমিকা

তোমরা যদি আসো আমাদের গাঁয়ে,

দেখতে পাবে একটি গ্রাম্য বাজার,

যেখানে রয়েছে বিভিন্ন পণ্য, আর মানুষের কোলাহল।

গ্রাম্য বাজার আমাদের একটি অতি পরিচিত স্থান। যারা গ্রামে বসবাস করে গ্রাম্য বাজার সেই এলাকার লোকের জন্য একটি পরিচিত স্থান ও বটে। গ্রামবাসীরা বিভিন্ন প্রকার পণ্যদ্রব্য এখানে কেনা বেচা করতে আসে কারণ এখানে গ্রামের উৎপাদিত জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়। সপ্তাহে একদিন বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুই দিন এই গ্রাম্য বাজার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গ্রাম্য বাজার কে আবার মানুষের মিলন মেলা ও বলা হয়।

গ্রাম্য বাজার কি

গ্রাম্য বাজার হলো এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন প্রকার পণ্য লেনদেন, সামাজিক সম্পর্ক এবং পরিকাঠামো যেখানে মানুষ বস্তু বা অন্য কর্ম দক্ষতা বিনিময় করে এবং তার থেকে অর্থ উপার্জন করে। আবার গ্রাম্য বাজার বলতে বোঝানো হয় একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি নির্দিষ্ট দিনে যখন বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য কেনাবেচা হয় তখন তাকে বলা হয় গ্রাম্য বাজার। এই গ্রাম্য বাজার সপ্তাহে দুই দিন এবং নির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ক্রেতা এবং বিক্রেতার একটি মিলন মেলা বসে।

গ্রাম্য বাজারের প্রকারভেদ

গ্রাম্য বাজার সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটিকে বলা হয় গ্রাম্য বাজার এবং অন্যটি কে বলা হয় গ্রাম্য হাট। গ্রামে সাধারণত যেখানে প্রতিনিয়ত সকল প্রকার জিনিস পাওয়া যায় তাকে বলা হয় গ্রাম্য বাজার আর গ্রাম্য হাট বলতে বোঝানো হয় যেখানে সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে এবং নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায় সেই স্থানকে। তবে বর্তমানে গ্রাম্য বাজার বলতে দৈনন্দিন মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস যেখানে পাওয়া যায় তাকেই বাজার বলা হয়ে থাকে।

গ্রাম্য বাজারের স্থান

গ্রাম্য বাজারের স্থান অনেক রকম হতে পারে, তবে একটি নির্দিষ্ট স্থানে এই বাজার বসে থাকে। তবে গ্রাম্য বাজার সাধারণত খোলা মাঠে বসে, কখনো এটি নদীর তীরে অথবা কোন গাছের নিচে, কখনো রাস্তার মোড়ে বসে থাকে। তবে সব সময় এটি সরকারি জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়।

বাজার পরিচালনা

গ্রাম্য বাজার পরিচালনা করা জন্য অনেক সময় পরিচালনা কমিটি থাকে। এখানে বাজারের আয়তন, পরিধি, ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিভিন্ন কর্ম দক্ষতার ভিত্তিতেও বাজার পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়ে থাকে। গ্রামে সাধারণত যারা মাতব্বর শ্রেণীর লোক থাকেন তারাই এই বাজার পরিচালনা কমিটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং বাজার পরিচালনা করেন। যখন কোন ব্যক্তি কোন দোকান করতে চান তখন এই পরিচালনা কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে করতে হয়।

গ্রাম্য বাজার বা হাটের সময়

গ্রাম্য বাজার বিভিন্ন রকম হয় এবং এটি দিনের যেকোনো একটি সময় বসতে পারে। যেমন কোথাও বাজার বসে সকালবেলায়, আবার কোথাও বসে বিকেল বেলায়। তবে সপ্তাহের দুই দিন নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে সে সকালে হোক আর বিকেলে হোক। তবে যেদিন বাজার বসে সেদিন কে বলা হয় হাটবার।

দোকান ঘরের প্রকারভেদ

গ্রাম্য বাজারে সাধারণত দুই ধরনের দোকান বসে থাকে। এখানে কিছু কিছু দোকান রয়েছে যে দোকানগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব সময় খোলা থাকে এবং মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় এবং এই ঘরগুলো স্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে ওঠে অর্থাৎ ব্যক্তি মালিকানা থাকে। আর এই দোকানগুলো সারা বছরই বাজারে থাকে। আবার অনেক দোকান রয়েছে যেগুলো স্থানীয় ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এগুলো শুধু সপ্তাহে যে দুইদিন নির্দিষ্ট সময় বাজার অনুষ্ঠিত হয় তখন তারা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করার জন্য আসে।

এখানে পাওয়া যায় শাকসবজি, মাছ, মাংস, ফল সহ বিভিন্ন প্রকার কাঁচামাল। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে দোকানগুলো বাজারে সারাক্ষণ স্থায়ী ভাবে থাকে সেখানে তেল, লবণ, চিনি, চাল, ডাল, গম, ঘি, পোশাক আশাক সহ সব ধরনের জিনিস বিক্রি করা হয়।

গ্রাম্য বাজারের বর্ণনা

গ্রাম্য বাজার আসলে মানুষের মিলন মেলা। এখানে সারাক্ষণ মানুষের কোলাহল লেগেই থাকে। তবে যে দুই দিন নির্দিষ্ট সময়ে বাজার অনুষ্ঠিত হয় সেই দুইদিন যেন আরো বেশি কোলাহলপূর্ণ হয়ে ওঠে কারণ এখানে অনেক মানুষ আসে যারা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাবেচা করে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, তরি তরকারি, লবণ, মাছ, ডিম, বিভিন্ন প্রকার সবজি ইত্যাদি। এছাড়াও অনেক বড় বাজার রয়েছে যেখানে গরু, ছাগল, শাড়ি, লুঙ্গি এককথায় মানুষের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস পাওয়া যায়।

গ্রাম্য বাজারের সুবিধা

গ্রাম্য বাজারের অনেক সুবিধা রয়েছে কারণ এটি গ্রামবাসীদের জন্য আর্থিক কেন্দ্র বটে। বর্তমান সময়ে গ্রাম্য বাজারগুলোতেও রয়েছে বিভিন্ন প্রকার কম্পিউটারের দোকান, এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা যা মানুষের প্রয়োজন মেটায়। এছাড়াও এখন রয়েছে গ্রাম্য পুলিশ যা মানুষের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। গ্রামের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল ও শাকসবজি স্বল্প সময়ে এবং অল্প খরচে বাজারে নিয়ে আসতে পারে কারণ এটি গ্রামবাসীদের আয় ব্যয় এবং লেনদেনের উৎস।

এক কথায় গ্রাম্য বাজার গ্রামের জনগণের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে সহায়তা করে থাকে। কারণ গ্রামবাসীরা তাদের কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য কিংবা হাতে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী ও এখানে বিক্রি করতে পারে। এছাড়াও তারা তাদের খামারে উৎপাদিত বিভিন্ন হাঁস-মুরগি, ডিম, গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে।

গ্রাম্য বাজারের অসুবিধা

গ্রাম্য বাজারের যেমন অনেক সুবিধার রয়েছে তেমনি এখানের অসুবিধাও রয়েছে। আর গ্রাম্য বাজারের প্রধান অসুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এখানে মালামালের নির্দিষ্ট কোন মূল্য থাকেনা যার কারণে ভোক্তাগণ তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পান না যার কারণে অনিশ্চিত মূল্যের হাট ডাকে পড়ে যেতে হয়। অধিকাংশ সময় এখানে ভোক্তাগণ্ড এখানে ঠকে থাকে। আবার গ্রাম্য বাজার অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরিষ্কার হয়ে থাকে।

তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য বাজার কমিটি একটি ঝাড়ুদার নিয়োগ দিয়ে থাকে। অনেক সময় এখানে মালামালের নির্দিষ্ট দাম না থাকার কারণে ঝগড়া মারামারি এবং বিবাদেরও সৃষ্টি হয়। এখানে অধিকাংশ সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে যার কারণে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগে থাকে।

উপসংহার

বাংলাদেশের শতকরা ৮০ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করে আর তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজ করে তাই গ্রাম্য বাজার কৃষকের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য গ্রামের বাজারে বেচাকেনা করে থাকেন। গ্রামের বাজার গুলো মানুষের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ তাই গ্রাম্য বাজারের চাকা অর্থনীতির ওপরই কৃষক নির্ভর করে থাকে। তবে বর্তমানে প্রযুক্তির এই যুগে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাজার হওয়ার কারণে এই বাজারের সংখ্যা লোপ পেয়েছে। তবে গ্রাম্য বাজারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।