গীবত হলো কারো অগোচরে তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলা। গীবতের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে
আমাদের গীবত কাকে বলে- গীবত কত প্রকার জানা প্রয়োজন। আমরা যদি না জানি গীবত কাকে
বলে – গীবত কত প্রকার তাহলে এই মহাপাপ থেকে বাঁচতে পারব না । তাই গীবত কাকে বলে –
গীবত কত প্রকার জানতে আমার পোস্টটি পড়ুন।
পরনিন্দা বা পরচর্চা যাকে গীবত বলে অভিহিত করা হয় তা আর সমাজের মানুষের কাছে
সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সামাজিক বৈঠক আজ সমাজে গীবত ছাড়া
অসম্পূর্ণ থেকে যায়। পবিত্র আল-কুরআনে গীবত কি আপন মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া সাথে
তুলনা করা হয়েছে। গীবত কাকে বলে – গীবত কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গীবত কাকে বলে – গীবত কত প্রকার
গীবত কাকে বলে
গীবত অর্থ অগোচরে তার দোষ ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা যা শুনলে তার মন খারাপ
হয়। বিনা প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তির দোষ অপরের নিকট উল্লেখ করা হলো গীবত।এই গীবতে
অপরের চারিত্রিক দোষ ত্রুটি, দৈহিক ত্রুটি, বংশগত ত্রুটি , বংশগত ত্রুটি
এবং কথা , পোশাক-পরিচ্ছদ, ধর্ম, কর্ম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা
শুনলে ব্যক্তি মনে কষ্ট পায়। রাসূল (সাঃ) গীবত সম্পর্কে বলেন , গীবত হল তোমার
ভাইয়ের এমন আচরণ বর্ণনা করা, যা সে খারাপ জানে।
গীবত সম্পর্কে ইবনুল আছির বলেন , গীবত হল কোন মানুষের এমন কিছু বিষয় যা তার
অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা হয়, যা সে অপছন্দ করে যদিও তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে।
সুতরাং কারো অনুপস্থিতিতে পরনিন্দা , পরচর্চা , সমালোচনা করা বা কুৎসা রটানো
ইত্যাদি হল গীবত।
হাদিস শরীফে গীবত সম্পর্কে উল্লেখ আছে, আন আবি মুসা (রা:) ও হযরত আবু মুসা
(রা:) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে কে
সর্বোত্তম? তিনি বললেন, যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে”
(বুখারী ও মুসলিম)।
গীবত কত প্রকার
মানুষের দৃষ্টির আড়ালে তাকে নিয়ে যে আলোচনা করা হয় বা সমালোচনা করা হয় তাকে
গীবত বলা হয়। যা শুনলে মানুষ মনে কষ্ট অনুভব করে এক কথায় তাকে গীবত বলে। গীবত
নানাভাবে আলোচিত হয়ে থাকে। তবে সাধারণত চার প্রকার গীবত দিয়ে আলোচনা করা হলো
–
আরো পড়ুনঃ হজের ফজিলত ও গুরুত্ব জেনে নিন
- বিশেষ কোন বদঅভ্যাস ও পাপাচারের গীবত।
- পোষাকের ব্যাপারে গীবত।
- শারীরিক দোষ ত্রুটির গীবত।
- বংশ নিয়ে গীবত।
গীবতের পরিচয় ও কুফল
পরনিন্দা বা পরচর্চা যাকে গীবত বলে অভিহিত করা হয় তা আর সমাজের মানুষের কাছে
সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সামাজিক বৈঠক আজ সমাজে গীবত ছাড়া
অসম্পূর্ণ থেকে যায়। পবিত্র আল-কুরআনে গীবত কি আপন মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া সাথে
তুলনা করা হয়েছে।
গীবত সম্পর্কে মহান তায়ালা আল্লাহ বলেন –
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয়
বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ
কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর।
আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (কোরআন ৪৯:১২)।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) গীবত সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ
করেছেন তাহলো –
ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রাঃ) এবং আবু হুরাইরাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস? তারা বললেন,
আল্লাহ ও তার রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, (গীবাত হলো) তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে
এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলো –
আরো পড়ুনঃ তাওয়াফ কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন
আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে বাস্তবিকই থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন?
তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে প্রকৃতই থেকে থাকে তাহলেই
তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ
আরোপ করলে। (মুসলিম)।
অতএব, এ কথা বলা যায় যে, গীবত হল কারো অনুপস্থিতিতে তার বিষয়ে আলোচনা করা।
অপর এক হাদীসে গীবত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন –
“তোমরা গীবত থেকে বেচে থেক, কেননা গীবত যিনা থেকেও মারাত্মক খারাপ কাজ । কেননা
মানুষ গুণাহ করে অতপর তওবা করে । আল্লাহ তাআলা তার তওবা কে মাফ করে দেন । কিন্তু
গীবতকারীকে আল্লাহ তাআলা ঐ সময় পর্যন্ত মাফ করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত গীবতকৃত
ব্যক্তি তাকে মাফ করবে না “।
রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, “তোমাদের কেউই কারও গীবত করবে না। গীবত
করলে তোমরা ধ্বংস হবে”। অপর এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেন, “তোমরা গীবত
থেকে বেঁচে থাকো। কারণ তাতে তিনটি ক্ষতি রয়েছে-
- আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হতে থাকে
- গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না ও
- গীবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না ।
কেউ আপনাকে কষ্ট দিয়েছে আপনি তা এমন ব্যক্তির সামনে উপস্থাপন করবেন সে এ
বিষয়ে দুজনের মধ্যে সমাধান করবে বা এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করবে তাহলে তা
গীবত হিসাবে পরিগণিত হবে না। অন্যথায় একে গীবত বলা হবে।
মহান আল্লাহ তাআলা সূরা আল হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে গীবত সম্পর্কে বলেন –
“আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ
করবে? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে”। (সূরা হুজুরাত,আয়াত-১২)।
আরো পড়ুনঃ হজ কাকে বলে – হজ কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন
কোন বিবেকবান মানুষই জ্ঞান থাকা অবস্থায় মৃত মানুষ তো দূরের কথা যেকোনো হালাল
মৃত পশুর গোশত খেতে পছন্দ করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক
অবস্থায় গীবতের মতো জঘন্য কাজ করে থাকে।কিছু মানুষ এমন আছে যে, সে নিজে
খারাপ, কিন্তু তার কারনে অন্যলোক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এমন লোকের অনুপস্থিতিতে তার
নিন্দা করা যাবে না।করলে গিবত হবে।
আমাদের সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা গীবত করে নিজেও ধ্বংস হচ্ছেন
এবং অন্যকেও ধ্বংস করছেন এমন ধ্বংসাত্মক লোকের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তার
চরিত্রের কথা মানুষকে জানানো গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
গীবত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না। ‘
(সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১২)। পবিত্র কোরআনের সূরা হুজুরাত এর ১২ নং আয়াতে আরো
উল্লেখ আছে, “হে মু’মিনরা! বহু ধারণা থেকে দূরে থাক; কেননা, কিছু ধারণা
পাপের কারন হয়ে থাকে। আর তোমরা কারো গোপন খোঁজ করো না, একে অপরের গীবত করো না।
তোমাদের মধ্যে কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়া পছন্দ কর? তোমরা অপছন্দই করবে।
আল্লাহকে ভয়ঙ্কর , আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু”।
সূরা বনী ইস্রাঈল এর ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তুমি এমন বিষয়ের অনুসরণ করো
না, যে বিষয়ে তোমার জানা নেই। কর্ণ, চক্ষু ও মনসহ প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের
ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে”। আল্লাহতা’য়ালা সূরা ক্বাফ্ এর- ১৮ নং
আয়াতে আরো বলেন, “সে যা কিছু উচ্চারণ করে, তার নিকটতম অপেক্ষামান প্রহরী তা
সংরক্ষণ করে থাকে”।
‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। অবশ্যই তারা
হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে।
গীবতের গুনাহ মাফের উপায়
গীবত এমন একটি কাজ যা মানুষ অনেক সময় নিজের অজান্তেই করে থাকে । তাই জীবনের মত
অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কঠিন কাজ। আল্লাহ তা’আলা যেনার মত কঠিন অপরাধ
ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু গীবতের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। গিবতের ভয়াবহতা এবং তা থেকে
মুক্তি লাভের উপায় হাদিসে এসেছে –
আরো পড়ুনঃ
রোজা কত প্রকার – রোজা সম্পর্কে হাদিস জেনে নিন
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার থেকেও গুরুতর অপরাধ। সাহাবারা
বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কীভাবে ব্যভিচার অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ হতে
পারে?’রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ব্যভিচার করার পর
মানুষ আল্লাহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন। কিন্তু গিবতকারী
ব্যক্তিকে যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি (যার গিবত করা হয়েছে) ক্ষমা না করে; ততোক্ষণ
পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না।’ (মিশকাত)।
এ হাদীস থেকে বোঝা যায় যে গীবত কত ভয়ঙ্কর অপরাধ কোন অবস্থাতেই গীবত করা ঠিক নয়
।
শেষ কথা
গীবত অর্থ অগোচরে তার দোষ ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা যা শুনলে তার মন খারাপ
হয়। বিনা প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তির দোষ অপরের নিকট উল্লেখ করা হলো গীবত।এই গীবতে
অপরের চারিত্রিক দোষ ত্রুটি, দৈহিক ত্রুটি, বংশগত ত্রুটি , বংশগত ত্রুটি
এবং কথা , পোশাক-পরিচ্ছদ, ধর্ম, কর্ম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা
শুনলে ব্যক্তি মনে কষ্ট পায়। রাসূল (সাঃ) গীবত সম্পর্কে বলেন , গীবত হল তোমার
ভাইয়ের এমন আচরণ বর্ণনা করা, যা সে খারাপ জানে।
গীবত এমন একটি কাজ যা মানুষ অনেক সময় নিজের অজান্তেই করে থাকে । তাই জীবনের মত
অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কঠিন কাজ। আল্লাহ তা’আলা যেনার মত কঠিন অপরাধ
ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু গীবতের অপরাধ ক্ষমা করবেন না।
Leave a comment