জন্মকথা : ইংরেজিতে যাকে ‘Lyric poetry’ বলা হয় বাংলাতে তাকে গীতি কবিতা রূপে নির্দেশ করা হয়েছে। ‘লিরিক’ শব্দটির উদ্ভব প্রাচীন বাদ্য যন্ত্র বীণা বা ‘Lyre’ থেকে। গ্রিস দেশে Lyre বা বীণা সহযোগে গায়ক তার ব্যক্তিগত অনুভবকে যখন গান করে গাইত তাকে বলা হতো ‘Lyric’ কখনো সে গান হতে সংঘবদ্ধ গায়কদের কোরাস; আনন্দ অথবা বেদনার আবেগমণ্ডিত গীতিরূপ। কালক্রমে সুরের আবরণ খসে পড়লে গীতি কবিতা হয়ে আত্মভাবনামূলক মন্ময় বাণীরূপ। প্রাচীন গ্রিসের মতো বাংলায় বৈষ্ণব ও শাক্ত পদাবলীর পদগুলি তো গান হিসেবেই পরিবেশিত হতো এবং এখনো হয়। আধুনিক গীতি কবিতায় সুর করে গাওয়ার রেওয়াজ না থাকলেও তার আত্মমগ্ন ভাবোচ্ছাসে সংগীতময়তা বর্তমান।” তবে মনে রাখা আবশ্যক, হৃদয়োস্থিত ভাবের প্রকাশ তথা ব্যক্তিগত আবেগের অভিব্যক্তি মাত্রেই গীতি কবিতা নয়। সেই ব্যক্তিক ভাবাবেগ কে এক বিশ্বাসযোগ্য ও অবশ্যম্ভাবী বাচনিকরূপ ধারণ করতে হবে। ভাবগত মন্ময়তাকে অর্জন করতে হবে ভাষাগত তন্ময়তা।
সংজ্ঞাঃ একদা ইংরাজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ ভালো কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জানালেন— “all good poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings.” অর্থাৎ ব্যক্তিগত কল্পনার স্বতোৎসারিত ভাবচ্ছ্বাসই গীতিকবিতা, গীতি কবিতার মধ্যে রয়েছে যে রোমান্টিকতা তাকে স্বতোৎসারিতভাবে প্রকাশ ঘটাতে হবে। এছাড়া, সমালোচক হাডসন বলেছেন In Lyrical poetry…….. the poet is principally occupied with himself.” আবার ড্রিঙ্ক ওয়াটার (Drinkwater) বলেছেন- “The characteristic of the lyric is that it is the product of the pure poetic energy unassociated with other energies.” আসলে কবির ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশক বলে গীতি কবিতা সাধারণত দীর্ঘাকৃতির হয় না—কারণ, একটি বিশেষ, মুহূর্তের ভাব কেন্দ্রিক অনুভূতি মানুষের অন্তরে, দীর্ঘকাল সমান ভাবে স্থায়ী হতে পারে না। শুধু তাই নয় গীতি কবিতায় কবির অন্তরের গভীরতম তলদেশকেও দেখা যায়।”
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গীতিকবিতা সম্বন্ধে বলেছেন—“গীতের যে উদ্দেশ্য, যে কাব্যের সেই উদ্দেশ্য, তাহাই গীতিকাব্য। বক্তার ভাবোচ্ছাসের পরিস্ফুটতামাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য।” আর বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতিকবিতার ভাব সম্পর্কে অভিমত পোষণ করলেন—’যাহাকে আমরা গীতিকাব্য বলিয়া থাকি অর্থাৎ যাহা একটুখানির মধ্যে একটি মাত্র ভাবের বিকাশ, ওই যেমন বিদ্যাপতির–ভরা বাদর মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর—সেও আমাদের মনের বহু দিনের অব্যক্ত ভাবের একটি কোনো সুযোগ আশ্রয় করিয়া ফুটিয়া ওঠা।” সব মিলিয়ে, গীতি কবিতা সংজ্ঞা সম্পর্কে এটুকু মন্তব্য করা যেতে পারে—“যে কবিতায় কবি তার একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতিকে এক সাবলীল ও আন্তরিক গীতিপ্রবণ ভাষায় ব্যক্ত করেন, তাই মন্ময় কবিতা বা গীতি কবিতা, অর্থাৎ, কবির প্রগার ব্যক্তিক উপলব্ধির ধারক ও বাহক এই গীতিকবিতা বা Lyric”
বৈশিষ্ট্য : গীতিকবিতার উদ্ভব সংজ্ঞা ও স্বরূপের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে এর কয়েকটি লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যকে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে।
(১) কবি হৃদয়ের একান্ত ব্যক্তিগত ভাবাবেগের প্রকাশ হল গীতিকবিতা।
(২) গীতিকবিতার একক আত্মমগ্ন অনুভবের তীব্রতা সংবেদনশীল ভাষা ও সুরের অন্তলীন স্পর্শ পাঠক চিত্তকে অভিভূত করে। অর্থাৎ কবি ও পাঠকের নিবিড় রস সংযোগই গীতি কবিতার প্রধান আকর্ষণ।
(৩) কবিচিত্তের ব্যক্তিগত অনুভূতি—সংবেদনের মন্ময়তা সত্ত্বেও গীতি কবিতার এক সর্বজনীন আবেদন ও মূল্য থাকে।
(৪) গীতিকবিতা যতখানি আবেগ অনুভূতিমূলক, সাধারণভাবে ততখানি চিন্তামূলক নয়।
(৫) সংহত ও সংক্ষিপ্ত অবয়ব বিন্যাসে সার্থক গীতিকবিতা শব্দ ছন্দ-সুর-তাল-ব্যঞ্জনায় এক সুসমন্বিত শিল্পরূপ।
(৬) এছাড়া সাবলীল গতি, সংগীত, মুখরতা, নিটোল স্বল্পাকৃতির অবয়ব, গভীর অনুভূতি আবেগ ব্যাকুলতা প্রভৃতি গীতিকবিতার অন্যতম লক্ষণ।
সব মিলিয়ে বলা যায়—সার্থক গীতি কবিতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে চারটি বৈশিষ্ট্যের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হয়।
(ক) ব্যক্তিগত লক্ষণ : সাধারণতঃ কোনও তত্ত্ব বা দর্শন প্রকাশ না করে এই কবিতা কবির ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতিই প্রকাশ করবে।
(খ) আত্মময়তা : ব্যক্তিগত অনুভূতির তীব্রতার জন্যই এমন এক আত্মময়তা ফুটে ওঠে যা সংবেদনশীল পাঠকের মনকে স্পর্শ করবেই।
(গ) শাশ্বত ও সার্বজনীন আবেদন : যতই ব্যক্তিগত আকৃতি হোক এবং তাতে আত্মময়তা যতই তীব্র হোক, প্রকৃত গীতিকবিতার মধ্যে এক শ্বাশত ও সর্বজনীন আবেদন থাকবেই।
(ঘ) ব্যঞ্জনাময় সংহতি : গীতিকবিতার ভাষা ব্যঞ্জনাময় হবেই কিন্তু তার সংযমত্ত হবে লক্ষণীয়। অনুভূতির এই সংহত প্রকাশ ভাবকে আরও গাঢ় করে তোলে।
দৃষ্টাত্ত : সমগ্র বিশ্ব কাব্য সাহিত্যের অঙ্গন জুড়ে গীতিকবিতার অবাধ পদচারণা। বিষয়ানুক্রমিকভাবে গীতিকবিতাকে যে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় তার প্রত্যেকটি বিভাগে বিশ্বের নানা ভাষায় রচিত গীতি কবিতার ভুরি ভুরি নিদর্শন মেলে। যেমন—
(১) প্রেমমূলক: মূলত ‘প্রেমই গীতিকবিতার মুখ্য উপজীব্য। দান্তে-পেত্রার্ক-স্পেনসার শেক্সপিয়র থেকে একালের বিভিন্ন কবির মধ্যে প্রেমমূলক গীতি কবিতার রচনার বিশেষ প্রবণতা অনুভূতি হয়। কারণ, মানবিক অনুভূতি সমূহের মধ্যে ‘প্রেমই সর্বাপেক্ষা প্রবল ও বিচিত্র গতি। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রেমের আধ্যাত্ম ব্যঞ্জনা, কবি গানের প্রেমের স্থূল ইতর প্রকাশ, আর আধুনিক বাংলা গীতি কবিতার রূপ-বিহ্বলতা ও রহস্যময়তা, সব মিলে প্রেম বিষয়ক গীতিকবিতার যে ঐশ্বর্য তা’ প্রকৃতই অনবদ্য। জন ডানের ‘The Extasie’, রবার্ট ব্রাউনিয়ের ‘The Last Ride Together’, গোবিন্দ চন্দ্র দাসের ‘রমণীয় মন’, দেবেন্দ্রনাথ সেনের—‘দাও দাও একটি চুম্বন’, রবীন্দ্রনাথের—‘গুপ্ত প্রেম’, জীবনানন্দ দাশের—‘বনলতা সেন,’ এই শ্রেণিভুক্ত অসংখ্য কবিকীর্তির কয়েকটি প্রোজ্জ্বল নিদর্শন।
(২) দেশপ্রেম বিষয়ক : স্বদেশ প্রেম তথা দেশাত্মবোধ কবি মানসে উদ্দীপনা সঞ্চার করে এবং তা থেকে জন্ম হয় স্বদেশ প্রীতি বিষয় কবিতা ও গান। মাতৃভূমির প্রতি অনুরাগ ও শ্রদ্ধা, দেশের অতীত বীরগাথার প্রতি আকর্ষণ বিদেশি শাসকদের সম্পর্কে ঘৃণা ও ক্ষোভ জাতীয় ঐক্যের মন্ত্র ইত্যাদি এইসব কবিতা ও গানের প্রধান বিষয় বা ভাব বস্তু। যেমন— মধুসূদনের ‘বঙ্গভূমির প্রতি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের—’স্বাধীনতা সঙ্গীত’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম্’, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চল রে চল্ সবে ভারত সন্তান’, দ্বিজেন্দ্রলালের— ‘আমার দেশ’, অক্ষয় কুমার বড়ালের ‘বঙ্গভূমি’, অতুলপ্রসাদের ‘ভারত লক্ষ্মী’। সরলাদেবী চৌধুরাণীর ‘নমো হিন্দুস্থান’, রবীন্দ্রনাথের ‘ভারততীর্থ’ ছাড়াও চারণ কবি মুকুন্দ দাস রচিত স্বদেশ প্রেমের কবিতাগুলি এই শ্রেণির উল্লেখযোগ্য রচনা।
(৩) প্রকৃতি-প্রেম বিষয়ক : নিসর্গ প্রকৃতির রূপ-রস-স্পর্শ বর্ণ ঘ্রাণের নিবিড়, ভাবনিষ্ঠ চিত্রণ মানব ও প্রকৃতির দূরত্বকে অতিক্রম করার ব্যাকুলতা, প্রকৃতির রহস্য ও সৌন্দর্য্যোপভোগের বাসনা, প্রকৃতিতে নীতি ও তত্ত্বের আরোপ ইত্যাদি বিষয়গুলি পাশ্চাত্য তথা বাংলা প্রকৃতি প্রেম বিষয়ক গীতিকবিতা গুলিতে নিত্যনূতন ব্যঞ্জনায় প্রকাশিত হয়েছে। যেমন—ওয়ার্ডসওয়ার্থের— ‘Lucy’-কে নিয়ে লেখা হৃদয়স্পর্শী লিরিক গুচ্ছ, শেলীর “To a skylark’ কিংবা ‘Ode to the west wind-এর মতো রূপক ও দর্শনভাবনা ঋদ্ধ স্তোত্র কবিতা যুগল, কিসের ‘Ode to a Nightingale’ ও ‘To Autumn’. আর বাংলাতে— বিহারীলালের ‘নিসর্গ সন্দর্শন’, রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল, ও ‘বসুন্ধরা’, মোহিতলাল মজুমদারের ‘কালবৈশাখী’, প্রভৃতি আরও অনেক রচনা প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা এই সমৃদ্ধ ও রসঘন ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে বিদ্যাপতির ‘এ সখি আমারি দুঃখের নাহি ওর’ কবিতাটি। হৃদয়ের সঠিক অবস্থা চিত্রিত করার জন্যই চার পাশে প্রমত্ত আনন্দের চিত্র কবি এঁকেছেন—ঘন ঘন বজ্রপাতের শব্দে আনন্দে নেচে উঠেছে ময়ূর, ধারাপাতের আনন্দে গেয়ে উঠেছে দাদুরী, ডাকছে ডাহুকি। এ সমস্ত দেখে রাধার বুক যেন ফেটে যাচ্ছে। বিদ্যাপতি দেখেছেন ঘোর যামিনীর তিমির অন্ধকারে দুর্যোগ কালো মেঘের ওপর বিদ্যুতের পঙক্তি অস্থির হয়ে ছুটোছুটি করছে। হতে পারে ঘন নৈরাশ্যের অন্ধকারের মধ্যে চকিত আশার দীপ্তিকেই কবি উপমিত করতে চেয়েছেন, কিন্তু কী অব্যর্থ চিত্রকল্প। সেই ছবি মনে করেই বোধ করি একালের বিশ্বকবি বলে উঠেছিলেন—
“তোমার শ্যামল শোভার বুকে বিদ্যুতেরই জ্বালা।”
আসলে, মধ্য যুগের কবি বিদ্যাপতি ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে রাধার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন, তাই এ কবিতায় তার অনুভূতি ও তার ব্যঞ্জনার মধ্যে রাধা কোনও ব্যবধান নয়, এক অলৌকিক সেতু। যে প্রকৃতিকে রাধা দেখেছে কৃষ্ণকে স্মরণ করতে গিয়ে কবির কাছে সেই কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকৃতিই হয়ে গেছে কৃষ্ণ। আধুনিক কবির কাছে ধর্মের এই উপলক্ষ না থাকলেও যখন কবি গেয়ে ওঠেন—
“এই শ্রাবণের বুকের ভেতর আগুন আছে।
সেই আগুনের কালোরূপ যে আমার চোখের পরে নাচে।।”
তখন একটি কৃষ্ণমূর্তি কি ঝলসে ওঠে না আমাদের মনের মধ্যে। এখানেই কবি বিদ্যাপতি কবিতার উপলক্ষকে অতিক্রম করে যান, সার্থক গীতি কবিতার স্বাদ সঞ্চারিত করতে পারেন তার মাথুর পর্যায়ের ধর্মীয় কবিতায়।
এবারে দেখা যাক সমালোচ্য বৈষ্ণব পদটি কেন সার্থক প্রাচীন গীতি কবিতার উদাহরণ? গীতি কবিতার বৈশিষ্ট্য বিচারে মোট চারটি প্রধান লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, যথা—ব্যক্তিগত লক্ষণ, আত্মময়তা, শাশ্বত ও সর্বজনীন আবেদন এবং ব্যঞ্জনাময় সংহতি। এক্ষেত্রে প্রথমে যদি ব্যক্তিগত লক্ষণের কথা ধরা হয়, তাহলে বলতে হবে—উক্ত বৈষ্ণব পদটি যতই ব্যক্তিগত আবেগে মথিত বলে মনে হোক, আসলে এ আবেগ কবির নয়, রাধার, সেকথা কবি নিজেই ব্যক্ত করেছেন। আসলে কোনও ধর্মীয় কবিতাই কবির ব্যক্তিগত আকুলতা হতে পারে না, বৈষ্ণব পদাবলীও তা নয়, বৈষ্ণব কবিতা একটি ধর্ম সম্প্রদায়ের কবিতা, একটি গোষ্ঠীর কবিতা, তবুও বলতে হয় বিদ্যাপতি কিন্তু চৈতন্যোত্তর যুগের কবির মতো গোষ্ঠীময়তায় ভুগতেন না, ব্যক্তিগত ভাবে রাধার অনুভূতি তিনি কখনো সখনো প্রকাশ করেছেন। তাই বয়ঃসন্ধির পদে তাঁর স্বাতন্ত্র্য যেমন আমরা দেখেছি তেমনি এই পদেও দেখি প্রেমের সঙ্গেই তিনি কামের কথাও বলেছেন—“কাম দারুণ/সঘনে খর শর হস্তিয়া।।”
‘আত্মময়তা’ গীতি কবিতার দ্বিতীয় লক্ষণ, বৈষ্ণবকবিতায় রাধার অহং অথবা এই আত্মময়তা প্রকাশিত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে–বর্ষার তুমুল বর্ষণের প্রেক্ষিতে রাধার বিরহ আকুলতার যে চিত্র কবি বর্ণনা করেছেন, আত্মময় অনুভূতি না থাকলে তা করা যায় না। রাধা এবং কবি একাত্ম না হলে এ অনুভূতি আসতেই পারে না, এবং সেই কারণে এ কবিতায় পরোক্ষ যে আত্মময়তা ফুটে উঠেছে তাকে অস্বীকার করলে কবিতাটির ওপর অবিচার করা হবে।
‘শাশ্বত ও সর্বজনীন আবেদন’ যে ‘এ সখী হামারি’ কবিতার মূলীভূত বিষয় সেকথা বাড়িয়ে বলার দরকার নেই। এমন একটি অনুভূতিগার কবিতা কেবল বৈষ্ণব রসজ্ঞই বুঝতে পারবেন এমন দাবী করা অসঙ্গত। আজকের পাঠকের ধর্ম সাহিত্য রস আস্বাদনের কোনো শর্তই নয়, অথচ এই পদের আস্বাদন তিনি সহজেই করতে পারেন। করতে পারেন যে, তার সব চেয়ে বড়ো প্রমাণ এতদিন পরেও ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবে কবিতাটির তীব্র আকর্ষণ। কালের বিচারে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে যে এর আবেদন কালোত্তীর্ণ এবং ধর্ম নিরপেক্ষ।
সর্বশেষে বলা যায়, মূলত সংহত প্রকাশভঙ্গীর জন্যই বিদ্যাপতি খ্যাতিমান ছিলেন, তাছাড়া বৈষ্ণব পদের অতি স্বল্প পরিসরে বক্তব্য বিশদ করা সম্ভবও ছিল না, অনুভূতির যে রসঘন প্রকাশ এখানে ঘটেছে তা এখনো আমাদের আদর্শ স্বরূপ।
Leave a comment