‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যে ভক্তিমূলক গান বা কবিতার পরিচয় পাওয়া যায় আলোচনা কর।

উত্তর: খেয়া’র পরের গ্রন্থিত কাব্যই ‘গীতাঞ্জলি’ কিন্তু এর রচনা ও প্রকাশ ঘটে অনেক পরে। গ্রন্থাকারে গীতাঞ্জলির প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৩১৭ বাংলা সালে, আর কবিতা রচনা শুরু হয় ১৩১৬-র আষাঢ়ে। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, একাধিক ঝাঁকে হলেও মাত্র সাড়ে দশ মাস সময়ের সীমায় গীতাঞ্জলির ১৩৭টি কবিতা বা গান রচিত হয়েছিল, যথার্থ রচনার দিন হচ্ছে ৯০ দিন। একটা গভীর অনুভবের দোলা কবির মনে এসে সেদিন লেগেছিল যা ঘরে বাইরের অজস্র কর্মসাধনার মধ্যে নিত্যদিনের ছুটে চলার মধ্যেও একাধিক সংগীতকে উৎসারিত করেছে প্রায় প্রতিদিন। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্য রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কার লাভের অধিকারী করেছিল। কিন্তু এটি তার শ্রেষ্ঠ কাব্যসমূহের মধ্যেও একটি নয়। কেউ কেউ একে রবীন্দ্রকাব্য প্রবাহের অনুল্লেখ্য প্রবাহ বলেও মনে করেছেন। এ প্রসঙ্গে স্মরণ রাখতে হবে, নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’ যাতে অন্যান্যের মধ্যে নৈবেদ্যর কবিতা ছিল বেশকিছু। তাছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি প্রতীচ্য পৃথিবী পুরস্কার দিয়েছেন বিশুদ্ধ কবিকর্মকে নয়, সেই মহৎ বিশ্বাস ও তপস্যাকে যাকে আশ্রয় করে তারা সেদিনকার মৃত্যু তরুণের ভরসা ও সংকেত আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন।

সেই নতুন আশার আশ্রয় স্বয়ং কবিকে একদিন আবিষ্কার করতে হয়েছিল অপার দুঃখ শোকের ঝড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ‘বলাকা’ কাব্যের ‘শঙ্খ’ কবিতার আলোচনা প্রসঙ্গে কবি ‘গীতাঞ্জলি’ যুগের পটভূমি ব্যাখ্যা করে পরে বলেছিলেন, “জীবনে এমন একদিন এসেছিল, যখন বেদনার আঘাতে মনে হয়েছিল জীবনের কাজ বুঝি সব সারা হয়ে গেছে, এখন ভজন পূজন সাধনা-আরাধনার মধ্যে জীবনের শান্তি খুঁজতে হবে।

গীতাঞ্জলি-গীতিমাল্য- গীতালি পর্যন্ত কবি চেতনার এ ভজন-পূজন, সাধন-আরাধনার যুগ। যে বেদনাকে আশ্রয় করে এ ধ্যানলোকের পরস্পরে কবি মনের যাত্রা শুরু হয়েছিল গোপনে গোপনে তার প্রথম মানস সঞ্চার যুগে কবি প্রিয়ার মৃত্যুতে। অজানার সেই গোপন পদক্ষেপ স্পষ্ট হয়ে এল নবতর আঘাতের পর আঘাতে। মার মৃত্যুর নয় মাস পরে কন্যা রেণুকাও কবিকে ছেড়ে গেল ইহজন্মের বন্ধন ছিঁড়ে। তার চার বছর পর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রের আকস্মিক মৃত্যু ঘটল বন্ধু গৃহে। বিদ্যালয়ের ছুটিতে শমী বেড়াতে গিয়েছিলেন বন্ধুর বাড়িতে, হঠাৎ তার কলেরার খবর পেয়ে কবি ছুটে যান। কিন্তু ১৩০৯ সালে যেদিন মৃণালিনী দেবীর দেহান্ত পেয়েছিল, ১৩১৪ সালের ঠিক সেই দিন মৃত্যু হলো শমীন্দ্রের। দূর থেকে অবচেতনার মধ্যে যার ধীর পদক্ষেপ চলছিল বহুদিন ধরে। এ শোকের আঘাতে সেই রহস্যময় উপলব্ধির মুখোমুখি এসে দাঁড়াল কবি প্রাণ। পুত্রের মৃত্যুর দিন কয়েক পরে চিঠিতে লিখছেন সমস্ত “আঘাত কাটিয়ে জীবনযাত্রা যেমন চলছিল তেমনই চলছে, হয়তো একটা পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু সে পরিবর্তন উপর থেকে দেখা যায় না। সে পরিবর্তন নিজের চোখেও হয়তো সম্পূর্ণভাবে লক্ষ্যগোচর হতে পারে না।”

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।