প্রশ্নঃ গবেষণার কোশল হিসেবে ফোকাস দলের বৈশিষ্ট্য ও ফোকাস দল আলােচনার ধাপসমূহ আলােচনা কর।

অথবা, গবেষণার কৌশল হিসেবে ফোকাস দলের বৈশিষ্ট্য ও ফোকাস দল আলােচনার ধাপসমূহ বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ গবেষণা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যার সাহায্যে বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্য আহরণ করা যায়, তার বিচার বিশ্লেষণ করা যায় এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। পদ্ধতি সমস্যা বিশ্লেষণের হাতিয়ার বিশেষ। সমস্যার কার্যকারণ প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ও বিশ্লেষণমূলক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতির সাথে নতুন একটি পদ্ধতির সংযােগ হয়েছে। যাকে বলা হয় ফোকাস দল আলােচনা বা FGD-Focus Group Discussion. বস্তৃত Qualitative analysis of social data-এর ক্ষেত্রে PRA তথা Participatory Rural/Research Appraisal একটি গুরুত্বপূর্ণ Method. আর এই পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে FGD বা Focus Group discussion.

ফোকাস দলের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আমরা ফোকাস দল আলােচনায় দেখতে পাই। নিম্নে সেগুলাে তুলে ধরা হলাে-

(১) দলের আলােচনা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে আবর্তিত হয়।

(২) ফোকাস দল সাধারণত ৬ থেকে ১৬ জন নিয়ে গঠিত হয়।

(৩) একজনের মধ্যস্থতায় সদস্যদের মধ্যে আলােচনা আবর্তিত হয়।

(৪) সমধর্মী এবং সকল শ্রেণির নারী-পুরুষ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সকলের অংশগ্রহণ থাকে।

(৫) সকলের মতামতের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

(৬) যেকোনাে বিষয়ে বিভিন্ন জনের মতামত পাওয়া যায়।

(৭) গবেষক আলােচনাকে তার গবেষণার সুবিধার জন্য গভীরে নিয়ে যেতে সহায়তা প্রদান করে থাকেন।

ফোকাস দল আলােচনার ধাপসমূহঃ প্রত্যেক পদ্ধতি যেমন কয়েকটি ধাপের মধ্যেদিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়, তেমনি ফোকাস দল আলােচনার ক্ষেত্রেও কয়েকটি ধাপ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যথা-

(১) লক্ষ্য নির্ধারণ

(২) কর্মী নিয়ােগ ও প্রশিক্ষণ

(৩) নির্দেশাবলি প্রণয়ন

(৪) দল গঠন

(৫) আলােচনার স্থান ও সময় নির্ধারণ করার সাথে সাথে আমন্ত্রণপত্র প্রস্তুতকরণ

(৬) আলােচনার অধিবেশন পরিচালনা

(৭) প্রাপ্ত তথ্যের মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাকরণ করতে হবে।

এই ধাপগুলাে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে আলােচনা করা হলাে –

(১) লক্ষ্য নির্ধারণঃ আলােচনাটি যেহেতু লক্ষ্যকে ঘিরেই আবর্তিত হয় সেহেতু ফোকাস দল আলােচনায় প্রথমেই একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিতে হবে। আর লক্ষ্য নির্ধারণের কাজটি মূলত গবেষক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে।

(২) কর্মী নিয়ােগ ও প্রশিক্ষণঃ যেকোনাে কাজে সাফল্য পেতে হলে বিশেষ করে গবেষণার ক্ষেত্রে কর্মী প্রশিক্ষণের কোনাে বিকল্প নেই। উপযুক্ত তথ্য পেতে হলে অবশ্যই উন্নত জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী নিয়ােগ প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া মধ্যস্থতাকারীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কৌশল, মনােভাব, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিকল্প ফোকাস দল আলােচনা কোথাও হতে পারে না। তাই গবেষককে কর্মী নিয়ােগের ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে।

(৩) নির্দেশাবলি প্রণয়নঃ ফোকাস দল আলােচনা পরিচালনা করার জন্য আগে থেকেই গবেষণার লক্ষ্য অর্জনের সুবিধার্থে একটি খসড়া দিকনির্দেশনা তৈরি করে নিতে হবে। কেননা সঠিক দিকনির্দেশনা ব্যতীত কোন গবেষণা কার্যকর হতে পারে না।

(৪) দল গঠনঃ দল গঠনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গবেষণায় আমরা কি অর্জন করতে চাচ্ছি তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের দল গঠন সম্পন্ন করতে হবে। লক্ষ্যভুক্ত জনগােষ্ঠীর মধ্য থেকে মূলত উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা অসম্ভাবনা নির্ভর নমুনায়ণের সাহায্যে গবেষক দুই থেকে বারজনের একটি দল নির্বাচন করবে।

(৫) আলােচনার অধিবেশন পরিচালনাঃ প্রথমে মধ্যস্থতাকারি আলােচকদের সাথে পরিচিত হবেন এবং তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করবেন। আলােচনার প্রথমেই হালকা আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তারপর হালকা বিষয় দিয়ে আলােচনা শুরু করে আস্তে আস্তে আলােচনার গভীরে নিয়ে যেতে হবে। মধ্যস্থতাকারি আলােচনাকে উদ্দেশ্যের দিকে নিয়ে যেতে সহযােগিতা প্রদান করা কিন্তু কোনাে মতামত প্রদান করবে না।

(৬) আলােচনার স্থান ও সময় নির্ধারণ করার সাথে সাথে আমন্ত্রণপত্র প্রস্তুতকরণঃ অধিবেশনটি এ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তার জন্য সময় ও স্থান নির্ধারণ করতে হবে। সেই সাথে আলােচনায় আসার জন্য আমন্ত্রণপত্র বিলি করতে হবে। আমন্ত্রণপত্র প্রণয়নে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলাে আলােচনার বিষয়টি এখানে তুলে ধরতে হবে।

(৭) প্রাপ্ত তথ্যের মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাকরণ করতে হবেঃ আলােচনার শেষের দিকে অনুসন্ধানকারী কিছু তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে থাকেন। যথাযথ মূল্যায়ণের পর আলােচকদের মতামত পেশ করা হয়। এগুলাে গবেষণার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গুণগত প্রক্রিয়ায় প্রদান করা হয়ে থাকে। অবশেষে প্রতিবেদনের চূড়ান্ত রূপ পেশ করা হয়ে থাকে।

পরিশেষঃ পরিশেষ বলা যায় যে,কোনাে পদ্ধতিই সমালােচনা বা ত্রুটিমুক্ত নয়। সেক্ষেত্রে ফোকাস দল আলােচনাও ব্যতিক্রম নয়। FGD তে যে অসুবিধাগুলাে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে তাকে অতীত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। অতীতে যে সমস্যাগুলাের সম্মুখীন করা হয়েছে তার আলােকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে FGD অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে। ফোকাস দল আলােচনা যেকোনাে গবেষণার মূল ভিত্তি রচনা করতে পারে। নীতি প্রণয়নকারিদের নীতি প্রণয়নেও সহযােগিতা প্রদান করে থাকে। সর্বোপরি এই পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষক তার প্রয়ােজনীয় নােটগুলাে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারে। যার ফলে ফোকাস দল আলােচনা পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করছে।