“আমার বয়স যখন ১৪ বছর, তখন আমার গণিতের শিক্ষক বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন যে আমি গণিতে কাঁচা এবং আমার গণিত পড়ার কোন মানে নেই।”
বিবিসির কাছে নিজের এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ড. লিবার্টি ভিটার্ট। এই নারী যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি (ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি) থেকে গণিতের ওপর পিএইডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন।
বর্তমানে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
গণিতের প্রতি এই ভয়ে আক্রান্ত সারাবিশ্বের অসংখ্য মানুষ। কিন্তু দেখা গিয়েছে এই ভয়কে জয় করেই গণিতের সর্বোচ্চ পদক ফিল্ডস মেডেল অর্জনের উদাহরণও কম নেই।
ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এ্যাসেসমেন্ট, ৩৪টি দেশে জরিপ চালিয়ে দেখেছে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৩১% কিশোর কিশোরী গণিত নিয়ে ভীষণ উদ্বেগে থাকে এবং ৬০% গণিতের ক্লাস করতেই উদ্বেগে ভোগে।সাধারণত শিশু ও মেয়েদের মধ্যে গণিত নিয়ে ভীতির হার তুলনামূলক বেশি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রাপ্তবয়স্করাও এই গণিত ভীতি নিয়ে জর্জরিত।
কিন্তু এই ভীতির কারণ কী, আর এর সমাধানই বা কী?
ম্যাথমেটিকস অ্যাংজাইটি বা ম্যাথেফোবিয়া
গণিতের প্রতি ভয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ম্যাথম্যাটিকস এনজাইটি বা ম্যাথেফোবিয়া।গণিতবিদ মেরি ডি লেলিস গফ ১৯৫৩ সালে ‘ম্যাথেফোবিয়া’ শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন।তিনি তার বহু শিক্ষার্থীকে গণিতের সমস্যা সমাধানে বেশ বেগ পেতে দেখেছেন। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই ম্যাথেফোবিয়ার বিষয়টি সামনে আনেন তিনি।
মেরি ডি লেলিস গফের মতে ‘ম্যাথেফোবিয়া’ এক ধরণের “মানসিক সমস্যা” – যার উপস্থিতি সনাক্ত হওয়ার আগেই মারাত্মক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা একে “আতঙ্ক, অসহায়ত্ব, পক্ষাঘাত এবং মানসিক অব্যবস্থাপনা” হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।গাণিতিক সমস্যা সমাধানের করতে গিয়ে অনেকের মধ্যে এসব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক কথায় সবই হল গণিত করার ভয়
যারা গণিত নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালে নামের অংশটি কম সক্রিয় থাকে।
ম্যাথফোবিয়া কেন হয়?
ড. ভিটার্ট বলেছেন, “অংকের ফলাফল, হয় ঠিক হবে, নাহলে ভুল। এখানে অন্য কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর সুযোগ নেই। এ কারণে অংক করার আগেই মানুষ সেটা ভুল হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন।”
বিবিসি ফিউচারের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গণিতে ভীতি থাকা এই ব্যক্তিদের গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে দিলে তাদের শরীরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরিত হয়। এই হরমোন আমাদের উত্তেজিত ও উদ্বিগ্ন করে তোলে।সেইসাথে এতে মস্তিষ্কের ‘পেইন ম্যাট্রিক্স’ সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত মানুষ আঘাত পেলে মস্তিষ্কের এই অংশটি কার্যকর হয়।
আমেরিকায় ২০১২ সালে সাত থেকে নয় বছর বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের স্ক্যানে দেখা গেছে যে যারা গণিত নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালে নামের অংশটি কম সক্রিয় থাকে।
মানুষের চোখের ঠিক পেছনে থাকা এই অংশটিকে ওয়ার্কিং মেমোরি বা ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিও বলা হয়।সাধারণত মানুষ কোন বিপদে পড়লে বা দুশ্চিন্তা করলে এই অংশটি তা মোকাবিলায় কাজ করে।শিশুদের গবেষণা জার্নাল ফ্রন্টিয়ার ফর ইয়াং মাইন্ডসের মতে, ওয়ার্কিং মেমোরি মানুষের স্মৃতির এমন একটি অংশ যা আমাদের একই সময়ে বেশ কয়েকটি তথ্য মনে রাখতে, সেগুলো প্রক্রিয়া করতে এবং চিন্তা করতে সাহায্য করে।উদাহরণস্বরূপ, যেকোনো গণিতের সমস্যা সমাধানে অবশ্যই মনের মধ্যে সমস্ত সংখ্যা ধরে রাখতে হবে, সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় কাজগুলো প্রক্রিয়া করতে হবে এবং উত্তরটি বের করতে হবে।গবেষকরা মনে করেন যে, মানুষ যখন উদ্বিগ্ন বোধ করে, তখন তার মস্তিষ্কেরওয়ার্কিং মেমোরির বড় অংশ দখল করে নেয় উদ্বিগ্নতা।তাই গণিতের সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের ওয়ার্কিং মেমোরি সেভাবে কাজ করে না।
নিউইয়র্কের বার্নার্ড কলেজের সভাপতি এবং কগনিটিভ সায়েন্টিস্ট সিয়ান বেইলক বলেছেন, যেহেতু আমাদের মনসংযোগ করার ক্ষমতা সীমিত, “যখন আমাদের মস্তিষ্ক একসাথে একাধিক কাজ করে তখন আমাদের মনোযোগ বিভক্ত হয়ে যায়। তাই আপনি যদি গণিত নিয়ে উদ্বিগ্ন হন তখন আপনার মাথায় একটা কথাই ঘুরতে থাকে, আপনি পারবেন না। যা গণিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা।”আবার অনেকে জিনগত কারণেও উদ্বেগে ভুগতে পারেন।গণিতে ভয়ের সূত্রপাত সাধারণত স্কুলে প্রবেশের পর থেকেই হয়ে থাকে।অনেক সময় শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের নিজেদের উদ্বেগ ছোটদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেন। বেশিরভাগ সময় তারা গণিতকে শিশুদের সামনে বিভীষিকার উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন।এ কারণে শিশুদের মনে সেই নেতিবাচক ধারণা গেঁথে যায়। এবং গণিতের প্রতি তাদের এমন ভয় থাকে বলেই গাণিতিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও কমে যায়।গণিত ভীতির কারণে ওয়ার্কিং মেমোরি গণিত নিয়ে নেতিবাচক সব চিন্তা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সময় সব তালগোল পাকিয়ে যায়।বিবিসি ফিউচার বলছে, শিশুরা যখন দেখে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অংক নিয়ে উদ্বিগ্ন – তখন তারাও ভয় পেতে শুরু করে। ফলে যেসব শিক্ষক অংক করাতে গিয়ে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন – তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেন।এ ব্যাপারে কানাডার মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অফ নিউফাউন্ডল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী ডার্সি হ্যালেট গণিতের উদ্বেগ নিয়ে গবেষণা করেছেন।তার মতে, কোন শিক্ষক বা অভিভাবক যদি প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গণিত পড়াতে অপারদর্শী হন, রেগে যান, হতাশায় ভোগেন – তাহলে তার শিক্ষার্থীদের এই গণিত উদ্বেগে ভোগার ঝুঁকি বেশি থাকে।এভাবে গণিতের ভয় একটা চক্রের মধ্যে আটকে যায়।যেমন গণিতের ভয় থেকেই অনেকে গণিত এড়িয়ে চলেন। ফলে গণিতে তারা দুর্বল হন এবং সেই দুর্বলতার কারণে তারা গাণিতিক সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারেন না। ফলে ভয়ের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।যারা গণিতকে ভয় পান তাদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে তারা গণিতে খারাপ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের গণিতে দুর্বলতার পেছনে মূল কারণই থাকে এই ভীতি।আবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে যে বিশ্বের ৮০% দেশের মেয়েরা, ছেলেদের তুলনায় বেশি অংক ভীতিতে ভোগে।এর পেছনে সাংস্কৃতিক প্রত্যাশা – যেমন ‘মেয়েরা গণিতে কম দক্ষ’ এমন মানসিকতাও দায়ী।
মনোরোগবিদদের মতে, মানুষ যখন কোন কিছু নিয়ে শঙ্কিত থাকে তখন তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জ্বালানিতে টান পড়ে। সেই জ্বালানি হল ওয়ার্কিং মেমোরি। এই স্মৃতিশক্তি ক্ষণস্থায়ী হলেও যে কোন কাজের তথ্যগুলো গুছিয়ে নিতে এবং প্রক্রিয়া করতে এর বিকল্প নেই।কঠিন বৃদ্ধিবৃত্তিক কাজ কিংবা সমস্যা সমাধানে ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। গণিত সমাধানের ক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্কের এই ওয়ার্কিং মেমোরি অংশটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়।তাই শুরুতেই কেউ যদি ভয় পেয়ে যান তাহলে এই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতির অনেকটাই নেতিবাচকতা এবং প্রতিক্রিয়া দেয়ার কাজেই ব্যস্ত হয়ে যায়। গাণিতিক সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য অনেক অল্প অবশিষ্ট থাকে।গণিতে ভয়ের পেছনে অনেক সময় শিক্ষক ও অভিভাবকরা দায়ী থাকেন।
গণিতের ভয় দূর করার উপায়:
গণিতের এই ভয়কে অন্য অনেক ভয়ের মতো ভিত্তিহীন বলছেন গবেষকরা।
মনোরোগবিদরা বলছেন, এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক সমস্যা। এই সমস্যায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি গণিতে যে ভালো করতে পারেন, এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।মনোবিজ্ঞানীরা প্রায়শই অ্যাভার্সন থেরাপির মাধ্যমে উদ্বেগের চিকিৎসা করেন – যেখানে আপনাকে প্রতিটি ভয়ের মুখোমুখি করে, সেই উদ্বেগ মোকাবেলা করতে শেখানো হয়।তবে গণিতের ভয় কাটাতে এই পদ্ধতি কাজে নাও দিতে পারে বলে জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা।এক্ষেত্রে “এক্সপ্রেসিভ রাইটিং” পদ্ধতি একটি উপায় হতে পারে। “এক্সপ্রেসিভ রাইটিং” হল গণিত নিয়ে ভয় ও উদ্বেগের কথা খাতায় বা ডায়রিতে লিখে প্রকাশ করা।এর ফলে ওয়ার্কিং মেমোরিতে চাপ কমে, ফলে ভয় অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।একটি গণিত ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ওপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ফলাফলে গড়ে উন্নতি হয়েছে। গণিতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও খাপ খাইয়ে নেয়ার মাধ্যমেও এই ভয় দূর করা যেতে পারে।যেমন পরীক্ষাকে ভয়ের কিছু না ভেবে একে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা। সেইসাথে ভয়কে সহজভাবে নেয়া। ভয় পেলেই যে পিছিয়ে পড়তে হবে, তা নয়।গণিত নিয়ে মানসিক চাপ বা ভয় কেটে যাওয়ার পর অথবা গণিত পরীক্ষার আগে মানসিক চাপ অনুভব হলে অনুভূতিগুলো নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবুন, মূল্যায়ন করুন।
ভবিষ্যতে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে কী করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
এছাড়া ভয়ের কারণগুলোকে ভেঙে সমাধানের সূক্ষ্ম উপায় বের করার কথাও বলছেন মনোরোগবিদরা।ড. ভিটার্ট বলেন, এই ভয়কে জয় না করলে ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ারের অনেক সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।গণিত ভীতির কারণ যাই হোক না কেন, একবার ভয়ের বীজে শিকড় গজিয়ে গেলে, এটি নিজে থেকেই বেড়ে উঠতে থাকে।এক পর্যায়ে তারা বিশ্বাস করেন যে তারা গণিতে খারাপ। কিন্তু চেষ্টা করলে হয়তো তিনি এই সমস্যা সমাধান করতে পারেন। কিন্তু সেই চেষ্টাই তিনি করেন না।তাই গণিতের ভয় দূর করার প্রধান উপায়ই হল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এমনটাই মনে করেন শিক্ষক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।গণিতের ভয় দূর করার প্রধান উপায়ই হল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।এ ব্যাপারে মিস ভিটার্ট বলেন, তিনি যদি তার সেই স্কুল শিক্ষকের কথায়, অল্পবয়সে গণিত চর্চা থামিয়ে দিতেন – তাহলে তার গণিত কেরিয়ার গড়ে উঠত না।”সুতরাং আমি এগিয়ে গিয়েছি এবং গণিতের ওপর স্নাতক করেছি এবং এখন আমার পিএইচডি আছে।”তবে স্কুলে পড়াকালীন গণিত নিয়ে তার উদ্বেগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন আপনার শিক্ষক বা উর্ধ্বতন কেউ বলে যে, আপনার দ্বারা কিছু হবে না। এটা অবশ্যই বিশাল উদ্বেগ তৈরি করে। চাপটা মেয়েদের ওপর বেশি থাকে।”
উত্তেজনা শিথিল করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হতে পারে জোরে জোরে লম্বা নিশ্বাস নেয়া। এছাড়া ২০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটলে বা দৌড়ালেও মস্তিষ্ক ও শরীরের পেশী শিথিল হয়। উদ্বিগ্নতা কিছুটা হলেও কমে আসে।শিশুদের ক্ষেত্রে তাদেরকে অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো গণিতের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে কোন অবস্থাতেই গণিতকে অনেক কঠিন বিষয়, সবাই গণিত পারে না, এসব বলে ভয় দেখানো যাবে না।অংক না পারলে কোনভাবেই ঠাট্টা-তামাশা না করে তাকে গণিতের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করুন।
গণিত মুখস্থ করতে নয় বরং গণিত বোঝার ওপর গুরুত্ব দিন।শুধুমাত্র পাঠ্যবই কেন্দ্রিক না করে ধাঁধা, কুইজ, সুডোকু, পুলসাইড পাজল, দাবা, বোর্ড গেম, রুবিক’স কিউব বা গণিতের নানা ধরণের অনলাইন খেলার সাথে যুক্ত করা যেতে পারে। এসবখেলা মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তোলে।বিভিন্ন ছবি, ইলাস্ট্রেশন, ভিডিও, এনিমেশনের মাধ্যমে অংক শেখাটা অনেকটাই সহজ হতে পারে।গণিত নিয়ে অনেক মজার মজার বই রয়েছে, অনলাইন প্রবন্ধ রয়েছে, সেগুলো পড়া যেতে পারে।বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে যদি গণিত শেখানো হয়। সেটা বেশি মনে থাকে।
হিসাবের সময় ক্যালকুলেটরের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারলে ভালো।শুরুতে গণিতের জন্য সময় বেঁধে না দিয়ে, নিজের মতো লম্বা সময় ধরে শিখতে উৎসাহিত করুন। প্রথমে সময় বেশি লাগলেও ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।সবচেয়ে ভালো হয়, অল্প কয়েকটা সহজ অংক দিয়ে শুরু করা। এতে আগ্রহ বাড়বে।অনেকে অংক করার আগেই উত্তরপত্র দেখে নেন। এটা অনেকটা নিজেকে ঠকানোর মতো কাজ। উত্তর না দেখে আগে যাচাই করুন। ভুল থেকেই শেখা হবে।
নামতার হিসেব কিভাবে হল, সূত্রগুলো কিভাবে এল, এগুলো যাচাই করলে, মনে রাখা সহজ হবে।সবসময় ক্যালকুলেটর বা গুগল নির্ভর না হয়ে, ছোটখাটো হিসাব মাথায় সেরে নেয়ার চেষ্টা করুন।তবে অংকের ভীতি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল নিয়মিত অনুশীলন। প্রতিদিন অল্প হলেও অংক করার অভ্যাস করলে আস্তে আস্তে এতে পারদর্শী হওয়া সম্ভব।
গণিতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হলেন, একজন ভালো শিক্ষক। এছাড়া যাদের গণিতেআগ্রহ রয়েছে। তারা অন্যদের ভীতি দূর করতে এগিয়ে আসতে পারেন।
নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত আইনার স্কালভিক বলেছেন, গণিতের ভীতি কাটাতে সব শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মন খুলে কথা বলা বা প্রশ্ন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।অংকের ভীতি দূর করতে, অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারেন, একজন শিক্ষক।”আমি গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি যে গণিত ভীতিতে থাকা শিক্ষার্থীরা অন্যদের সামনে ছোট হওয়ার ভয়ে থাকেন এবং কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন না।”
ভুল করাটা শেখার প্রক্রিয়ার একটি অংশ। শিক্ষকদের এই বিষয়টি বোঝানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।একটি শ্রেণীকক্ষে কে কতোটা মেধাবী, কার গ্রেড কতো ভালো সেটার প্রতিযোগিতা না করে শিক্ষা-ভিত্তিক পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
“কেবল আপনার দ্রুত হার্টবিট এবং ঘামে ভেজা হাতের তালু, মানে এই নয় যে আপনি গণিতে ব্যর্থ হবেন।”মেরিল্যান্ডের একটি পাবলিক কমিউনিটি কলেজ, মন্টগোমারি কলেজ, বেশ কয়েক বছর ধরে গণিতের ভীতি কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে।সেখানকার গণিতের অধ্যাপক জন হ্যাম্যান বলেছেন, “কোর্সটি মূলত খুঁজে বের করে যে আপনার উদ্বেগ কোথা থেকে আসছে, আপনার মানসিক পরিস্থিতি কেমন এবং এই ভয় মোকাবেলার কৌশল শেখায়। “”গণিতের শেখাতে মনোযোগকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে সাহায্য করে এবং বিশ্বাস করানো হয় আপনি গণিতে ভালো হন বা না হন, প্রচেষ্টার গুরুত্ব অপরিসীম”- মনে করেন তিনি।
Leave a comment