চলচ্চিত্র হল আধুনিক বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত জনপ্রিয় গণমাধ্যম। নীচে চলচ্চিত্রের শিক্ষামূলক ভূমিকা আলােচিত হল一

(১) বাস্তবধর্মী তথ্য পরিবেশন: শিক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র বাস্তব সমস্যার ওপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়। শিক্ষার্থীরা এই ধরনের চলচ্চিত্র থেকে বিভিন্ন ধরনের বাস্তব ঘটনা ও সমস্যা ভালােভাবে বুঝতে পারে।

(২) জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়তা: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন নতুন জ্ঞানের সঞ্চালন করে এবং শিক্ষার্থীকে অনুসন্ধিৎসু করে তােলে।

(৩) সামাজিক চেতনা বিকাশে সহায়তা: চলচ্চিত্র বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ঘটনা বা সমস্যার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়, তাই সমাজ-শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র থেকে জনগণ বা শিক্ষার্থীর সমাজ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠে।

(৪) মানবিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব প্রদান: চলচ্চিত্র মানবিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে শিক্ষার্থীকে সচেতন করে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

(৫) জনমত গঠনে সহায়তা: চলচ্চিত্র জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

(৬) মানসিক বিকাশে সহায়তা: বাস্তবধর্মী এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

(৭) সকল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা: যে-কোনাে ভাষার মানুষই চলচ্চিত্রের দ্বারা উপকৃত হয়।

(৮) ব্যক্তির চাহিদাপূরণে সহায়তা: চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল—এটি ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাহিদাপূরণে সাহায্য করে।

(৯) চিত্তবিনোদনে সহায়তা: চলচ্চিত্রের চিত্ত বিনোদনমূলক প্রভাব খুব বেশি। অবসর সময় কাটানাের পক্ষে এটি একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত।

ওপরের আলােচনা থেকেই বােঝা যায় যে, চলচ্চিত্র কেবলমাত্র বিনােদনের মাধ্যমই নয়, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক ভূমিকাও রয়েছে। সামাজিক দায়িত্ববােধ, কর্তব্যবােধ ও চরিত্রগঠনের মাধ্যমে শিক্ষাথীর নৈতিক বিকাশ ঘটানােও এর একটি উল্লেখযােগ্য কাজ।

শিক্ষার প্রসারে চলচ্চিত্র ইতিবাচক ভূমিকা পালন করলেও এর বেশ কিছু অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাও লক্ষ করা যায়। নীচে এর কয়েকটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হল

(১) কৃপ্রভাব: গণশিক্ষার অন্যতম মাধ্যম চলচ্চিত্র। অনেক সময় চলচ্চিত্রের কুরুচিকর দৃশ্যের প্রভাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিকৃত রুচি গড়ে ওঠে।

(২) কুঅভ্যাস ও কুসংস্কার গঠন: জনপ্রিয় চিত্রশিল্পীদের দ্বারা প্রদর্শিত ধূমপান, মদ্যপান প্রভৃতি কু-অভ্যাসগুলি অল্পবয়সি ও বয়ঃসন্ধিক্ষণের শিক্ষার্থীরা নকল করতে আগ্রহী হয়, যা দেখে কমবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে কুসংস্কার গড়ে ওঠে।

(৩) ভ্রান্ত ধারণা গঠন: আজকাল বসু চলচ্চিত্র নির্মাতা চলচ্চিত্রকে জনপ্রিয় করার জন্য অপ্রয়ােজনীয়, অসত্য এবং অবাস্তব বিষয়কে চলচ্চিত্রে স্থান দেন। বিষয়গুলি দেখে শিক্ষার্থীদের মনে বাস্তব সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়।

(৪) সময়ের অপচয়: চিত্তবিনােদনের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার কারণে ছাত্রছাত্রী বা দর্শকরা যদি সময় নষ্ট করে ওই চলচ্চিত্র দেখে তারা হয়তো সাময়িক স্থূল আনন্দ পাবে, কিন্তু শিক্ষার কিছু পাবে না, যা সময়ের অপচয়মাত্র।

(৫) একমুখী সংযোগ: চলচ্চিত্র একমুখী মাধ্যম হওয়ায় ভুটি সংশােধনের কোনাে সুযােগ থাকে না।

(৬) অর্থ উপার্জনের উপায়: বর্তমানে বেশিরভাগ চলচ্চিত্র নির্মাতা অর্থ উপার্জনের প্রতি লক্ষ রেখে ছবি তৈরি করেন। এতে ছবির শিক্ষামূলক দিক, সমাজ উন্নয়নের দিক প্রভৃতি অবহেলিত হয়। ধ্বংস হয় সংস্কৃতি। বিপর্যস্ত হয় মূল্যবােধ।

(৭) ব্যয়বাহুল্য: চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যয়বহুল হওয়ায় বর্তমানে চলচ্চিত্র দেখার জন্য দর্শককে ভালাে পরিমাণে টাকা খরচ করতে হয়। তাই আর্থিক কারণে এই গণমাধ্যমটির সুযােগ খুব কম সংখ্যক মানুষই নিতে পারে।