অথবা, গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর দৃষ্টিভঙ্গি কী? সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ প্লেটো তার বিখ্যাত ‘দি রিপাবলিক’ গ্রন্থে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা করেছেন। তিনি গণতন্ত্রকে সর্বাপেক্ষা বিকৃত সরকার বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট প্রকৃতির সরকার ব্যবস্থা। নিম্নে তার গণতন্ত্র সম্পর্কিত সমালোচনা তুলে ধরা হলো-
(১) মুর্খের শাসনঃ গণতন্ত্রের প্রতি প্লেটোর বিদ্বেষভাব পােষণের প্রধান কারণ হলাে, তার মতে এটা মূর্খদের শাসন। তিনি দার্শনিক রাজা কর্তৃক রাষ্ট্র শাসনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
(২) তিন শ্রেণীঃ প্লেটোর মতে, গণতন্ত্রে তিন শ্রেণী বিদ্যমান থাকে। যথাঃ
(ক) অতি জনপ্রিয় নেতা
(খ) ধনীবর্গ এবং
(গ) ব্যক্তিবর্গ।
প্রথম শ্রেণী দ্বিতীয় শ্রেণীকে মিথ্যা অভিযােগে অভিযুক্ত দিয়ে তাদের লুণ্ঠন করে। এ থেকে প্রথম শ্রেণী ও তৃতীয় শ্রেণী লাভবান হয়। এদিক থেকে গণতন্ত্র ও ধনীকতন্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
(৩) সুনির্দিষ্ট কাজ নেইঃ প্লেটো বলেন, গণতন্ত্রের মানুষ সবকিছুই করতে চায়; কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এর জন্য মােটেই ন্যায়সঙ্গত নয়। এতে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র কোনােটিরই সুনির্দিষ্ট কাজ নেই। উভয়েই নিকৃষ্টতম উপাদানসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বিশৃঙ্খলভাবে উন্নত ও উৎকৃষ্টতম উপাদানসমূহের বিরুদ্ধাচারণ করে।
(৪) জনপ্রিয় নেতাকে ঘৃণা করেনঃ প্লেটো গণতন্ত্রকে অনেকগুলো মেধাহীন মস্তকবিশিষ্ট মানুষের শাসন বলে বিবেচনা করেছেন- যাদের কোনােরূপ ধীশক্তি নেই। তিনি গণতন্ত্রকে যতটা ঘৃণা করেন তার চেয়েও অধিক ঘৃণা করেন জনপ্রিয় নেতাকে। কেননা জনপ্রিয় নেতা একাধারে অভিজাত শ্রেণীর ব্যক্তি এবং ভৃত্য। জনগনের প্রকৃত কল্যাণসাধনের লক্ষ্যে কাজ করার যোগ্যতা তাদের মধ্যে থাকে না।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো যে সময়ে গণতন্ত্র সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন সেটি ছিল হেলেনীয় যুগের ক্রান্তিকাল এবং গণতন্ত্রের বিকৃত কর্মকাণ্ডের ‘মধুমাস’। এথেন্সের শাসকরা যেভাবে রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের ওপর বিচারের নামে প্রহসন চালাতেন তা এর আগের রাজতন্ত্রেও দেখা যায়নি। ফলে সমাজের বিবেকবান মানুষ; বিশেষত দার্শনিকরা সাজানো গণতন্ত্রের কুফল নিয়ে সোচ্চার হতে থাকেন।
Leave a comment