প্রশ্নঃ শব্দ কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাংলাভাষার শব্দসমূহকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়? তা উদাহরণসহ আলোচনা কর।

অথবা, শব্দের গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ কর এবং প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণ দাও।

উপস্থাপনাঃ কথা বলতে গেলে আমাদেরকে শব্দ উচ্চারণ করতে হয়। শব্দ হলো ভাষার মৌলিক সম্পদ। বাংলা ভাষার শব্দসমূহ কয়েকটি শ্রেণির অধীনে গঠিত হয়ে থাকে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো-

শব্দের সংজ্ঞাঃ 

১. মানুষের মুখনিঃসৃত এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। যেমন- কলম, আমরা, মা, গোলাপ ইত্যাদি।

২. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে।”

৩. ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “অর্থবোধক ধ্বনিকে শব্দ (word) বলে। কোনো বিশেষ সমাজের নরনারীর কাছে যে ধ্বনির স্পষ্ট অর্থ আছে, সেই অর্থবোধক ধ্বনিই হচ্ছে সেই সমাজের নরনারীর ভাষায় শব্দ। ”

৪. অশোক মুখোপাধ্যায়ের মতে, “এক বা একাধিক ধ্বনির সমন্বয়ে তৈরি অর্থবোধক ও উচ্চারণযোগ্য একককে শব্দ বলা হয়।”

গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগঃ গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. মৌলিক শব্দ। ২. সাধিত শব্দ। নিম্নে প্রকার দুটির বর্ণনা প্রদত্ত হলো-

১. মৌলিক শব্দঃ যেসব শব্দ একেবারেই স্বকীয়, যাকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না। অর্থাৎ উৎপত্তিগতভাবে মৌলিক এবং যাতে বা যার সাথে কোনো প্রত্যয়, বিভক্তি বা উপসর্গ যুক্ত থাকে না তাদেরকে মৌলিক শব্দ বলে। যথা- হাত, পা, আলো, নদী ইত্যাদি।

২. সাধিত শব্দঃ যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় অর্থাৎ উৎপত্তিগতভাবে যা মৌলিক নয়; বরং মৌলিক শব্দ বা ধাতুর সাথে উপসর্গ বা প্রত্যয় যোগ হয়ে অথবা সমাস নিষ্পন্ন হয়ে যেসব শব্দ গঠিত হয়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। যেমন- স্বাগত (সু+আগত), বিদ্যালয় (বিদ্যা+আলয়) ইত্যাদি সাধিত শব্দ। শব্দ সাধারণত তিনভাবে সাধিত হয়ে থাকে। যথা-

ক. প্রত্যয় যোগে সাধিত শব্দ। যেমন- বাঘ+আ = বাঘা, অতি+অন্ত = অত্যন্ত ইত্যাদি।  

খ. উপসর্গ যোগে নিষ্পন্ন শব্দ। যেমন- পরা+জয় =পরাজয়, অধি+কার= অধিকার ইত্যাদি।

গ. সমাস সাধিত শব্দ। যেমন- মহৎ যে জন = মহাজন, সমান উদর যার সহোদর ইত্যাদি। 

উপসংহারঃ সুতরাং মৌলিক শব্দ এবং সাধিত শব্দ হলো বাংলা শব্দের গঠনমূলক ভিত্তি। সকল শ্রেণির শব্দই এ দু’শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।