রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে দেখা যায়, দর্ভকপল্লিতে গুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আচার্য অদীনপুণ্য অচলায়তনের শাস্ত্রনির্ভর জীবনবিমুখ ধর্মসাধনায় নিজের অতৃপ্তির কথা গুরুকে জানান।
বিরাট বিশ্বসংসারে প্রতিটি প্রাণের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজ করেন। তাই নিছক সাধন, পূজন, ভজন বা আরাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না। মানুষের সঙ্গে প্রাণের মিলনই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের একমাত্র চাবিকাঠি। দাদাঠাকুর তাই অনায়াসে মিশে যান অস্পৃশ্য যূনক বা অন্ত্যজ দৰ্ভকদের সঙ্গে। দর্ভকদের ভাত ও মাষকলাইয়ের সামান্য আয়ােজনেও তার ক্ষুধাতৃপ্তি ঘটে। অচলায়তনের প্রাচীর প্রাণের প্রবেশের পথকে বুদ্ধ করে রেখেছে বলে দাদাঠাকুর মনে করেন। তিনি মনে করেন, অচলায়তনের পুথিনির্ভর জীবনসাধনা আসলে এক অভ্যাসের চক্র তৈরি করে দেয়, যা মানুষকে কোনাে জায়গাতেই এগিয়ে নিয়ে যায় না, কেবল নিজের মধ্যেই ঘুরিয়ে মারে। মন্ত্রতন্ত্র আর প্রায়শ্চিত্তের মধ্যে ধর্মের পরাকাষ্ঠা খোঁজা হয়েছে, কিন্তু মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের যে সহজ প্রতিষ্ঠা তার স্বরূপ উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি অচলায়তনিকদের পক্ষে। বিভ্রান্ত এবং বিপর্যস্ত আচার্যকে একথাই বােঝাতে চেয়েছেন দাদাঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে দেখা যায়, গুরুর আসার খবর নিয়ে অচলায়তনে আসেন উপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তিনি এই খবরও দেন যে, শত্রুসৈন্যের আক্রমণে অচলায়তনের দরজা-প্রাচীর সবকিছু ভেঙে পড়েছে।
মহাপঞ্চক ছিলেন অচলায়তনের শাস্ত্রনির্ভের ধর্মসাধনার পরিচালক। আচার্য অদীনপুণ্যকে সরিয়ে স্থবিরপত্তনের রাজা মন্থরগুপ্ত তাঁকেই আচার্যের পদে বসান। সংস্কারগ্রস্ত মহাপক শাস্ত্রীয় বচন ও রীতিনীতির ক্ষমতার ওপর অত্যন্ত আস্থাশীল। ছিলেন। উপাধ্যায়ের দেওয়া সংবাদ তাই মহাপঞ্চক বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু নিজের ওপরে অটল আস্থা সত্ত্বেও মহাপক সঞ্জীব, জয়ােত্তম, এমনকি উপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়াতে কিছুটা বিচলিত হন। মহাপঞ্চক বােঝেন, অচলায়তনে তিনি কিংবা শাস্ত্র কোনােটাই আর নিরঙ্কুশ নয়। এই অবস্থায় উচ্ছসিত বালকের দল তাঁর কাছে আসে। জীবনে প্রথম তারা দেখতে পায় আকাশের নীল মাধুর্য। ফলে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে তাদের প্রাণ। মহাপঞ্জকও বুঝে যান, নিয়মের বেষ্টনীতে অচলায়তনের জীবনকে আর আটকে রাখা কোনােমতেই সম্ভব নয়। তাই তিনি বালকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়ে দেন যে, সেদিন অচলায়তনের বালকদের ষড়াসন বন্ধ বা পঙ্ক্তিধৌতিরও কোনাে প্রয়ােজন নেই। সেইদিন আর কোনাে মৃত নিয়মের অনুশাসন দিয়ে বালকদের বা অচলায়তনের বাসিন্দাদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে দাদাঠাকুর মহাপঞ্চক সম্বন্ধে প্রশ্নোত মন্তব্যটি করেছেন। দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে যুনকরা অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে ফেলার পরে একে একে সকলেই সেই পরিবর্তনকে মেনে নিতে শুরু করে। বাইরের আলাে, বাতাস বা পাখির ডাকে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে ছেলের দল চায় ছুটে বেড়াতে। কিন্তু মহাপঞক তার সংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের বলয়কে কিছুতেই অতিক্রম করতে পারেন না। ফলে তার কথাবার্তাকে পাগলের প্রলাপ মনে হয় আচার সংস্কারের ঘেরাটোপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত যূনকদের। প্রথম যুনক গুরুকে মজা করে মহাপককে বন্দি করার কথা বলে। দ্বিতীয় যূনক দাদাঠাকুরকে বলে মহাপককে শাস্তি দেওয়ার কথা। এই শাস্তিদান প্রসঙ্গে দাদাঠাকুর বা গুরু প্রশ্নোষ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।
অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙেছে, মহাপঞক একা হয়ে গেছেন, কিন্তু নিজের ভাবনা থেকে কিছুতেই তিনি সরে আসেননি। দাদাঠাকুর মহাপঞকের মতাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীতে থেকেও এই চারিত্রিক দৃঢ়তা, আপন মতাদর্শের প্রতি অটল আস্থা এবং সততাকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারেননি। তার মনে হয়, যে নিষ্ঠা নিয়ে মহাপঞ্চক তার জীবনাদর্শ পালন করেন, সেখানে তাকে শাস্তি দেওয়া দূরে থাক, স্পর্শ করাও কোনােভাবেই সম্ভব নয়। দাদাঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গির এই ব্যাপকতাই মহাপঞ্চক চরিত্রটির মধ্যেও এই ইতিবাচক দিকটিকে খুঁজে নিতে সমর্থ হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু নাটকে দেখা যায়, অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে পড়ার পরে তাঁচলায়তনের প্রথাসর্বস্বতা থেকে ক্রমশ বেরিয়ে আসে মহাপঞ্ক ছাড়া সকলেই। সকলেই যখন মুক্তির স্পর্শে সঞ্জীবিত, বাইরের আলাে, বাতাস বা পাখির ডাকের শব্দে উচ্ছ্বসিত, তখনই দ্বিতীয় বালকের প্রশ্নের উত্তরে দাদাঠাকুর জানান যে তিনি তাদের সঙ্গে খেলবেন। আর সেই খেলা হবে ঘর বা আঙিনার থেকেও বড়াে কোনাে জায়গায়। অচলায়তনের বদ্ধ পরিবেশে অভ্যস্ত দ্বিতীয় বালক জানতে চেয়েছিল যে, খােলা জায়গায় গেলে পাপ হবে কি না। তখনই দাদাঠাকুর এই মন্তব্যটি করেছিলেন।
মন্তব্যটি দাদাঠাকুর তথা নাট্যকারের সামগ্রিক জীবনদর্শনের প্রকাশ। পুথিসর্বস্ব জীবনবিমুখ আচরণবিধির বদলে অচলায়তনের অধিবাসীদের বাইরের জীবনের সঙ্গে সহজে সংযুক্ত করে দেওয়াই ছিল দাদাঠাকুরের লক্ষ্য। অচলায়তনের প্রাচীর এবং দ্বার ভেঙে ফেলে মনের দরজা খুলে দেওয়াই ছিল দাদাঠাকুরের প্রাথমিক কাজ। সংকীর্ণতা বা নিরর্থক আচার সংস্কার থেকে মুক্তি আর মনের অবাধ বিস্তারের মধ্যে দিয়েই যাবতীয় মলিনতার অবসান ঘটবে, বাইরের বৃহৎ ও উদার বিশ্বপ্রকৃতির সংস্রবে এবং বহু মানুষের সঙ্গে সংযােগেই মানুষ তার ক্ষুদ্রতা বা নীচতাকে অতিক্রম করতে শিখবে—এমনটাই দাদাঠাকুর মনে করেছিলেন।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবি শিক্ষাকে কেন সার্কাস- এর সঙ্গে তুলনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতার নামকরণ কতটা সার্থক?
“যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়, আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব।” -সব শ্রেণি শেষ হয়ে পরের শ্রেণিতে যাওয়া বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
“সব শিক্ষা একটি সার্কাস”—মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা!” -‘ধোঁকা’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কবির কোন মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
শিক্ষা আর সার্কাস কতখানি তুল্যমূল্য—আলােচনা করাে।
“জ্ঞান কোথায় গেল”—জ্ঞানের অভাব কবিতায় কীভাবে ধ্বনিত হয়েছে?
‘গুরু’ নাটকের পঞ্চক চরিত্রটির মধ্যে কতখানি প্রথা বিরােধিতা ধরা পড়েছে তা আলােচনা করাে।
‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক কীভাবে যুক্তিবাদী মনােভাবের পরিচয় দিয়েছে?
গুরু নাটকে পঞ্চকের সহানুভূতিশীলতার পরিচয় দাও।
‘গুরু’ নাটকের মহাপক চরিত্রটি আলােচনা করাে।
‘গুরু’ নাটকে গুরুর যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখাে।
‘গুরু’ নাটকের সুভদ্র চরিত্রটি বিশ্লেষণ করাে।
‘গুরু’ নাটকে শূনকদের ভূমিকা আলােচনা করাে।
‘গুরু’ নাটকে দর্ভকদের ভূমিকা আলােচনা করা।
‘গুরু’ নাটকে মােট কটি সংগীত রয়েছে? নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলােচনা করাে।
রূপক নাটক হিসেবে ‘গুরু’-র সার্থকতা আলােচনা করাে।
গুরু নাটকে যে নাট্যদ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
গুরু নাটকে সংলাপ রচনায় নাট্যকারের সার্থকতা আলােচনা করাে।
“অচলায়তনে এবার মন্ত্র ঘুচে গান আরম্ভ হবে।” -মন্ত্ৰ ঘুচে গান বিষয়টি ব্যাখ্যা করাে।
“আমাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত।” বক্তার এই মন্তব্যের কারণ কী?
“আমাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত।” বক্তার এই মন্তব্যটি কতটা সমর্থনযোগ্য বলে তুমি মনে কর?
“আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি।” -বক্তা কে? কোন্ প্রসঙ্গে কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা একথা বলেছেন? এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে?
সুভদ্রের উত্তর দিকের জানলা খােলা অচলায়তনে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল?
“পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
“পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।”—মন্তব্যটি শুনে শ্রোতার মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
“উনি গেলে তােমাদের অচলায়তনের পাথরগুলাে সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুথিগুলাের মধ্যে বাঁশি বাজবে।” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
Leave a comment