প্রশ্নঃ খাজনা কাকে বলে? খাজনা বৃদ্ধির কি কোন সীমারেখা আছে? ভূমি রাজস্ব মওকুফের বিশেষ বিধান কি? ধর্মীয় বা সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কতিপয় জমির খাজনা মওকূফের বিশেষ বিধান উল্লেখ কর।
ভূমিকাঃ ভূমির মালিক কোন ভূমি তার নিজের দখলে রাখার জন্য সরকারকে যে অর্থ প্রদান করে তা-ই হলো খাজনা। প্রজাস্বত্ব রক্ষা করতে হলে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা প্ৰদান করতে হয়। সকল জমি খাজনার জন্য দায়ী।
খাজনা (Rent) কাকে বলেঃ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২(২২) ধারা অনুযায়ী-
কোন জমির দখল এবং ব্যবহার করার ফলে প্রজা কর্তৃক সরকারকে আইনসংগতভাবে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে খাজনা বলে।
প্রজাস্বত্ব রক্ষা করতে হলে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা প্রদান করতে হয়। এই আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে- সকল জমি খাজনার জন্য দায়ী হবে।
খাজনা বৃদ্ধির পদ্ধতি : নতুন নির্ধারিত খাজনা পূর্ববর্তী বছরের ৫০% এর বেশি হবে না। প্রজার কষ্ট লাঘবের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসার কয়েকটি কিস্তিতে এই খাজনা বৃদ্ধি করতে পারেন। যেমনঃ ১ একর জমির বার্ষিক খাজনা ছিল ৪ টাকা। ৪ এর ৫০% = ২ টাকা। অর্থাৎ এই গাজনা ৬ টাকার বেশি করা যাবে না। যদি উক্ত খাজনা ৬ টাকার বেশি করতে হয় তাহলে কিস্তিতে বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থাৎ খাজনা যদি ১০ টাকা করা হয় তাহলে প্রতি বছর ২ টাকা হারে বৃদ্ধি করে ৩ বছরে কিস্তিতে ১০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
খাজনা বৃদ্ধির কি কোন সীমারেখা আছেঃ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১০৫ ধারা অনুযায়ী- নতুন নির্ধারিত খাজনা পূর্ববর্তী বছরের ৫০% এর বেশি হবে না।
প্রজার কষ্ট লাঘবের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসার কয়েকটি কিস্তিতে এই খাজনা বৃদ্ধি করতে পারেন। যেমনঃ ১ একর জমির বার্ষিক খাজনা ছিল ৪ টাকা। ৪ এর ৫০%= ২ টাকা। অর্থাৎ এই খাজনা ৬ টাকার বেশি করা যাবে না। যদি উক্ত খাজনা ৬ টাকার বেশি করতে হয় তাহলে কিস্তিতে বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থাৎ খাজনা যদি ১০ টাকা করা হয় তাহলে প্রতি বছর ২ টাকা হারে বৃদ্ধি করে ৩ বছরে কিস্তিতে ১০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
ভূমি রাজস্ব মওকূফের বিশেষ বিধান কিঃ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৫১(সি) ধারা অনুযায়ী-
কোন পরিবার কর্তৃক অধিকৃত জমি ২৫ বিঘার বেশি না হলে ১৫১ (এইচ) ধারা অনুযায়ী যে তারিখ থেকে মওকূফের অধিকারী হবে সেই তারিখ থেকে ভূমি রাজস্ব নিষ্কৃতি পাবে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে কোন পরিবারের জমির পরিমাণ ২৫ বিঘা অতিক্রম করলে রাজস্ব মওকূফ হবে না।
ধর্মীয় বা সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কতিপয় জমির খাজনা মওকূফের বিশেষ বিধান : রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৫১(এ) ধারা অনুযায়ী-
(১) জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন : এই আইনের অন্যত্র যা-ই থাক না কেন কোন জমি ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হলে খাজনা মওকূফের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
(২) জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুসন্ধান : উক্ত আবেদনে উল্লেখিত জমি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা ৩ মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসক অনুসন্ধান করবেন।
(৩) জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদন : জেলা প্রশাসক অনুসন্ধানে সন্তুষ্ট হলে খাজনা মওকূফের আদেশ দিবেন।
(৪) জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রত্যাখ্যান : জেলা প্রশাসক অনুসন্ধানে সন্তুষ্ট না হলে খাজনা মওকূফের আদেশ প্রত্যাখ্যান করবেন।
(৫) নিষ্কর প্রজাস্বত্ব সৃষ্টি : উক্ত জমি যদি কোন জোত বা প্রজাস্বত্বের অংশ হয় তাহলে জেলা প্রশাসক জোত বা প্রজাস্বত্ব থেকে পৃথক করে নিষ্কর প্রজাস্বত্ব সৃষ্টি করবেন।
(৬) আপীল : জেলা প্রশাসকের আদেশে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে উক্ত আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপীল করা যাবে।
(৭) রিভিশন : বিভাগীয় কমিশনারের আবেদনে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে উক্ত আদেশের ৬০ দিনের মধ্যে ভূমি প্রশাসন বোর্ডে রিভিশন করা যাবে।
(৮) স্বেচ্ছায় রিভিশন : ভূমি প্রশাসন বোর্ড বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসকের দেশের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় রিভিশন করতে পারবেন।
(৯) আদেশ কার্যকর : খাজনা মওকূফের আদেশ হলে পরবর্তী কৃষি বছরের শুরু থেকে তা কার্যকর হবে।
উপসংহারঃ খাজনা সরকারের একটি আয়ের উৎস। জনগণ তার ভূমির মালিকানা বজায় রাখার জন্য সরকারকে খাজনা প্রদান করতে হয়। এই খাজনা সরকার যে কোন সময় বৃদ্ধি করতে পারে আবার হ্রাস করতেও পারে। খাজনা হ্রাস করতে হলে কোন নিয়ম অনুসরণ করতে হয় না কিন্তু খাজনা বৃদ্ধি করতে হলে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
Leave a comment