প্রশ্নঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কার্যকারিতা কী?

অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য কী?

অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ কর।

ভূমিকাঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে ব্যক্তিস্বাধীনতা মতবাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাথে সাথে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কথা বলেন। পরবর্তীতে মন্টেঙ্কুর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণতা দান করে, যা বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থায় খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্বঃ আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ অপরিহার্য। নিম্নে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব আলােচনা করা হলাে-

১. ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায়ঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম কাজ হচ্ছে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করা। ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য প্রয়ােজন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। আর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়।

২. গণতন্ত্র রক্ষাঃ গণতন্ত্র রক্ষায় এ নীতির প্রয়ােগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলাের মধ্যে কোন বিরােধ সংঘটিত হলে বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ মুক্ত থেকে সঠিক রায় প্রদান করে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে পারে।

৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি না হলে সমাজে ও রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। কারণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগের প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে।

৪. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণঃ বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতামূলক ভূমিকার মাধ্যমে শাসন বিভাগের অন্যায়। অযৌক্তিক নীতিকে বাধা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হতে পারে।

৫. সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধিঃ এ নীতি প্রয়ােগের ফলে সরকারের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। কেননা প্রতিটি বিভাগই অন্যান্য বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত কাজ থেকে নিজেকে পৃথক রেখে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন যথাযথ ও ঝামেলামুক্তভাবে সম্পাদন করতে পারে।

উপসংহারঃ আলােচনার শেষ প্রান্তে এসে আমরা বলতে পারি সরকারের প্রতিটি বিভাগের কাজের নিরপেক্ষতা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কোন বিকল্প নেই। তাই সবার লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণীতি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়।