প্রশ্নঃ 
ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উৎস আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ সাম্প্রতিককালে লোক প্রশাসনে যে সকল ধারণা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, এগুলোর মধ্যে ‘ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব’-এর ধারণা নিঃসন্দেহে অন্যতম। তবে এখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বলতে মূলতঃ প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বকেই বুঝানো হয়েছে। 

প্রশাসনিক ক্ষমতা (Power or Administrative Power): প্রশাসনিক ক্ষমতা বলতে সরকারি নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্থার নিকট অর্পিত ক্ষমতাকে বুঝায়। প্রশাসনিক সংস্থার ক্ষমতার উৎস প্রধানত দু’টি, যথাঃ আইন এবং আইন, রীতিনীতি ও প্রথার অনুমোদনসাপেক্ষে স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতা।

কর্তৃত্ব বা প্রশাসনিক কর্তৃত্ব (Authority or Administrative Authority): ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যই কোন না কোন ধরনের কর্তৃত্বের প্রয়োজন। কর্তৃত্ব ব্যতীত ক্ষমতা অর্থহীন। ক্ষমতাকে বৈধ বলে গণ্য করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা বৈধতা (Legitimacy) একটি কাঠামোর মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বৈধতা বিমূর্ত ধারণায় পরিণত হবে যে সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে ক্ষমতার বৈধতা মূর্ত হয়ে উঠে, তাকে কর্তৃত্ব বলে। 

ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উৎস (Source of Power and Authority): প্রশাসকরা তাদের ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব পেয়ে থাকেন দেশের সংবিধান, প্রচলিত আইন এবং বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত থেকে। প্রধানত প্রশাসকরা তাদের কর্তৃত্ব পেয়ে থাকেন সংসদ প্রণীত আইন হতে। সংসদ বা পার্লামেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর নীতি অনুযায়ী (Delegated legislation) প্রধান নির্বাহীকে ক্ষমতা প্রদান করেন। প্রধান ‘নির্বাহী আদেশ’ (Executive order) দ্বারা প্রশাসনিক সংস্থা ও প্রশাসকদেরকে প্রশাসনিক নিয়মকানুন প্রণয়নের ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। একটি চিত্রের সাহায্যে প্রশাসকদের ক্ষমতার উৎস নিম্নোক্তভাবে দেখানো যেতে পারেঃ

অন্যদিক থেকে প্রশাসকদের কর্তৃত্বের উৎস সম্পর্কে বলা যায় যে, নিম্নপর্যায় থেকে প্রশাসকরা তাদের কর্তৃত্ব পেয়ে থাকেন কিছুটা পদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বা কিছুটা প্রশাসনিক আদেশ ও নিয়মের মাধ্যমে এবং ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক আদেশ ও নির্দেশ থেকে। প্রশাসনিক কর্তৃত্বের উৎসকে নিম্নোক্তভাবে সংখ্যায়িত করা যেতে পারেঃ 

১। সংবিধান।

২। প্রচলিত আইন।

৩। বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত।

৪। সংসদ প্রণীত আইন ও সিদ্ধান্ত।

৫। প্রশাসনিক সংস্থা কর্তৃক জারিকৃত অধ্যাদেশ, নিয়মাবলি ও সিদ্ধান্ত।

৬। প্রধান নির্বাহী কর্তৃক অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশ।

৭। রীতিনীতি ও প্রথা। 

উপসংহারঃ শিল্পায়ন, শহরায়ন, অর্থনৈতিক মন্দা এবং যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে প্রশাসনের ভূমিকার দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। জনগণও আজ অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে সরকারের অধিকতর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যেসব বিষয় অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেসরকারি খাতে ন্যস্ত ছিল, বর্তমানে তা সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং সরকারের এ নিয়ন্ত্রণ পরিধি দিন দিন বেড়েই চলছে। জনকল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রমিক সম্পর্ক, কৃষি উৎপাদন, বিনিয়োগ ব্যবস্থা, জনসেবা প্রদানকারী অনেক প্রতিষ্ঠান আজ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনিক সংস্থার কর্তৃত্ব ও স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতাও বেড়ে চলেছে।