প্রশ্নঃ ‘ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়’- ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন কি সম্ভব?

অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কি সম্ভব?

ভূমিকাঃ রাষ্ট্র একটি জৈব সত্তা বিশেষ এবং এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন বিভাগ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এদের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ সম্ভব নয়। কারণ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এমন অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত যে, একটি অন্যটি থেকে সম্পূর্ণভাবে স্বতন্ত্র রাখলে রাষ্ট্র পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার যথার্থই বলেছেন, “What is needed infact, is not the separation of functions but their proper articulations, only then can responsibility be wedded to efficiency.”

ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়ঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবে কতটুকু অনুশীলনযােগ্য তা পরিষ্কার হয়ে উঠবে নিম্নের আলােচনা থেকে-

১. পরস্পরের সম্পর্কে যুক্তিঃ সরকারের তিনটি বিভাগ নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অপরাপর বিভাগের কাজও কিছু না কিছু করে থাকে। তাই যত কঠোরভাবেই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ করা হােক না কেন কোন বিভাগই সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে না।

২. শাসনব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টিঃ অধ্যাপক লাস্কি মনে করেন যে, সরকারের তিনটি বিভাগকে যদি সম্পূর্ণভাবে পরস্পর থেকে পৃথক করা হয় তাহলে প্রতিটি বিভাগই নিজ নিজ দায়িত্ব এড়িয়ে তা অন্যের উপর চাপানাের চেষ্টা করবে। ফলে সমগ্র শাসনব্যবস্থা অচল হয়ে পড়বে।

৩. জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের জন্য অনুপযােগীঃ জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের জনকল্যাণকর নীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকরী করা অসম্ভব। কেননা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির জটিলতা কল্যাণকর আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।

৪. সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা সমান নয়ঃ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগের স্থান অন্য দুটি বিভাগের উর্ধ্বে। আইন বিভাগ শুধু আইন প্রণয়নই করে না, বরং শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণও করে থাকে।

৫. সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়ঃ সরকার একটি অখণ্ড ও অবিচ্ছেদ্য সত্তা। সরকারের সকল কাজই কমবেশি সকল বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট। সরকারের এ তিনটি বিভাগকে কোনক্রমেই কৃত্রিমভাবে পৃথক করা যায় না।

৬. দায়িত্বহীনতাঃ সরকারের তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র হয়ে নিজস্ব আওতার মধ্যে অবস্থান করলে তাদের দায়িত্বশীলতা বিলুপ্ত হবে। পরস্পরের মধ্যে সংঘাত বাঁধবে এবং সহযােগিতা বিনষ্ট হবে। এর ফল হিসাবে শাসনকার্যে বিশৃঙ্খলা ঘটবে।

৭. অন্যান্য কারণঃ কর্মদক্ষতা হ্রাস অস্বাভাবিক ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য স্বতন্ত্রীকরণ একমাত্র উপাদান নয়। সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে বিভক্তিকরণ ঠিক নয় প্রভৃতি কারণেও ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়; কাম্যও নয়।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়ােগ করা হলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্যের সৃষ্টি হবে। প্রত্যেক বিভাগই আলাদা হয়ে যাবে এবং তাদের সহযােগিতা ও ঐক্যের মনােভাব বিনষ্ট হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, সম্পূর্ণ ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়; কাম্যও নয়।