উদারনীতিবাদ সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হওয়ার জন্য সুদীর্ঘকালের ক্রমবিবর্তনের ধারায় এর ধারণাগত পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত হওয়া আবশ্যক। ক্রমবিকাশের ধারায় উদারনীতিবাদের অল্পবিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে কতকগুলি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায় তাঁর Liberal ism: A Dilemma For Indian Political Science শীর্ষক এক রচনায় এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।
(ক) গৌরবময় বিপ্লবের ঠিক দুবছর বাদে তত্ত্বগত বিচারে উদারনীতিবাদের জন্ম হয়। রাষ্ট্রনীতিক চিত্তাবিদদের অভিমত অনুযায়ী এটা ছিল ঐতিহাসিক অনিবার্যতা। এই নবজাতকের প্রকৃতিগত নির্যাস নির্গত হয়েছে গৌরবময় বিপ্লবের ভাবধারা থেকে। উদারনীতিবাদের উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে। তার ফলে প্রথমে ইংল্যাণ্ডে উদারনীতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের রাষ্ট্র গড়ে উঠে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে পশ্চিমী দেশগুলিতে এই প্রক্রিয়া প্রায় পূর্ণতা লাভ করে। বিংশ শতাব্দী ব্যাপী উদারনীতিবাদের উত্তরাধিকারের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বব্যাপী উদারনীতিবাদের প্রতি আগ্রহের আতিশয্য দেখা দেয়। এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্য স্বাধীন অনেক জাতি এই প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার আওতায় আসে।
লক প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রের একটি তত্ত্ব হিসাবে উদারনীতিবাদের আলোচনার সূত্রপাত করেন। অনতিবিলম্বে উদারনীতি একটি বিশিষ্ট মতবাদে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের প্রক্রিয়া স্বচ্ছন্দ ও সাবলীলভাবে সম্পাদিত হয়। কারণ পুঁজিবাদ উদারনীতিবাদের সামাজিক ভিত্তি হিসাবে সদর্থক ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইতিমধ্যেই পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটেছিল। অতঃপর পুঁজিবাদের বিকাশ ও উদারনীতিবাদের অগ্রগমন অব্যাহতভাবে ঘটতে থাকে।
(খ) সাধারণ মানুষ প্রাথমিকভাবে নিজেদের সামাজিক জীব হিসাবেই মনে করে। রাজনীতিক জীব হিসাবে মানুষের বোধ অনেক দূরবর্তী বিষয়। কারণ মানুষের জীবন ধারা রাষ্ট্রের থেকে সমাজের দ্বারা অধিক পরিমাণে নিয়ন্ত্রিত হয়। সমাজের থেকে রাষ্ট্র মানুষের কাছে দূরবর্তী বিষয়। সমাজকেই তারা অধিকতর ভালভাবে জানে ও বোঝে। এ রকম অবস্থায় মানুষ উদারনীতিবাদকে নিজেদের জীবনের নিকটবর্তী বিষয় হিসাবে বিচার-বিবেচনা করেছে। উদারনীতিবাদ উদারনীতিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে উদারনীতিক সমাজব্যবস্থার বিকাশের উপর জোর দিয়েছে। উদারনীতিক রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়েরই মুখ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হল সকলের জন্য ন্যায়, সাম্য ও স্বাধীনতা। উদারনীতিবাদ অনুযায়ী উদারনীতিক রাষ্ট্র উদারনীতিক সমাজের সহযোগী হিসাবে ভূমিকা পালন করবে।
(গ) উদারনীতিবাদ রাষ্ট্র সম্পর্কে এক ধরনের জনকল্যাণমূলক সদর্থক ধারণার সৃষ্টি করেছে। এইভাবে মানুষের মনে রাষ্ট্র সম্পর্কে একটি মর্যাদাপূর্ণ বোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র একটি বিশেষভাবে উপযোগী ও স্থায়ী প্রকৃতির প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। তারফলে রাষ্ট্রের অবসানের জন্য বৈপ্লবিক পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বনের প্রস্তাব অর্থহীন প্রতীয়মান হয়েছে। রাষ্ট্রের ব্যাপারে মানুষের অস্বস্তি বোধকে উদারনীতিবাদ অপসারিত করেছে এবং সাধারণভাবে একটি স্বস্তির ধারণা সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও বলপ্রয়োগের প্রতিষ্ঠান হিসাবে রাষ্ট্রকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ বহু ও বিভিন্ন বিধি-বিধান ও অঙ্গীকারসমূহের দ্বারা রাষ্ট্রের গতিবিধি বিশেষভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ। সুতরাং রাষ্ট্রের সঙ্গে সহবাসের ব্যাপারে ব্যক্তিবর্গের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কোন রকম আশঙ্কা নেই।
(ঘ) রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও ব্যক্তির স্বাধীনতার মধ্যে পারস্পরিক বিরোধের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। উদারনীতিবাদ তাত্ত্বিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এই বিরোধের সন্তোষজনক সমাধানের ব্যবস্থা করেছে। পশ্চিমী রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে লক্কেই উদারনীতিবাদের জনক হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। লকের মতবাদেই রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ নিরসনের ব্যাপারে তাত্ত্বিক উপায়-পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া যায়। লক্ ব্যক্তিমানুষের গুরুত্বপূর্ণ পৌর অধিকার সমূহের অনিয়ন্ত্রিত ভোগের উপর জোর দিয়েছেন এবং এই সমস্ত অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে রাষ্ট্রের উপর দায়িত্ব আরোপ করেছেন। এই দায়িত্ব সম্পাদনে অসামর্থ্য বা অসাফল্যের কারণে ব্যক্তিবর্গের হাতে প্রতিরোধের অধিকার থাকবে। এই প্রতিরোধের পরিণামে সরকারের পরিবর্তনও ঘটতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের পরিবর্তনের কথা তিনি বলেননি। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রতি ব্যক্তির রাজনীতিক আনুগত্যের বিষয়টি শর্তসাপেক্ষ। লকের মতানুসারে মূল চুক্তির শর্তসমূহের দ্বারাই রাজনীতিক আনুগত্যের ভিত্তি সম্পর্কিত প্রশ্নের স্থায়ীভাবে মীমাংসা করা হয়েছে। অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন: “…to Lock, the state is a powerful and permanent institution and yet its author ity is limited by the basic civil requirements of the individual. This is how Locke in his liberal theory located the point of convergence between the liberty of the individual and the authority of the state.”
পরবর্তী প্রায় তিনশ’ বছর ব্যাপী লকের অনুগামীরা তাঁর উদারনীতিবাদের মৌখিক বক্তব্যসমূহকে স্বীকার ও সমর্থন করেছেন। কিন্তু ব্যক্তির স্বাধিকারের পরিধির ব্যাপ্তির ব্যাপারে বিতর্ক ও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এবং এই পথে নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা সংযুক্ত হওয়ার সুবাদে উদারনীতিবাদ অধিকতর সমৃদ্ধ হয়েছে।
(ঙ) অ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো ও রবার্ট ম্যালথাস আর্থনীতিক কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি মানুষের বিষয়াদি বিচার-বিবেচনা করেছেন। এই সমস্ত অর্থনীতিবিদদের অভিমত অনুযায়ী স্বয়ংনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থায় ব্যক্তি মানুষকে কাজকর্মের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া দরকার। তাহলে ব্যক্তি সব থেকে ভালভাবে তার স্বাধিকারের সত্তা ভোগ করতে পারবে। তবে স্বনিয়ন্ত্রিত বাজার একচেটিয়া কারবার বা রাজনীতিক হস্তক্ষেপের দ্বারা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রিত হবে না। এ হল আর্থনীতিক ভিত্তিকে উদারনীতিবাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী ব্যাখ্যা।
(চ) জেরেমি বেন্থাম,, জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল ও হারবার্ট স্পেনসার আর্থনীতিকভাবে গঠিত উদারনীতিবাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী ভাষ্যের সঙ্গে রাজনীতিক ভাষ্যের মাত্রা সংযুক্ত করেছেন। এই সমস্ত উদারনীতিবাদীরা ব্যক্তি জীবনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে মোটামুটি অস্বীকার করেছেন। এঁদের অভিমত অনুযায়ী কোন রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ব্যক্তি মানুষ তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বার্থ সংরক্ষণ এবং কল্যাণমূলক ব্যবস্থা সব থেকে ভালভাবে করতে পারে। অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন: “Herbert Spencer among them took this individualist liberalism to a preposterous height when he attributed the need of the state only to the necessity of protection against crime.”
চুক্তিবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন লক্ থেকে শুরু করে হারবার্ট স্পেনসার পর্যন্ত উদারনীতিবাদের যে ধারা তা ক্ল্যাসিক্যাল উদারনীতিবাদ হিসাবে পরিচিত। এই ক্লাসিক্যাল উদারনীতিবাদের তিনটি ধরন আছে। লক নিজেই ক্ল্যাসিক্যাল উদারনীতিবাদের একটি ধারার নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর একটি ধারার নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যাডম স্মিথ ও তাঁর অনুগামীরা। ক্লাসিক্যাল উদারনীতিবাদের তৃতীয় ধারাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন হারবার্ট স্পেনসার ও ইংরেজ উপযোগবাদীরা।
(ছ) ঊনবিংশ শতাব্দীতে টমাস হিল গ্রীণের হাতে উদারনীতিবাদের এই চরম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী ভাষ্যের পরিবর্তন সাধিত হয়। গ্রীণ উদারনীতির ভাষ্যে সম্পূর্ণ এক নতুন মাত্রা সংযুক্ত করেন। সামাজিক প্রেক্ষাপটে তিনি ব্যক্তির বিষয়টিকে বিচার-বিবেচনা করেন। তার অভিমত অনুযায়ী ব্যক্তি মানুষ হল আত্মসচেতন সত্তা। সামাজিক সত্তাকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ অসম্ভব। সুতরাং কেবলমাত্র সামাজিক কাঠামোর মধ্যেই ব্যক্তি মানুষের স্বাধিকার অর্থবহ হয়ে উঠে। এই সামাজিক কাঠামোর বাহ্যিক শর্তাদিসমূহ রাষ্ট্রই সরবরাহ করে থাকে। স্বভাবতই রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যক্তির স্বাধীনতার বিরোধী নয়। রাষ্ট্র ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির স্বাধীনতা ভোগের পথের প্রতিবন্ধকতাসমূহকে অপসারিত করা। অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন : “…intervention by the state is instrumental to the realisation of individual freedom.”
ঊনবিংশ শতাব্দীতে গ্রীণের উদারনীতিবাদ সমষ্টিবাদী (Collectivist) উদারনীতিবাদ হিসাবে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে একটি বিশিষ্ট মতাদর্শ হিসাবে উদারনীতিবাদ বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তবে রাজনীতিক মতাদর্শ হিসাবে উদারনীতিবাদের সঙ্গে অতঃপর আরও নতুন মাত্রা সংযুক্ত হতে থাকে।
(জ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী পর্বে উদারনীতিবাদের এলাকা অধিকতর প্রসারিত হয়। এই সময় ব্যক্তির স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত হিসাবে আর্থনীতিক নিরাপত্তার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ প্রসঙ্গে গ্রীণ (T. H. Green), কেইনস (J. M. Keynes), বিভারিজ (William Beveridge) প্রমুখ চিন্তাবিদদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সমস্ত চিন্তাবিদ্রা আর্থনীতিক নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু কল্যাণমূলক কর্মসূচীর মাধ্যমে উদারনীতিক মতাদর্শসমূহকে বাস্তবায়িত করার উপর জোর দেন। বলা হয় যে রাষ্ট্র এই সমস্ত কল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়িত করবে। এইভাবে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার বনিয়াদের উপর উদারনীতিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
(ঝ) মোটামুটি একই সময়ে উদারনীতিবাদের অপর একটি ভাষ্যের অভিব্যক্তি ঘটে। এ প্রসঙ্গে বার্কার, ম্যাকাইভার, ল্যাস্কি ও লিগুসে (A. D. Lindsay)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই শ্রেণীর উদারনীতিক সমাজবিজ্ঞানীরা গোষ্ঠীসমূহের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁদের অভিমত অনুযায়ী গোষ্ঠীসমূহের স্বাধিকার ব্যক্তি মানুষের স্বাধিকারকে সুনিশ্চিত করবে। সমাজের স্বেচ্ছামূলক গোষ্ঠীসমূহের সঙ্গে সক্রিয় সংযোগ-সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ব্যক্তি মানুষ কতদূর স্বাধীন, তার দ্বারাই ব্যক্তির যথার্থ স্বাধীনতার সম্যক বিচার সম্ভব।
বিংশ শতাব্দীতে কেইনস ও বিভারিজের উদ্যোগে সৃষ্ট উদারনীতিবাদ নয়া উদারনীতিবাদ (neo-liber alism) হিসাবে পরিচিত এবং লিন্ডসে ও ল্যাস্কির উদ্যোগে গড়ে উঠা উদারনীতিবাদ বহুত্ববাদী (pluralist) উদারনীতিবাদ হিসাবে পরিচিত।
(ঞ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে উদারনীতিবাদের জনকল্যাণমূলক ভাষ্যকে বাতিল করে উদারনীতিবাদের সাবেকি বা পুরাতন ধারণার পুনরুত্থানের ব্যাপারে তাত্ত্বিক উদ্যোগ-আয়োজন শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে যে সমস্ত চিন্তাবিদদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন হায়েক (F. A. Hayek), বারলিন (Isaiah Berlin), ফ্রিডম্যান (Milton Friedman), নজিক (Robert Nozick) প্রমুখ। যুদ্ধোত্তর কালের এই সমস্ত চিন্তাবিদদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য বর্তমান। তবে একটি মূল বিষয়ে এঁরা সবাই এক মত। ব্যক্তি মানুষকে একেবারে তার নিজের মত চলতে না দিলে ব্যক্তি-স্বাধীনতা পেতে পারে না। তার জন্য মুক্ত বাজার ব্যবস্থা ও পুলিশী রাষ্ট্রের প্রয়োজন। এই রাষ্ট্রের কাজকর্ম নিরাপত্তা, ন্যায় ও প্রতিরক্ষামূলক দায় দায়িত্ব সম্পাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
যুদ্ধোত্তর পর্বে হায়েক, নজিক, বারলিন, ফ্রিডম্যান প্রমুখদের উদারনীতিবাদ অনুযায়ী মানুষ নিজের স্বাধীন ইচ্ছাবলে যাবতীয় কষ্ট সহ্য করে। এই উদারনীতিবাদ লিবারটারিয়ানিজম (libertarianism) নামে অভিহিত হয়। এই ধারার উদারনীতিবাদ হল আসলে ক্ল্যাসিক্যাল উদারনীতিবাদের পুনরুত্থান।
(ট) উদারনীতিবাদের উপরিউক্ত ভাষ্য অনতিবিলম্বে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। সমালোচকরা ব্যক্তি মানুষের একক ও স্বতন্ত্র সত্তা বা অস্তিত্বের ধারণাকে বাতিল করে দেন। এই শ্রেণীর চিন্তাবিদদের মতানুসারে সমষ্টির মধ্যেই ব্যক্তির সত্তা নিহিত আছে। অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “They viewed the individual against the backdrop of his ‘situated self’ constituted by his myriad commitments to the social situation ..” এই ধারণায় বিশ্বাসী সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: সানডেল (Michael Sandel), টেলর (Charles Taylor), ম্যাক্ইনটায়ার (Alasdair Macintyre) প্রমুখ। আলোচ্য মতবাদ আপাত বিচারে উদারনীতিবাদের সমালোচনা হিসাবেই প্রতীয়মান হয়। এ কথা ঠিক। এতদসত্ত্বেও সমালোচনার মাধ্যমেই উদারনীতিবাদের পুনর্ব্যাখ্যা ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন: “…none of the propagators of this view abjured the liberal concern for the individual. They only added a new meaning to the identity of the individual by viewing it in a different context.”
স্যানডেল, টেলর, ম্যাকুইন টায়ার প্রমুখ সমালোচকদের উদারনীতিবাদ সমভোগবাদী বা কমিউনি টারিয়ানিজম (Communitarianism) হিসাবে পরিচিত। উদারনীতিবাদের এই ধারাটির উপাদানসমূহের সন্ধান শ্রীণের ধ্যান-ধারণার মধ্যে পাওয়া যায়।
উদারনীতিবাদের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায়ে একটি মন্তব্যের উল্লেখ অতিমাত্রায় প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছেন: “Indeed, of all the forms of liberalism theoretically formulated so far, only three stand out as original. These are the classical liberalism originating in 17th century and running upto the 19th century, the collectivist leberalism of the late 19th century as pioneered by Green and the 20th century pluralist version of liberalism.”
Leave a comment