ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পর সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামােকে গ্রহণ করে তাকে বাস্তবায়িত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অন্ধ অনুকরণ না করে ভারতবর্ষে বিকেন্দ্রীভূত দ্বৈত শাসনব্যবস্থাকে অনুসরণ করা হয়েছে। যথা— কেন্দ্রীয় প্রশাসন এবং রাজ্য প্রশাসন। যে-কোনাে সংগঠনের কার্যধারা বিভাগ (Line Department) এবং কর্মীবৃন্দ সংস্থা (Staff Agency) রয়েছে। ক্যাবিনেট সচিবালয় মুখ্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্য ও পরামর্শ দানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সচিবালয়ের পরামর্শ ও সাহায্য ব্যতিরেকে প্রধান প্রশাসকের পক্ষে সাফল্যের সঙ্গে কার্যধারা সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে কোম্পানির কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে নিয়ন্ত্রণকারী পর্ষদ ও কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলী সভার যাবতীয় ক্ষমতা একজন ভারত-সচিব ও ভারত শাসন পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ভারত শাসন আইন (১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে) একই অবস্থা বর্তমান ছিল।
স্বাধীনতা লাভের পর ভারতবর্ষের সংসদীয় কাঠামাে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হলেন মন্ত্রীপরিষদ ও ক্যাবিনেটের নেতা। ক্যাবিনেট ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে ব্রিটিশ কাঠামাের শাসন পরিষদের সচিব বর্তমানে ক্যাবিনেট সচিব নামেও পরিচিত হন। ক্যাবিনেট সচিবালয়ের উপরই ক্যাবিনেটের দক্ষতা অনেকাংশে নির্ভর করে। ক্যাবিনেট সচিবালয়ের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল -রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পর্কে অবহিত থাকা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলােচনা ও সমন্বয়ের সমস্যার উপর সচিবালয় বিশেষ পরামর্শ দিয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে ক্যাবিনেট সচিবালয় বিভিন্ন বিভাগের কাজের পদ্ধতি ও কর্মধারা বণ্টন করে থাকে।
উপরে আলােচিত বিষয়গুলি ছাড়াও নিম্নলিখিত তথ্যগুলি নিয়ে ক্যাবিনেট সচিবালয়ের আলােচনা করতে দেখা যায়, সেগুলি হল一
- অর্ডিন্যান্স-সহ আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত বিষয়।
- পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও তথ্য প্রেরণ সংশ্লিষ্ট বিষয়।
- সংসদ আহ্বান করা, স্থগিত রাখা বা লােকসভা ভেঙে দেওয়ার বিষয়।
- সন্ধি ও চুক্তি সম্পর্কিত বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ আলােচনা।
- বিদেশে প্রতিনিধি দল প্রেরণ সংক্রান্ত বিষয়।
- তদন্ত কমিটি নিয়ােগের প্রস্তাব এবং তাদের রিপাের্ট পর্যালােচনা করা।
- অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিষয়।
- ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত বা নির্দেশের জন্য উত্থাপিত কোনাে বিষয়।
- সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোনাে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়।
- বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনৈক্যের বিষয় প্রভৃতি।
ক্যাবিনেট সচিবালয়ের গঠন
ক্যাবিনেট সচিবালয়ে একজন ক্যাবিনেট সচিব থাকেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টারুপে কাজ করেন। সচিবালয়ের সমস্ত কমিটির তিনি হলেন সভাপতি এবং উচ্চতর নির্বাচন বোর্ডের সভাপতি রূপে পরিচিত। ক্যাবিনেট সচিবালয় কয়েকটি দপ্তর নিয়ে গঠিত। এগুলি হল প্রধান সচিবালয়, সংগঠন ও পরিচালন বিভাগ, সামরিক শাখা এবং অর্থনৈতিক শাখা। প্রধান সচিবালয় ক্যাবিনেট সমন্বয়ের প্রশাসনের শাখাসমূহ নিয়ে গঠিত হয়। ক্যাবিনেট ও সাব-কমিটির মিটিং সংক্রান্ত কার্যাবলির জন্য দায়িত্বশীল সংগঠন রয়েছে। এই পরিচালন বিভাগের প্রশাসনিক উদ্দেশ্যগুলি হল নেতৃত্বের জোগান দেওয়া এবং চালনা করা; সংগঠন ও পরিচালন কর্মের দক্ষতা, যােগ্যতা ও সহযােগিতামূলক উদ্যোগের দ্বারা তথ্যের সাধারণ ভাণ্ডার গড়ে তােলা। ক্যাবিনেট সচিবালয়ের সামরিক শাখা ক্যাবিনেটের প্রতিরক্ষা কমিটির সভার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল কার্যাবলির জন্য দায়িত্বশীল থাকে।
ক্যাবিনেট সচিব ও তাঁর কার্যাবলী
ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয়ের প্রশাসনিক পরিষদের সচিবের উত্তরাধিকারী হলেন ক্যাবিনেট সচিব, গােপালস্বামী আয়েঙ্গারের রিপাের্ট অনুযায়ী ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশে প্রধানতম সরকারি কর্মচারী হলেন ক্যাবিনেট সচিব। মুখ্যসচিবদের সম্মেলনে তিনিই সভাপতিত্ব করেন। আয়েঙ্গারের মতে, ক্যাবিনেট সচিব উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক আধিকারিক।ক্যাবিনেট সচিবালয়ের প্রধান হিসেবে তিনি সমন্বয়সাধনের ভূমিকা পালন করেন। ক্যাবিনেট সচিব হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি সরকারের স্থায়ী কৃত্যকের সকল স্তরের কর্মচারীদের আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জন করে থাকেন।
ড. আয়েঙ্গারের মতে, ক্যাবিনেট সচিবের হাতে বিশেষ কোনাে কাজের দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়, কারণ তা বিভাগগুলির প্রধানদের উদ্যোগ ও দায়িত্ববােধকে দুর্বল করে দেয়। তার মতে, প্রশাসনিক নিয়ােগের ব্যাপারে নির্বাচন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের পরামর্শদান সংক্রান্ত যেসকল সচিবের কমিটি গঠিত হবে, নিজ পদাধিকারবলে ক্যাবিনেট সচিব হবেন তাদের সভাপতি। অর্থাৎ কৃত্যকে পদমর্যাদা পেতে হলে তাকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি কৃত্যকের (আমলা) প্রথম সদস্য হিসেবে সম্মানলাভ করতে হবে, যার বিচারবোধ ও নিরপেক্ষতা হবে নির্ভরযােগ্য।
Leave a comment