প্রশ্নঃ কোম্পানি আইন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার শেয়ারের বর্ণনা দাও।

ভূমিকাঃ শেয়ার ও ঋণপত্র কোন কোম্পানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ শেয়ার ও ঋণপত্রের মাধ্যমে একটি কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ করে থাকে। শেয়ারের মালিকগণই মূলত: কোম্পানির মালিক। তবে পাবলিক কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরযোগ্য হলেও প্রইভেট কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরযোগ্য নয়।

শেয়ার (Share) কাকে বলেঃ কোম্পানি আইনের ২(১-এস) ধারা অনুযায়ী-

শেয়ার বলতে কোম্পানির মূলধনের কোন অংশকে বোঝাবে। এছাড়া ব্যক্ত বা অব্যক্ত কোন স্টক ও শেয়ারের পার্থক্য প্রকাশ পেলে সেই স্টক ছাড়া অন্যান্য স্টকও এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিচারপতি ফেয়ারওয়েল এর মতে, অর্থ দ্বারা পরিমাপযোগ্য স্বার্থকে শেয়ার বলে।

সুতরাং বলা যায়, কোম্পানির মোট মূলধনকে নির্দিষ্ট এককে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে তার প্রত্যেকটিকে এক একটি শেয়ার বলে।

কোম্পানি আইন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার শেয়ারের বর্ণনাঃ নিম্নে কোম্পানি আইন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার শেয়ারের বর্ণনা করা হলোঃ

(১) অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার : কোম্পানির লভ্যাংশ বন্টন করার সময় অথবা কোম্পানি বিলোপ হলে মূলধন ফেরতের ক্ষেত্রে যে সকল শেয়ার মালিক অগ্রাধিকার পান সেই সকল শেয়ারকে অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার বলে। 

অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

(ক) সঞ্চয়ী অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার : কোম্পানির লোকসানের কারণে যে অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ পরবর্তী বছরের জন্য সঞ্চিত রাখা হয় তাকে সঞ্চয়ী অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার বলে।

(খ) অসঞ্চয়ী অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার : যে অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ পরবর্তী বছরের জন্য সঞ্চিত রাখা হয় না তাকে অসঞ্চয়ী অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার বলে। 

(গ) পরিশোধযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার : যে সকল অগ্রাধিকার শেয়ারের অর্থ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে পরিশোধ করা হয় তাকে পরিশোধযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বলে। 

(ঘ) অপরিশোধযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার : যে সকল অগ্রাধিকার শেয়ারের অর্থ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে পরিশোধ করা হয় না তাকে অপরিশোধযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বলে। এই ধরনের শেয়ার শুধু কোম্পানি বিলোপ হলে ফেরতযোগ্য হয়।

(ঙ) রূপান্তরযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার : কোন শেয়ার বিক্রির সময় যদি শর্ত থাকে যে নির্দিষ্ট সময় পরে তা রূপান্তর করা যাবে তাহলে উক্ত শেয়ারকে রূপান্তরযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বলে।

(চ) প্রতিশ্রুতিযুক্ত অগ্রাধিকার শেয়ার : কোন শেয়ারের লভ্যংশ প্রদানে এবং মূলধন পরিশোধের বিষয়ে অন্য কোন কোম্পানি প্রতিশ্রুতি প্রদান করলে তাকে প্রতিশ্রুতিযুক্ত অগ্রাধিকার শেয়ার বলে।

(২) সাধারণ শেয়ার বা ইকুইটি শেয়ার : সাধারণ শেয়ার মালিকদের মধ্য থেকে পরিচালক নিযুক্ত হয়। অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ প্রদানের পর অবশিষ্ট থাকলে সাধারণ শেয়ার মালিকদের লভ্যংশ প্রদান করা হয়। একটি কোম্পানিতে সাধারণ শেয়ারের পরিমাণ অধিক থাকে। এই ধরনের শেয়ার মালিকদের ঝুঁকি বেশি। কারণ মুনাফা কম বা বেশি হলে তাদের লভ্যাংশও কম-বেশি হয়।

(৩) বিলম্বিত দাবিযুক্ত শেয়ার বা প্রবর্তকদের শেয়ার : অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার এবং সাধারণ শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ ও মূলধন ফেরত দেওয়ার পর অবশিষ্ট লভ্যাংশ ও মূলধন যে সকল শেয়ার মালিকদের প্রদান করা হয় সেই সকল শেয়ার হলো বিলম্বিত দাবিযুক্ত শেয়ার বা প্রবর্তকদের শেয়ার। প্রবর্তকদের অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রদানের লক্ষ্যে এই ধরনের শেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়।

(৪) রাইট শেয়ার : কোম্পানি গঠন করার ২ বছর পর অথবা প্রথম শেয়ার বন্টনের ১ বছর পর কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির জন্য যে শেয়ার বন্টন করা হয় তাকে রাইট শেয়ার বা অধিকার শেয়ার বলে। এক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের আনুপাতিকহারে শেয়ার বিক্রয়ের প্রস্তাব দিতে হবে। এর জন্য কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে প্রস্তাব গৃহীত না হলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে গণ্য হবে।

(৫) বোনাস শেয়ার : কোম্পানির লভ্যাংশ যদি নগদ অর্থে পরিশোধ না করে তার পরিবর্তে এ শেয়ার প্রদান করা হয় তাহলে তাকে বোনাস শেয়ার বলে।

উপসংহারঃ ঋণপত্র বিক্রয় কোম্পানির এক ধরনের ঋণ। যার নিকট ঋণপত্র বিক্রয় করা হয় তাকে এই ঋণের উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হয়। সাধারণত কোন কোম্পানি যখন মূলধনের অভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না তখন এই ঋণপত্র বিক্রয় করে মূলধন সংগ্রহ করা হয়।