প্রশ্নঃ কোন কোন দলিল বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে? নিবন্ধনযোগ্য দলিল নিবন্ধন না করার ফলাফল কি? নিবন্ধন না করার বিরুদ্ধে কি প্রতিকার আছে?
যে সকল দলিল বাধ্যতামুলকভাবে নিবন্ধন করতে হবেঃ ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭ ধারার বিধান মোতাবেক নিম্নোক্ত দলিলগুলি বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রিকরণযোগ্য করা হয়েছে-
১. নিম্নোক্ত দলিলগুলি রেজিস্ট্রি করতে হবে- যদি তা ঐ জেলায় অবস্থিত সম্পত্তি সম্পর্কে সম্পাদিত হয় এবং যদি তা ১৮৬৪ সালের ১৬নং আইন অথবা ১৮৬৬ সালের রেজিস্ট্রিকরণ আইন অথবা ১৮৭১ সালের রেজিস্ট্রিকরণ আইন অথবা ১৮৭৭ সালের রেজিস্ট্রিকরণ আইন কার্যকর হওয়ার দিনে বা পরবর্তীকালে সম্পাদিত হয়ে থাকে।
(ক) স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র;
(খ) উইল ছাড়া অন্যান্য দলিলপত্র যা একশ টাকা বা তদূর্ধ্ব বা কোন স্থাবর সম্পত্তিকে বর্তমান বা ভবিষ্যতে কায়েমী বা সম্ভাব্য কোন অধিকার, স্বত্ব বা সুযোগ সুবিধা জন্মায়, ঘোষণা করে, অর্পণ করে, সীমাবদ্ধ করে বা নি:শেষিত করে।
এখানে একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কোন বন্ধকী দলিল হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যে অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর দলিল সম্পাদিত হয়, রেজিস্ট্রিকরণের জন্য তাই মূল্য বলে বিবেচিত হবে।
(গ) উইল ছাড়া অন্যান্য দলিলপত্র যা কোন অধিকার, স্বত্ব বা সুযোগ সুবিধা জন্মানো, ঘোষণা, অৰ্পণ, সীমাবদ্ধকরণ বা নিঃশেষিত হবার প্রতি বিনিময়মূল্য স্বরূপ কোন কিছুর প্রাপ্তি বা প্রদান স্বীকার করে।
(ঘ) স্থাবর সম্পত্তি বছরান্তে বা এক বছরের অধিক মেয়াদের ইজারা বা বার্ষিক খাজনার শর্তে ইজারার দলিল।
(ঙ) উইল ছাড়া অন্যান্য দলিলপত্র যা কোন আদালতের ডিক্রী বা হুকুমনামা অথবা কোন বিচার নিষ্পত্তির, হস্তান্তর বা অর্পণ করে এবং যখন এরকম ডিক্রী হুকুমনামা বা বিচার নিষ্পত্তিতে একশ টাকা বা তার বেশি বা কোন স্থাবর সম্পত্তিতে বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কায়েমী বা সম্ভাব্য কোন অধিকার, স্বত্ব বা সুযোগ সুবিধা জন্মায়, ঘোষণা করে সীমাবদ্ধ করে বা নিঃশেষিত করে।
তবে কোন জেলা বা জেলার অংশে সম্পাদিত কোন ইজারাকে যদি উক্ত ইজারার মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশি না হয় বা বার্ষিক খাজনা ৫০ টাকার বেশি না হয় তবে সরকার সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই উপধারার আওতামুক্ত করতে পারেন।
২. উপরিউক্ত বিধানের খ ও গ দফার কোন কিছু নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না :
(ক) কোন প্রকার সোলেনামা; অথবা
(খ) জয়েন্ট স্টক কোম্পানির শেয়ার সম্পর্কিত কোন দলিল যদিও উক্ত কোম্পানির সম্পত্তির সম্পূর্ণ বা আংশিক স্থাবর সম্পত্তি হয়; অথবা
(গ) উপরিউক্ত কোম্পানিকে ইস্যুকৃত কোন ডিবেঞ্চার যা কোন স্থাবর সম্পত্তিতে কোন প্রকার অধিকার, স্বত্ব বা সুযোগ সুবিধা জন্মায় না, ঘোষণা করে না, অর্পণ করে না, সীমাবদ্ধ করে না বা নি:শেষিত করে না, তবে যতদূর পর্যন্ত সিকিউরিটি হোল্ডার রেজিস্ট্রিকৃত কোন দলিল দ্বারা উপরিউক্ত সুযোগ প্রাপ্ত হয় যে দলিলে কোম্পানির স্থাবর সম্পত্তির সম্পূর্ণ বা আংশিক অথবা উক্ত সম্পত্তিতে কোন প্রকারের স্বার্থ, ডিবেঞ্চার হোল্ডারের সুবিধার্থে ট্রাস্ট মারফত ট্রাস্টীদের নিকট বন্ধক দেয়, সমর্পণ করে বা অন্যভাবে হস্তান্তর করে; অথবা
(ঘ) কোন সম্পত্তির ইস্যুকৃত কোন ডিবেঞ্চার পৃষ্ঠাঙ্কন করা বা অন্যের নিকট হস্তান্তর করা;
(ঙ) কোন দলিল যাতে একশ টাকা বা তার বেশি মূল্যের কোন স্থাবর সম্পত্তিতে কোন প্রকার অধিকার, স্বত্ত্ব বা স্বার্থ জন্মায় না, ঘোষণা করে না, অর্পণ করে না, সীমাবদ্ধ করে না বা নিঃশেষিত করে না; কিন্তু কেবলমাত্র যদি অপর কোন দলিল প্রাপ্তির অধিকার জন্মায়, যার সম্পাদনের কোন অধিকার, স্বত্ব বা স্বার্থ জন্মায়, ঘোষণা করে, অর্পণ করে, সীমাবদ্ধ করে বা নিঃশেষিত করে; অথবা
(চ) আদালতের ডিক্রী বা হুকুমনামা কিন্তু যাতে মামলার বিষয়বস্তু ছাড়া অন্য কোন স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্ক কোন রকম সোলেনামা সম্পাদিত হয় বা হবে বলে প্রকাশিত হয় সে ডিক্রী বা হুকুমনামা ছাড়া; অথবা
(ছ) সরকার কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত কোন স্থাবর সম্পত্তি; অথবা
(জ) রেভিনিউ অফিসার কর্তৃক কোন বাটোয়ারা দলিল; অথবা
(ঝ) ১৮৭১ সালের ভূমি উন্নয়ন আইন বা ১৮৭৩ সালের ভূমি উন্নয়ন ঋণ আইন অনুসারে প্রদত্ত ঋণের কোন হুকুমনামা বা আনুষঙ্গিক সিকিউরিটি দলিল পত্রাদি; অথবা
(ঞ) ১৮৮৪ সালের কৃষি ঋণ আইনে প্রদত্ত ঋণের কোন হুকুমনামা বা প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের জামিনস্বরূপ কোন দলিল; অথবা
(ট) বন্ধকী দলিলের পৃষ্ঠে বন্ধকী টাকার উসুল লেখা বা বন্ধক সম্পর্কিত প্রাপ্য টাকার উসুল দেয়া কোন দলিল যদি এ রসিদ দ্বারা বন্ধক সমাপ্তি না বুঝায়; অথবা
(ঠ) সিভিল বা রেভিনিউ অফিসার কর্তৃক প্রকাশ্য নিলামে বিক্রীত সম্পত্তি ক্রেতাকে দেয়া বায়নানামা; অথবা
(ড) যে ক্ষেত্রে ইজারা দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে সেক্ষেত্রে এর প্রতিলিপিও রেজিস্ট্রি করতে হবে ।
৩. উপরিউক্ত দলিলসমূহ ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার দলিলপত্রের রেজিস্ট্রিকরণ ঐচ্ছিক।
ফলাফলঃ রেজিস্ট্রিকরণে অস্বীকৃতির বিরুদ্ধে আপীলের বিধান ও পদ্ধতি রেজিস্ট্রেশন আইনের ৭২ হতে ৭৭ ধারায় বর্ণিত হয়েছে।
৭২ ধারায় বলা হয়েছে যে, সম্পাদনে অসম্মতি ব্যতীত অন্য কোন কারণে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকরণের জন্য দলিল গ্রহণে অস্বীকার করলে এরূপ আদেশ প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে তার ঊর্ধ্বতন রেজিস্ট্রারের নিকট আপীল করা যাবে। রেজিস্ট্রার যদি দলিলটি রেজিস্ট্রিকৃত হবে বলে নির্দেশ দেন এবং এরূপ নির্দেশ দানের ৩০ দিনের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট প্রথম যেদিন দাখিল করা হয়েছিল সেদিন হতে তা কার্যকরী হবে।
৭৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, দলিল সম্পাদনকারী বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক অসম্মতি জ্ঞাপন করার দরুন সাব-রেজিস্ট্রার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে উক্ত আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে ঊর্ধ্বতন রেজিস্ট্রারের নিকট উক্ত দলিল রেজিস্ট্রিকরণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দরখাস্ত করতে পারেন।
৭৪ ধারা মতে, রেজিস্ট্রার সুবিধা অনুযায়ী যতশীঘ্র সম্ভব নিম্নোক্ত বিষয়গুলি তদন্ত করবেনঃ
(ক) দলিলটি সত্যই সম্পাদিত হয়েছে কিনা,
(খ) দরখাস্তকারী বা দলিল দাখিলকারী সেই সময়ে বলবৎ আইনের শর্তাবলী পালন করেছেন কি না।
প্রতিকারঃ রেজিস্ট্রেশন আইনের ৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার ৭৫ বা ৭৬ ধারা অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রি করার আদেশ দিতে অস্বীকার করেন সেক্ষেত্রে ঐ দলিল মোতাবেক দাবিদার বা তার প্রতিনিধি উক্ত অস্বীকৃতির ৩০ দিনের মধ্যে যে দেওয়ানী আদালতের অফিস বা মৌলিক এখতিয়ারাধীনে উক্ত রেজিস্ট্রি অফিস অবস্থিত সেই আদালতে ঐ দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে এই মর্মে ডিক্রী প্রাপ্তির জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন । উক্ত দলিলই এরূপ মামলায় সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
Leave a comment