প্রশ্নঃ কোন কোন অবস্থায় দণ্ডনীয় নরহত্যা খুন নহে তা বর্ণনা কর।

দণ্ডনীয় নরহত্যা খুন নয়ঃ বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০০ ধারায় খুনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং এ ধারায় কতিপয় ব্যতিক্রমের বর্ণনা দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে দণ্ডনীয় নরহত্যা হলেও তা খুনের পর্যায়ে পড়ে না। এগুলি নিম্নরূপঃ-

প্রথম ব্যতিক্রমঃ অপরাধমূলক প্রাণহানি খুনের পর্যায়ে পড়বে না, যদি মারাত্মক ও আকস্মিক প্ররোচনার ফলে অপরাধী আত্মসংযম শক্তি হারায়ে ফেলে এবং এরূপ অবস্থায় প্ররোচনা দানকারীর মৃত্যু ঘটায় অথবা ভুলক্রমে বা দুর্ঘটনাক্রমে অনুরূপ অবস্থায় অন্য কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায়।

তবে এই ব্যতিক্রমটি নিম্নলিখিত শর্তাধীন। প্রথমত, প্ররোচনাটি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার বা তার ক্ষতি সাধনের অজুহাত হিসেবে অপরাধী কর্তৃক স্বয়ং প্রার্থিত বা প্ররোচিত হতে পারবে না।

দ্বিতীয়তঃ এরূপ উত্তেজনা আইন পালনার্থে কৃত কোন কার্য দ্বারা কিংবা কোন সরকারী কর্মচারী কর্তৃক আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে উদ্ভূত হওয়া চলবে না।

তৃতীয়তঃ এরূপ উত্তেজনা আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকারের আইনানুগ প্রয়োগের ব্যাপারে কৃত কোন কার্য দ্বারা প্রদত্ত হলে চলবে না।

এখানে প্রদত্ত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, প্ররোচনাটি এমন মারাত্মক ও আকস্মিক ছিল, যার ফলে অপরাধটি খুনের শামিল হবে না— এরূপ প্রশ্নটি ঘটনাজনিত প্ৰশ্ন।

উদাহরণঃ ক, খ কে আঘাত করে। এতে খ ভীষণ রাগান্বিত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। নিকটে দণ্ডায়মান এক ব্যক্তি গ খ এর এরূপ উত্তেজনাকে ব্যবহার করার জন্য এবং তাকে দিয়ে ক এর মৃত্যু ঘটানোর জন্য খ এর হাতে একটি ছুরি দেয়। খ সেই ছুরি দ্বারা ক কে হত্যা করে। এক্ষেত্রে খ এর অপরাধটি খুনের পর্যায়ে পড়বে না, অপরাধমূলক নরহত্যা; কিন্তু গ, এর অপরাধটি খুন হিসেবে গণ্য হবে।

দ্বিতীয় ব্যতিক্রমঃ অপরাধজনক প্রাণহানি খুনের পর্যায়ে পড়বে না, যদি অপরাধী সরল মনে তার আত্মরক্ষার কিংবা সম্পত্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগক্রমে তাকে আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা সীমা অতিক্রম করে এবং যার বিরুদ্ধে সে এই অধিকার প্রয়োগ করে, তা কোনরূপ পূর্ব পরিকল্পনা ব্যতীত কিংবা অনুরূপ অধিকার রক্ষার জন্য যতটুকু ক্ষতিসাধন করা প্রয়োজন তদপেক্ষা বেশী ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা ব্যতিরেকে তার মৃত্যু ঘটায়।

উদাহরণঃ ক একটি চাবুক দিয়ে খ কে প্রহার করতে থাকে। তাকে এমন ভাবে প্রহার করে বা করতে চায় যেনো খ এর শরীরে কোনরূপ মারাত্মক জখম না হয়, ক কে থামানোর জন্য খ পকেট হতে একটি পিস্তল বের করে এবং ক কে ভয় দেখায়। এতেও ক থামে না এবং খ কে তার প্রহার অব্যাহত রাখে। এমতাবস্থায় আত্মরক্ষার আর কোন উপায় নাই বলে সরল বিশ্বাসে খ ক এর প্রতি গুলি ছোড়ে। এতে ক মারা যায়। এক্ষেত্রে ক এর অপরাধটি খুন হিসেবে গণ্য না হয়ে অপরাধমূলক প্রাণহাণি হবে যা খুনের পর্যায়ে পড়ে না৷

তৃতীয় ব্যতিক্রমঃ যদি কোন সরকারী কর্মচারী সরল বিশ্বাসে তার সরকারী দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে গিয়ে আইনানুগ ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে ফেলে এবং এরূপ কার্য করে কারো মৃত্যু ঘটায় যে কার্যটি তার কর্তব্য পালনের ব্যাপারে আইনানুগ ও প্রযোজন বলে সে বিশ্বাস করে এবং যে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে তার প্রতি অপরাধীর কোন শত্রুতা না থেকে থাকে, তাহলে এরূপ অপরাধজনক নরহত্যা খুনের শামিল বলে গণ্য হবে না।

চতুর্থ ব্যতিক্রমঃ অপরাধমূলক নরহত্যা খুনের পর্যায়ে পড়বে না যদি অপরাধটি আকস্মিক উত্তেজনার ফলে কোন প্রকার পূর্ব-পরিকল্পনা ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত হয় এবং অপরাধকারী কোন অন্যায় সুযোগ গ্রহণ না করে থাকে অথবা অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে কোন কাজ না করে থাকে। এখানে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কোন পক্ষ উত্তেজনা সৃষ্টি করলো বা প্রথমে আঘাত করলো তা অবান্তর।

পঞ্চম ব্যতিক্রমঃ সর্বশেষ ব্যতিক্রমটি হচ্ছে এই যে, ১৮ বছরের অধিক বয়ষ্ক ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করে কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি গ্রহণ করে তাহলে এরূপ অপরাধজনক নরহত্যা খুন বলে গণ্য হবে না।

উদাহরণঃ ক ১৮ বছরের কম বয়ষ্ক ব্যক্তি খ কে আত্মহত্যার জন্য প্রবৃত্ত করে। যদিও খ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করে তবুও কম বয়সের কারণে সে স্বেচ্ছায় এতে সম্মতি দিয়েছে তা বলা যায় না। এক্ষেত্রে ক খুনে প্ররোচনার জন্য দায়ী হবে, বয়স ১৮ বছরের বেশী হলে সেক্ষেত্রে খুন না হয়ে অপরাধমূলক নরহত্যা হিসেবে গণ্য হতো।

এই ধারাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, (ক) উস্কানি (খ) আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার (গ) আইনানুগ ক্ষমতার প্রয়োগ, (ঘ) পূর্ব-পরিকল্পনার অনুপস্থিতি ও ক্রোধের উন্মত্ততা, এবং (ঙ) সম্মতি। এ ৫টি ক্ষেত্রে অপরাধমূলক নরহত্যা খুনের পর্যায়ে পড়বে না। এই ব্যতিক্রমগুলি অবশ্য দণ্ডবিধির ৪র্থ অধ্যায়ে বর্ণিত সাধারণ ব্যতিক্রমের অতিরিক্ত।