সংবিধানে মৌলিক কর্তব্যগুলির অন্তর্ভুক্তি
৪২তম সংবিধান সংশােধনী (১৯৭৬) এবং ৮৬তম সংশােধনীর (২০০২) দ্বারা মৌলিক কর্তব্যগুলি ভারতের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় এগুলি পুরােপুরি নিরঙ্কুশ নয়। সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ১২-৩৫ নং ধারার মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য মােট ছয় প্রকার মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ হয়েছে। সেগুলি হল-
-
[1] সাম্যের অধিকার,
-
[2] স্বাধীনতার অধিকার,
-
[3] শােষণের বিরুদ্ধে অধিকার,
-
[4] ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার,
-
[5] সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার এবং
-
[6] শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার।
সাধারণ অবস্থায় এবং জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র মৌলিক অধিকারগুলির ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরােপ করতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনস্বার্থ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রীবন্ধন, সদাচার ও শালীনতা রক্ষা, আদালত অবমাননা ও মানহানি প্রতিরােধ প্রভৃতি কারণে মৌলিক অধিকারগুলির ওপর বিধিনিষেধ আরােপিত হতে পারে।
অন্যদিকে, বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সশস্ত্র বাহিনী বা শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভারপ্রাপ্ত বাহিনীর লােকজনদের ক্ষেত্রে কর্তব্যে গাফিলতি বা নিয়মানুবর্তিতা লঙ্ঘনের কারণে, দেশের কোনাে অংশে বা সমগ্র দেশে সামরিক আইন বলবৎ করা হলে, দেশে জরুরি অবস্থা ঘােষিত হলে সাময়িকভাবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি অকার্যকর হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত বলা যায়, সংবিধানের ২১ নং ধারায় বর্ণিত জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারকে কোনাে অবস্থায়ই স্থগিত রাখা যায় না।
কাজেই উপরােক্ত আলােচনা থেকে এটা অনেকটাই সুস্পষ্ট হয় যে, মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতি সম্পূর্ণ নিরঙ্কুশ নয়। তা ছাড়া সংবিধানের ২৫তম সংশােধনী অনুযায়ী ৩৯(খ) এবং ৩৯(গ) নং ধারায় বর্ণিত নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে বলবৎ করতে গিয়ে সংসদ-প্রণীত কোনাে আইন যদি মৌলিক অধিকারের ১৪, ১৯ এবং ৩১ নং ধারার বিরােধী হয়, তবু তা বাতিল বলে গণ্য হবে না। সংবিধান-বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে মৌলিক অধিকারের ওপরে নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
Leave a comment