ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা কোঠারি কমিশনের (১৯৬৪-৬৬ খ্রি.) রিপোর্ট বয়স্ক শিক্ষার উল্লেখ আছে। এই কমিশনের মূল লক্ষ্য হল— (১) দেশ থেকে যতদূর সম্ভব নিরক্ষরতা দূর করার চেষ্টা করতে হবে (২) পরিবর্তনশীল জগৎ সম্পর্কে বয়স্কদের উপলব্ধি করাতে হবে এবং তাদের জীবনব্যাপী শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে।

কমিশনের মতে দেশ থেকে নিরক্ষরতা পূর্ণমাত্রায় দূর করার জন্য ২০ বছরের বেশি সময় লাগা উচিত নয়। ১৯৭১ এবং ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষিতের হার হবে ৫০% এবং ৪০%।

➽ বয়স্ক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা:

(১) বয়স্ক ব্যক্তিরা যেসব কাজে যুক্ত সেইসব কাজকে কেন্দ্র করে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করলে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে।

(২) বয়স্ক ব্যক্তিদের শিক্ষার মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন করলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হবে।

(৩) গণতন্ত্রকে সফল করতে বয়স্ক শিক্ষার প্রয়োজন।

(৪) অবসর সময়কে অর্থবহ করে তোলার জন্য এর প্রয়োজন। 

(৫) ব্যক্তি তথা সমষ্টিগতভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বয়স্ক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে।

(৬) বুদ্ধিমান ও সক্ষম নাগরিক তৈরির জন্য এর দরকার। 

(৭) ধর্মীয় ভেদাভেদ, কুসংস্কার দূর করতে বয়স্ক শিক্ষার প্রয়োজন।

➽ করণীয় বিষয় :

(১) আংশিক সময়ের শিক্ষা : ১১-১৪ বছরের যে সকল ছেলে মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেনি বা শিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেছে, তাদের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।

(২) সাধারণ এবং বৃত্তিশিক্ষা : ১৫-৩০ বছর বয়স্কদের জন্য আংশিক সময়ের সাধারণ শিক্ষা এবং বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৩) নিরক্ষরতা দূরীকরণ : নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য দু-ভাবে কাজ করতে হবে যা দুটি পন্থা অনুযায়ী হয় যথাক্রমে—(a) Selective approach (b) Mass approach।

(a) Selective approach : যেসব জায়গায় সহজে নিরক্ষরদের খুঁজে বার করা যায় যেমন—কলকারখানা, শিল্প-বাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদি। সেখানকার মালিক তার কর্মীদের স্বাক্ষর করে তোলার ব্যবস্থা করবেন।

(b) Mass Approach : এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য শিক্ষিত জনগণ, ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সকলকে নিয়ে অভিযান চালাতে হবে। এক-একটা দলকে, এক-একটা অঞ্চলের লোকজনের শিক্ষিত করার দায়িত্ব দেওয়া হবে।

➧ যারা কম লেখাপড়া শিখেছেন, তাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।

➧ শ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বাড়ানাের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

➧ আংশিক সময়ের শিক্ষাও যারা গ্রহণ করতে পারছে না, তাদের জন্য ডাকযোগে শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।

➧ উপযুক্ত পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

➧ দেশের জনসাধারণ শিক্ষিত হলে গণতন্ত্র সফল হবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।

(১) গণতান্ত্রিক মানসিকতা সৃষ্টির জন্য নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলেছে।

(২) কৃষিপ্রধান দেশে কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষকদের শিক্ষিত করার প্রয়োজন।

(৩) বড় বড় শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদের যত শীঘ্র সম্ভব সাক্ষর করে তােলা প্রয়ােজন।

(৪) এই কর্মসূচিতে ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।

(১) জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬-তে নিরক্ষরতা দূরীকরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র নাম সই করতে পারলেই চলবে না, নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।

(২) জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬-তে বলা হয়েছে, শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ১৪-৩৪ বছরের বয়স্ক দের নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে।

(৩) কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক, ছাত্র, যুবক প্রত্যেককেই এই কাজে আগ্রহের সঙ্গে দায়িত্ব নিতে হবে।

(৪) বয়স্ক শিক্ষা বাস্তবায়িত করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন— (1) গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা, (2)  শিল্প ও অন্যান্য বাণিজ্য সংস্থার মালিক কর্তৃক তাদের কর্মচারীদের জন্য শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা, (3)  মাধ্যমিক পরবর্তী স্তরের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, (4) পুস্তক প্রকাশের ব্যবস্থা করা, (5) পাঠাগার স্থাপন করা, (6) এই কাজে রেডিয়াে, পাঠাগার স্থাপন করা, দূরদর্শন, সিনেমা প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলোকে বেশি করে ব্যবহার করা এবং (7) বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

এভাবে কোঠারি কমিশন ও জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ সমূহ সরকারি স্তরে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং গৃহীত হয়েছে। বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ফিল্ড ওয়ার্কার, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি সকলকে এই কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য কাজে লাগানো হয়েছে।