ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা কোঠারি কমিশনে ১৯৬৪-৬৬ খ্রি.) প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দুই বছরের মধ্যে এই কমিশনের সুপারিশগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রকাশ করে। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষানীতিতে কিছু সংস্কার করা হয়। এমতাবস্থায় কে সি পন্থ ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে একটি নতুন শিক্ষানীতি রচনা করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে CABE-এর অনুমতির ভিত্তিতে ‘Challenge of Education: A policy perspective‘ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে, যা শিক্ষার ইতিহাসে জাতীয় শিক্ষানীতি, ১৯৮৬ নামে অভিহিত। এই শিক্ষানীতিতে যে-সমস্ত বিষয় আলােচনা করা হয় তার মধ্যে চারটি উল্লেখযোগ্য হল— (A) নবোদয় বিদ্যালয়, (B) অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড, (C) ডিগ্রিকে চাকরি থেকে বিযুক্তিকরণ এবং (D) স্বশাসিত কলেজ।

(A) নবোদয় বিদ্যালয়

জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অংশের আদর্শ বা নবোদয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। এই বিদ্যালয় দেশের অত্যন্ত মেধাবী শিশুদের উন্নতমানের মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ সুবিধা দান করবে।

নবোদয় বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য

(১) এই বিদ্যালয় প্রত্যেক জেলায় একটি করে থাকবে। বিদ্যালয়গুলো হবে অবৈতনিক। শিক্ষার সকল ব্যয় সরকার বহন করবে।

(২) বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে হবে। উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীরা ভর্তি হতে পারবে।

(৩) এক-তৃতীয়াংশ আসন মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়া তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য নির্দিষ্ট আসন সংরক্ষিত থাকবে।

(৪) পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে কলা, অঙ্ক, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, শারীরশিক্ষা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ইত্যাদি।

(৫) প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনটি ভাষা শিখতে হবে। যথা (a) মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, (b) হিন্দি ও (c) ইংরেজি।

(৬) নবম শ্রেণি থেকে শিক্ষার মাধ্যম হবে হিন্দি অথবা ইংরেজি।

(৭) এই বিদ্যালয়ে সারাবছর ধরে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।

(৮) এই বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।

(B) অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড

সমগ্র দেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য একটি কর্মপ্রকল্প নেওয়া হয়েছে তা হল— অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড। এখানে ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ শব্দটি প্রতীক হিসেবে ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলি হল— 

(১) ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করা।

(২) শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ চক, ডাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ড, মানচিত্র, চার্ট, মডেল ইত্যাদি সরবরাহ করা।

(৩) বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শ্রেণিতে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ করা।

(৪) বিদ্যালয়গুলিতে অন্তত দুটি বড়ে বড়ে ঘর থাকে, সেগুলো সব ঋতুর উপযোগী হবে।

(৫) প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকবে।

(৬) প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে অন্তত দুজন করে শিক্ষক থাকবে, যার মধ্যে একজন মহিলা হবে।

(C) ডিগ্রিকে চাকরি থেকে বিচ্ছিন্নকরণ

চাকরি থেকে ডিগ্রিকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে, কারণ ডিগ্রির দ্বারা প্রকৃত শিক্ষা প্রতিফলিত হয় না। কেবলমাত্র স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি, গবেষণা, আইন, ডাক্তারি, অধ্যাপনা, ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি পেশার ক্ষেত্রে জ্ঞানের পরিচয় বাহক হিসেবে ডিগ্রি দরকার। ডিগ্রির প্রতি যে মাহে আছে, তার বিরুদ্ধে মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ডিগ্রির প্রতি মােহ কমতে পারে শিক্ষার অপচয় ও কমবে। যদি শিক্ষাকে কর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়, তাহলে ডিগ্রিকে বিচ্ছিন্ন করতে অসুবিধা হবে না। কাজের বিভিন্ন দিক খুলে দিলে উচ্চশিক্ষার উপর চাপ কমবে। ডিগ্রিকে চাকরি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হলে জাতীয় স্তরে Standard Test-এর ব্যবস্থা করে কোন কাজের জন্য কে উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করতে হবে।

(D) স্বশাসিত কলেজ

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্বশাসিত কলেজ এবং উৎকর্ষ কেন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা। হয়েছে— 

(১) স্বশাসিত কলেজ গুলো হবে মেধাবী ও প্রতিভাবান ছাত্রদের জন্য। প্রথম পাঁচ বছরের জন্য কলেজগুলো স্বশাসন দেওয়া হবে, পরে কৃতিত্বের বিচার করে স্বশাসনের মেয়াদ বাড়ানাে হবে।

(২) কলেজ গুলো নিজেরাই পাঠক্রম, পাঠ্যসূচি তৈরি করছে, ভারত করে, পরীক্ষা দেবে এবং পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীদের সার্টিফিকেট দেবে।

(৩) এই ধরনের কলেজগুলির লক্ষ্য হবে ছাত্রছাত্রীর মধ্যে জাতীয় সংহতি ও ঐক্যের মনোভাব সৃষ্টি করা।

(৪) এক্সসেলেন্ট ও অটোমান কলেজগুলোকে UGC বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি এবং রাজ্য সরকার একমত হয়ে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা প্রদান করে।