প্রশ্নঃ কে আপীল করতে পারে? কোন্ কোন্ কারণে আপীল করা চলে? খালাসের বিরুদ্ধে এবং অপর্যাপ্ত দণ্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপীল চলে কিনা তা আলোচনা কর।
কে আপীল করতে পারেঃ নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ পক্ষ আইনের বিধান থাকলে, নিজ অধিকার বলে উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করতে পারে। মেমোরেণ্ডামের আকারে আপীল দায়ের করতে হয় এবং যে রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা হচ্ছে তার একটি নকলও সংযুক্ত করতে হয়।
আপীলকারী জেলে থাকলে আপীলের আবেদনপত্র ও রায়ের নকলসহ সকল কাগজপত্র জেলের ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট পেশ করতে হয়। ভারপ্রাপ্ত অফিসার তা যথাযথ আপীল আদালতের নিকট প্রেরণ করে থাকেন।
কোন কোন কারণে করা যায়ঃ নিম্নোক্ত কারণে আপীল দায়ের করা যায়-
১. সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য অথবা বিক্রয়মূল্য প্রদানের জন্য ৮৯ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তি দরখাস্ত পেশ করলে যদি তা প্রত্যাখ্যাত হয় তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আপীল করতে পারেন। (-৪০৫ ধারা)
২. শান্তিরক্ষা অথবা সদ আচরণের উদ্দেশ্যে মুচলেকা প্রদানের জন্য ১১৮ ধারা অনুসারে কোন ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক আদিষ্ট হলে সে আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপীল করা যায়। (৪০৬ ধারা
৩. ১২২ ধারা মতে জামিনদার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানো বা জামিনদার বাতিল করার আদেশ দেয়া হলে তার বিরুদ্ধে ৪০৬ ক ধারা মতে আপীল করা যাবে। প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে, সাধারণ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে এবং অন্যান্য ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আপীল পেশ করতে হয়।
৪. ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত কর্তৃক যে ব্যক্তি দণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়েছে বা ৩৪৯ ধারা মোতাবেক যার কারাদন্ড হয়েছে সে ব্যক্তি দায়রা আদালতে আপীল দায়ের করতে পারে।
৫. ৪১০ ধারা মতে একজন দায়রা জজ় কিংবা অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক দণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তি সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারে।
৬. ৪১৭ ও ৪১৭ ক ধারা বলে আসামীর খালাস কিংবা অপর্যাপ্ত দণ্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরকার আপীল করতে পারে।
৭. ৪১৮ ধারা অনুযায়ী দায়ের ঘটনা বা আইন বা উভয় প্রশ্নে আপীল দায়ের করা যায়। দণ্ডাদেশ অধিক হয়ে থাকলে তা একটি আইনগত প্রশ্ন হিসেবে আপীল করা যাবে।
খালাসের বিরুদ্ধে আপীলঃ কোন আসামীকে খালাস দিলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা সম্পর্কে ৪১৭ ধারায় বিধান রয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে যে, দায়রা আদালত কোন আসামীকে খালাস দিলে সরকার পক্ষ হতে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারেন। ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপীল করা যায়। নালিশ মামলায় (Complaint case) আসামীর খালাস হলে নালিশকারী শুধু আইনের প্রশ্নে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারে।
এ ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিবেচনার জন্য যদি গৃহীত না হয় তাহলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল চলে না।
অপর্যাপ্ত দণ্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপীলঃ ৪১৭ ক ধারায় বলা হয়েছে যে, আদালত আসামীকে অপর্যাপ্ত দণ্ডাজ্ঞা প্রদান করলে সরকারী কৌসুলীকে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করার জন্য সরকার নির্দেশ দিতে পারেন। .
এ ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, নালিশকারী ও অপর্যাপ্ত দণ্ডাজ্ঞার জন্য আপীল কোর্টে আপীল করতে পারেন । তবে দণ্ডাজ্ঞা প্রদানের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে এরূপ আপীল দায়ের করতে হবে।
এ ধারা অনুযায়ী আসামীর নিকট বক্তব্য না শোনার আগে আপীল আদালত দন্ডাজ্ঞা বৃদ্ধির আদেশ দিবেন না।
Leave a comment