১। উপদেশ ও তথ্য জ্ঞাপনঃ কেন্দ্রীয় সংগঠন গবেষণার মাধ্যমে বিশেষ প্রশাসনিক সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের মাধ্যমে সংগঠন বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রয়োজন মোতাবেক বিভিন্ন অধস্তন সংগঠনে তা সরবরাহ করে। জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill) গবেষণা পরিচালনা, তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণকে কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের একটি মুখ্য উদ্দেশ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যসমূহের বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ, পরামর্শ ও তথ্য পেয়ে থাকে। এভাবে স্থানীয় সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ব্যাপারে উপদেশ ও তথ্য প্রভূত পরিমাণে সহায়তা করে থাকে। 

২। সাময়িক প্রতিবেদনঃ স্থানীয় সংস্থাসমূহ স্বাধীনভাবে কার্যসম্পাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। তথাপি কেন্দ্রীয় সরকারকে সাময়িক প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। সামঞ্জস্য রক্ষার স্বার্থেই কেন্দ্রীয় সরকার সঠিকভাবে প্রতিবেদনের রূপরেখা প্রণয়ন করে থাকে। 

৩। পরিদর্শন ও উপদেশঃ ‘পরিদর্শন শাখা’ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে বিদ্যমান থাকে। এ শাখার সদস্যগণ অনেক সময় বিভিন্ন প্রশাসনিক সংগঠন পরিদর্শন করেন। তবে এরূপ প্রশাসনিক পরিদর্শন দুই রকমের হতে পারে- (ক) স্বপ্রণোদিত এবং (খ) কোন অভিযোগ যাচাই করার উদ্দেশ্যে তদন্তমূলক। বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এরূপ পরিদর্শন শাখার কাজ ও গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান। 

৪। কেন্দ্রীয় পর্যালোচনাঃ স্থানীয় সংস্থা কর্তৃক অনেক প্রশাসনিক কার্য সম্পাদিত হয়। কিন্তু তা চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করা হয় না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থায় পাঠানো হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সংস্থা তা পর্যালোচনা করে মতামত প্রদান করে। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আয়কর আইন জেলা আয়কর অফিসার কোন একটি আয়-ব্যয়ের হিসাবে পরীক্ষার পর আয়কর ধার্য করেন। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি মনে করেন যে স্থানীয় সায়কর অফিস কর্তৃক নির্ধারিত কর তার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় নি, তাহলে তিনি কেন্দ্রীয় ঊর্ধ্বতন অফিসার তথা আয়কর কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কমিশনারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। 

৫। সাহায্য মঞ্জুরিঃ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক সংস্থা অনেক ক্ষেত্রে অধস্তন প্রশাসনিক সংস্থাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকে। বিভিন্ন কারণে এরূপ সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। তবে সাহায্যদাতা সংস্থা সাহায্য দেয়ার সময় শর্ত আরোপ করতে পারে এবং সে শর্ত অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না তা তদারকও করে দেখতে পারে। শুধু তাই নয়, এদের নির্দেশমত সাহায্য ব্যবহৃত না হলে সাহায্য বন্ধ করে দিতে পারে। কেন্দ্রীয় সংগঠন তাই অন্যান্য সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি অতি সহজ এবং কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে ‘সাহায্য মঞ্জুরীকে’ ব্যবহার করতে পারে। 

৬। প্রশাসনিক পদ্ধতির মান উন্নীতকরণঃ কেন্দ্রীয় সরকার প্রশাসন পদ্ধতি কর্মচারী নিয়োগ অর্থ সংক্রান্ত প্রশাসনের নিয়মাবলি প্রতিষ্ঠা করে। স্থানীয় সংগঠন ও প্রশাসন এভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবাধীন হয়ে থাকে। 

৭। পূর্ব অনুমতিঃ স্থানীয় প্রশাসন ও সংগঠনের কোন প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় সংগঠনে পাঠানো হয়। কারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের পূর্বে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় বা কোন স্থানীয় সংস্থা বা অঙ্গরাজ্য কর্তৃক কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট সুপারিশ পেশ করা হয়৷ 

৮। নিয়োগ ও অপসারণঃ স্থানীয় সংস্থায় নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থায় কেন্দ্রের ক্ষমতা থাকে না । অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক সরকারি প্রশাসনে কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। সরকারি কর্ম কমিশন বাংলাদেশে সরকারি খাতে অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করে থাকে। এ ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ, মন্ত্রণালয়ের সংস্থাপন বিভাগ, চাকরির নিয়োগ, কর্ম শর্ত, অবসর, অপসারণ ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মাবলি প্রস্তুত করে। 

৯। আদেশ জারিঃ কেন্দ্রীয় সরকারের সাধারণ নিয়মাবলি প্রয়োগ করার ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন অনেক বিষয়ে উক্ত নিয়মাবলি মেনে চলতে বাধ্য থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক কার্যের আংশিক বা পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থা ও দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় সংগঠন প্রশাসনিক সংস্থার দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ দায়িত্ব আংশিক অথবা সামগ্রিক দুই-ই হতে পারে। 

উপসংহারঃ দেশের জরুরি অবস্থা বা সংকটকালে কেন্দ্রীকরণের (Centralization) পদ্ধতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কোন বিভাগ, অন্য শাখা বা সংগঠনের সাথে পরামর্শ করার দরকার হয় না। সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কারও উপর নির্ভর করতে হলে অনেক বিলম্ব ঘটতে পারে।