কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রধান ছয়টি আধুনিক উপকরণ হল一 [1] জলসেচ, [2] উচ্চফলনশীল বীজ, [3] রাসায়নিক সার, [4] জৈব সার, [5] কীটনাশক ওষুধ ও [6] আধুনিক যন্ত্রপাতি।
[1] জলসেচ : আধুনিক যুগে কৃষিকাজে জলসেচ অপরিহার্য। কৃষিতে যে যে কারণে জলসেচের প্রয়ােজন হয়, তা হল一
-
অপর্যাপ্ত ও অনিশ্চিত বৃষ্টিপাত যাতে কৃষিকাজের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে।
-
উচ্চ- ফলনশীল বীজ চাষের জন্য।
-
বহু-ফসলি শস্য চাষের জন্য।
-
মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম হওয়ার জন্য।
-
বিভিন্ন উদ্ভিদের জলের চাহিদা আলাদা য়ার জন্য ইত্যাদি।
[2] উচ্চফলনশীল বীজ : চিরাচরিত বা নিম্নমানের বীজ ব্যবহারের ফলে উৎপাদনের পরিমাণ অনেক হ্রাস পায়। সেজন্য উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার বিশেষ প্রয়ােজন। উচ্চফলনশীল বীজের একটি বিশেষ শারীরবৃত্তীয় গুণ বর্তমান, যার মাধ্যমে এটি মৃত্তিকার পুষ্টিসাধক বস্তুগুলি শােষণে সক্ষম। এই ধরনের বীজ থেকে উৎপাদিত গাছে পাতার পরিমাণ খুব বেশি হয়, এবং এই বীজ থেকে প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপাদিত হয়। বীজ থেকে 1960 থেকে 1970-এর দশকের মধ্যে অধ্যাপক নরম্যান বােরলগ (Norman Borlaug) মেক্সিকোতে এক নতুন ধরনের উচ্চফলনশীল গম বীজ উদ্ভাবন করেন এর পরবর্তী পর্যায়ে ভারতীয় কৃষিতে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার শুরু হয়।
-
ভারতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উচ্চফলনশীল বীজ : উচ্চফলনশীল গম বীজগুলি হল—কল্যাণসােনা, সােনারা 64, সােনালিকা ইত্যাদি। উচ্চফলনশীল ধান বীজগুলি হল—জয়া, পদ্মা, আই-আর-৪, যমুনা, আই-আর-20, 26 ইত্যাদি। এই ধরনের বীজগুলির উৎপাদন ক্ষমতা চিরাচরিত বীজগুলির উৎপাদন ক্ষমতা অপেক্ষা প্রায় 25 থেকে 100 শতাংশ বেশি।
[3] রাসায়নিক সার : রাসায়নিক সার আধুনিক কৃষির অন্যতম উপকরণ। নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি হল উল্লেখযােগ্য রাসায়নিক সার। রাসায়নিক সারের ব্যবহারের মাধ্যমে মাটিতে থাকা পুষ্টিসাধক বস্তুগুলির বৃদ্ধি ঘটানাে হয়। যার ফলে কৃষিজ উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়।
-
ভারতের কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার : স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভারতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েছে। 1952-53 খ্রিস্টাব্দে ভারতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার যেখানে ছিল মাত্র 66 হাজার টন, সেখানে 2011-12 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় 275.67 লক্ষ টন। হেক্টর প্রতি সারের ব্যবহারও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 1974-75 খ্রিস্টাব্দে হেক্টর প্রতি সারের ব্যবহার ছিল মাত্র 17 কেজি, 2009-10 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় 178.3 কেজি।
[4] জৈব সার : সাম্প্রতিককালে রাসায়নিক সার ব্যবহারে নানা সমস্যা (যেমন- বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত) দেখা দেওয়ায় কৃষিজমিতে জৈব সার ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়ছে। জৈব সারে অল্প পরিমাণে খাদ্য উপাদান উপস্থিত থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে গাছকে ওই খাদ্য উপাদান জোগাতে সাহায্য করে। তা ছাড়া জৈব সারের ব্যবহার পরিবেশেরও কোনাে ক্ষতি করে না।
-
ভারতের কৃষিকাজে ব্যবহৃত জৈব সার : ভারতে ব্যবহৃত গােবরসার, খইল, সবুজসার, খামারের আবর্জনা থেকে প্রস্তুত সার ইত্যাদি জৈব সারের অন্তর্ভুক্ত। গাছের প্রয়ােজনীয় তিনটি প্রধান খাদ্য উপাদানই যথা নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ জৈব সার উপস্থিত থাকে।
[5] কীটনাশক : শস্যকে কীটপতঙ্গের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশকের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিজমিতে সাধারণত তিন ধরনের কীটনাশক বা বিষ ব্যবহার করা হয়। যথা一
-
স্পর্শ বিষ : কীটপতঙ্গ এই ধরনের বিষের সংস্পর্শে আসামাত্রই মারা যায়।
-
পাকস্থলীয় বিষ : কীটপতঙ্গুলি এই ধরনের বিষ খাওয়ার পর পাকস্থলীতে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে মারা যায়।
-
ধূমদ্রব্য : কীটনাশক থেকে নির্গত ধোঁয়ার মাধ্যমে কীটপতঙ্গ মারা যায়।
-
ভারতীয় কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার : 1950 খ্রিস্টাব্দে ভারতে কীটনাশকের ব্যবহারের পরিমাণ ছিল প্রায় 100 টন। 1995-96 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় 73,600 টন। বর্তমানে এই ব্যবহারের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
[6] আধুনিক যন্ত্রপাতি : কৃষিকাজে দৈহিক শ্রম লাঘব করা এবং উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানাের জন্য জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়ােগ আবশ্যিক। কৃষিকাজে যেসব আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল一
-
জমি কর্ষণে : পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, চাকতি বিদা ও স্প্রিং দাঁত ইত্যাদি।
-
আগাছা পরিষ্কারে : চাকাযুক্ত নিড়ানি যন্ত্র।
-
বীজ বপনে : সিড ড্রিল।
-
শস্য কাটতে : রিপার, মােয়ার ও থ্রেসার ইত্যাদি।
-
শস্য পরিষ্কারে : উইনােয়িং পাখা ব্যবহার করা হয়।
-
ভারতীয় কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার : ভারতের বেশিরভাগ জমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত হওয়ায় সর্বত্র আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়ােগের সুযােগ কম থাকে। তবুও মােট কৃষিজমির প্রায় 20% জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চাষ করা হয়ে থাকে। 1971-72 খ্রিস্টাব্দে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার যেখানে ছিল 7.75% সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে দাড়িয়েছে 44%।
Leave a comment