প্রশ্নঃ কি কি ভিন্ন কারণে কোন অধস্তন আদালত হতে ফৌজদারি মামলা স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে দরখাস্ত করা যেতে পারে তা বর্ণনা কর। এ ধরনের দরখাস্ত কিভাবে করতে হয় তা আলোচনা কর।

উত্তর : (ক) যে সকল কারণে অধ:স্তন আদালত হতে মামলা স্থানান্তর করা যায়ঃ বিচার প্রার্থী স্বাভাবিকভাবোই প্রত্যাশা করেন যে, বিচারক নিরপেক্ষ ও ন্যায়-সঙ্গতভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার হতে বঞ্চিত হবার আশংকা থাকলে হাইকোর্ট বিভাগ কোন মামলা অন্য আদালতে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিতে পারেন। এ সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫২৬ ধারায় বিধান রয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে,

(১) হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, (ক) উক্ত আদালতের অধীনস্থ কোন ফৌজদারী আদালতে ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান বা বিচার পাওয়া যাবে না; অথবা,

(খ) কোন অস্বাভাবিকরূপে আইনের জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; অথবা,

(গ) যে স্থানে বা স্থানের নিকট কোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা পরিদর্শন করা উক্ত অপরাধের সন্তোষজনক অনুসন্ধান বা বিচারের জন্য প্রয়োজন হতে পারে; অথবা,

(ঘ) এই ধারা অনুসারে আদেশ প্রদান করা হলে তা পক্ষসমূহ বা সাক্ষীগণের সুবিধা হবে; অথবা

(ঙ) ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্যে বা এই আইনের

বিধান অনুসারে এরূপ একটি আদেশ হওয়া সমীচীন তাহলে হাইকোর্ট বিভাগ নিম্নোক্ত আদেশ দিতে পারেন :

১. কোন ফৌজদারী মামলা বা আপীল এক আদালত হতে অন্য আদালতে স্থানান্তর করা, অথবা

২. কোন বিশেষ মামলা বা আপীল হাইকোর্ট বিভাগে স্থানান্তর করা; অথবা,

৩. বিচারের জন্য কোন আসামীকে হাইকোর্ট বিভাগে বা দায়রা আদালতে সোপর্দ করা।

হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালতের রিপোর্ট বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষের আবেদনক্রমে বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে এরূপ পদক্ষেপ নিতে পারেন ।

১৯৮৩ সালের ২৮ নম্বর অধ্যাদেশ দ্বারা ৫২৫ ক ধারাটি সংযোজন করা হয়েছে এবং এই ধারা বলে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগকেও স্থানান্তরের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

এই ধারার (১) উপ ধারায় বলা হয়েছে যে, ন্যায়- বিচারের স্বার্থে বা পক্ষগণের বা সাক্ষীগণের সুবিধার্থে প্রয়োজন মনে করলে আপীল বিভাগ কোন বিশেষ মামলা বা আপীল হাইকোর্ট বিভাগের একটি স্থায়ী বেঞ্চ হতে অপর স্থায়ী বেঞ্চে স্থানান্তরের; অথবা,

হাইকোর্ট বিভাগের কোন স্থায়ী বেঞ্চের এখতিয়ারভূক্ত কোন ফৌজদারী আদালত হতে অপর কোন সম বা উচ্চ এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে পারেন।

স্থানান্তরের জন্য মূল বিষয় হচ্ছে আসামীর মনে একটা যুক্তিসঙ্গত আশংকা যে, সে সুষ্ঠু বা বস্তুনিষ্ঠ বিচার হতে বঞ্চিত হবে। কোন স্থানান্তরের আদেশ দেয়ার পূর্বে আদালতকে নিশ্চিত হতে হবে যে, আসামীর এরূপ আশংকা অমূলক বা ভিত্তিহীন নয় (37 Cr, L. J. 436)। বিচার প্রশাসনে সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা থাকা প্রয়োজন । বিচারক পক্ষপাতিত্ব করেছে এরূপ অভিযোগ বিবেচনা করা যাবে না। আসামী যুক্তিসঙ্গতভাবে আশংকা করেছে যে, বিচারকের পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতের রায় হতে প্রভাবিত করবে। আবু মো: নুরুল্লাহ বনাম রাষ্ট্র (I B S C D 121) মামলায় যাতায়াতের অসুবিধার কারণে পটুয়াখালী হতে বরিশাল জেলায় স্থানান্তরের আবেদন করা হলে হাইকোর্ট বিভাগ ৫২৬ ধারা প্রয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানান। আবার কালিপদ সাহা বনাম রাষ্ট্র [5 BLD 278 (AD)] মামলায় দেখা যায় যে, ড্রাগ অধ্যাদেশের অধীনে উপ-জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বিচার করছিলেন। যেহেতু এ ধরনের বিচার করার জন্যে ঢাকায় ড্রাগ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেহেতু উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হতে উক্ত আদালতে স্থানান্তরের জন্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ৫২৫ ক ধারা অনুসারে নির্দেশ দেন।