“কিন্তু আজও সেই দুটো জলন্ত চোখ আমাকে থেকে থেকে পাগল করে।”—লেখকের এই রকম মন্তব্যের কারণ কী?

প্রসঙ্গ : সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের আমার বাংলা থেকে নেওয়া ‘হাত বাড়াও’ রচনায় লেখক পঞ্চাশের মন্বন্তরের মর্মস্পর্শী ছবি তুলে ধরেছেন। “পাতলা কুয়াশায় মােড়া পাশের আকালের এক সকাল” -এ রাজবাড়ির বাজারে বসে লেখক ফরিদপুরের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই সময়েই তিনি একটু দূরে স্টেশনের রাস্তায় মিলিটারি ছাউনির পাশে এক ‘অদ্ভুত জন্তু’ দেখেন। চার পা-এ এগিয়ে আসতে থাকা সেই জন্তুটির সঙ্গে চেনা কোনাে জন্তুরই মিল খুঁজে পাননি লেখক। কুয়াশার মধ্যেও জ্বলজ্বল করছিল তার চোখ। সেই চোখের মধ্যে এমন এক মায়া ছিল যা ‘বুকের রক্ত হিম’ করে দিচ্ছিল। কিন্তু সামনে আসতেই লেখক স্তম্ভিত হয়ে যান। মাজা পড়ে যাওয়া বারাে-তেরাে বছরের এক উলঙ্গ ছেলে জানােয়ারের মতাে চার পা-এ চলে বাজার থেকে চাল আর ছােলা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছিল। এই মর্মান্তিক দৃশ্যটির প্রসঙ্গেই লেখক মন্তব্যটি করেছেন।

প্রতিক্রিয়া : লেখক মানবশিশুর এই পরিণতি সহ্য করতে না পেরে ছুটে স্টেশনের দিকে পালিয়ে গেলেও সেই দৃশ্য তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। দু- হাতে সােনা ছড়ানাে নদীমালার দিকে তাকিয়ে তিনি তার নিশ্বাস শুনতে পেয়েছেন। লেখকের মনে হয়েছে যে শিশুটি তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে যেন সেইসব খুনিদের শনাক্ত করছে যারা শহরে, গ্রামে, গঞ্জে জীবনের গলায় মৃত্যুর ফাঁস পরাচ্ছে, মানুষের মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তাই লেখক এমন মন্তব্য করেছেন।